প্রতিনিধি ১১ জুলাই ২০২৪ , ৪:৪৬:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ
চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ‘আইনি পন্থায় না হেঁটে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছে, যা বেআইনি’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘অশুভ মহল শিক্ষার্থীদের আবেগকে পূঁজি করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে ব্যাহত করার পাঁয়তারা করছে। বলপ্রয়োগের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টির রাজনীতি পরিহার করতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি সবাইকে সম্মান দেখানোর অনুরোধ জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালত যখন সরকার পক্ষ, আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি ও মূল মামলা দায়েরকারী পক্ষসহ সবার বক্তব্য শুনে এ বিষয়ে (কোটা) চূড়ান্ত নিষ্পত্তির বিচারিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আন্দোলনের নামে জনগণের চলাফেরা ও যানবাহন চলাচলে বাধা সুষ্টি করা বেআইনি। এ ছাড়া গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্দোলনকারীদের অনেকের ঔদ্ধত্যপূর্ণ, শিষ্টাচার-বহির্ভূত আচরণ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সবাইকে মনে রাখতে হবে— এ ধরনের কর্মকাণ্ড রাষ্ট্র বা দেশের জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়। আমাদের সবাইকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে বলপ্রয়োগের রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টির রাজনীতি পরিহার করতে হবে।’
সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদে অনগ্রসর নাগরিকদের প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভের অনুকূলে বিশেষ বিধান প্রণয়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পৃথিবীর সব উন্নত ও অনুন্নত দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা চালু রয়েছে। দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নে রাষ্ট্রের সব জনগোষ্ঠীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। কোটা ব্যবস্থা বাতিল করার পরে সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় আবেদন ও সফলতার হারে পিছিয়ে পড়েছেন নারীরা।’
তিনি বলেন, ‘গত ৫টি বিসিএস পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কোটাযুক্ত বিসিএসের তুলনায় কোটামুক্ত বিসিএসে নারীরা পিছিয়ে পড়েছে ৩.৪৩ শতাংশ। এমনকি একটি বিসিএসে কোটা না থাকায় পুলিশের ক্যাডারে মাত্র ৪ জন নারী অফিসার সুযোগ পেয়েছেন। ফরেন সার্ভিসে সুযোগ পেয়েছে মাত্র ২ জন নারী। কোটামুক্ত একটি বিসিএসে ২৪টি জেলার কোনও প্রার্থী পুলিশ ক্যাডারে চাকরি পাননি। ৫০টি জেলায় নারীরা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কোটা পদ্ধতি থাকা অবস্থায় শতকরা ২৬ ভাগের ওপরে নারী প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছিলেন। এরপর কোটা তুলে দেওয়ায় এই হার শতকরা ১৯ ভাগে নেমে এসেছে।’
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ নিয়েও আন্দোলনকারীদের দেওয়া তথ্য অবাস্তব ও বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কোটাযুক্ত পদ্ধতিতে মেধায় নিয়োগ হওয়ার কথা ছিল শতকরা ৪৪ ভাগ। কিন্তু বিভিন্ন কোটায় উপযুক্ত প্রার্থী না থাকায় শতকরা ৬৬.২ ভাগ প্রার্থী মেধাভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। বিভিন্ন কোটায় যারা চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছে, তারাও পাবলিক সার্ভিস কমিশনের একই মানদণ্ডে অর্থাৎ একই প্রিলিমিনারি প্রশ্ন, লিখিত পরীক্ষা দিয়ে সমান যোগ্যতার ভিত্তিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কোটা পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রার্থীরা। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের কোনও কোনও পরীক্ষায় ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর একজন প্রার্থীও নিয়োগ লাভের সুযোগ পাননি। তাই, বৈচিত্র্যময় সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা অর্জনে কোটার গুরুত্ব রয়েছে।’
রাষ্ট্র সর্বজনীন এবং পবিত্র সংবিধানের আলোকেই রাষ্ট্র পরিচালিত হয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রকে সবার অধিকার সংরক্ষণ করতে হয়। কোটা মানে বৈষম্য নয়, বরং বৈষম্য নিরসনের জন্য কোটা সংরক্ষণ প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়। সর্বোচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় আসার পরে সরকার সব জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’
তরুণ্যের শক্তির ওপর নির্ভর করে ‘দিন বদলের সনদ’ এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার নির্বাচনি ইশতেহার দেওয়ার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এই তারুণ্যকে অপব্যবহার করে কেউ যাতে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে, সেদিকেও সবার সতর্ক থাকতে হবে। শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে সংগ্রাম শুরু করেছেন, তার মূল চালিকা শক্তি হলো মেধাবী জনগোষ্ঠী। শিক্ষিত-দক্ষ স্মার্ট প্রজন্ম গঠনের মধ্য দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংগ্রামকে অভীষ্ঠে পৌঁছে দিতে মেধাবী তরুণ প্রজন্মই আমাদের প্রধান শক্তি।’
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী সব রাজনৈতিক কর্মসূচি বন্ধ করে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অবিলম্বে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার জন্য পুনরায় আহ্বান জানাচ্ছি। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পুরোপুরি সমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত সব পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আমরা তারুণ্যের শক্তি এবং আবেগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু এই শক্তি ও আবেগকে পুঁজি করে কোনও অশুভ মহল যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’