রংপুর

সাদুল্যাপুরে এক ছটাক ধানও মেলেনি চাতাল ভেঙে বোরো চাষ

  প্রতিনিধি ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৬:১২:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ


এম.এস সোহেল, সাদুল্যাপুর (গাইবান্ধা) :

সরকার চাল কল। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার পুরনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে চলছে তাদের মিল-চাতালের ব্যবসা। এলাকার অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ কাজ করতো সেখানে। কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি এবার বন্ধ। ভেঙে ফেলা হয়েছে ধান শুকানোর চাতাল। ইট-খোয়া উঠিয়ে সেখানে রোপণ করা হয়েছে বোরো ধান।
সরকার চাল কলের মালিক সুমন চন্দ্র সরকার বলেন, ব্যবসায় কয়েক বছর ধরে লোকসান গুণছি। নিজের পুঁজি শেষ। আর্থিক সংকটে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। তাই আর নয় ধান-চালের ব্যবসা। সরকারি খাদ্যগুদামে চাল দেবো না। তাতে চাতালের রেজিষ্ট্রেশন বাতিল হলেও কিছুই করার নেই। সুমন চন্দ্র সরকার জানান, প্রায় দুই বিঘা জমির উপর তার মিল-চাতাল। কিন্তু সেখান থেকে আয় হচ্ছে না। তাই চাতাল ভেঙে বোরো ধান রোপণ করেছি। এখানে উৎপাদিত ধানে পরিবারে ভাতের যোগান মিলবে। আর অন্য ব্যবসার পরিকল্পনা নিয়ে পুঁজি সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছি। চাতালে ধান শুকানোর দায়িত্বে থাকা জামিল হোসেন বলেন, এখানে অর্ধশতাধিক মানুষ কাজ করতেন। তাদের অনেকেই নারী। এখানকার উপার্জনেই পরিবার প্রতিপালন হত তাদের। কিন্তু চাতাল বন্ধ হওয়ায় তারা এখন বেকার।
এভাবে শুধু সরকার চাল কলই নয়! লোকসানের শঙ্কায় সাদুল্যাপুর উপজেলার ৪১ মিল-চাতাল মালিক সরকারি চুক্তিতে আসেনি। তারা সরকারি খাদ্যগুদামে চাল দেবে না। এতে তারা শাস্তির সম্মুখীন। বাতিল হতে পারে তাদের মিল -চাতালের রেজিষ্ট্রেশন। সাদুল্যাপুর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ১৭ নভেম্বর আমন মৌসুমের ধান-চাল ক্রয় অভিযান শুরু হয়েছে। কিন্তু গত সোয়া তিন মাসে ধান বিক্রি করতে আসেনি কোন কৃষক। যার কারণে এক ছটাক ধান ক্রয় সম্ভব হয়নি। আর চুক্তিবদ্ধ মিল-চাতাল থেকে পাওয়া গেছে ৭৩৩ মেট্রিকটন চাল। আজ বন্ধ হবে আমন মৌসুমের ধান-চাল ক্রয় অভিযান। কৃষি বিভাগ জানায়, এখানে আমন ধান উৎপাদন হয়েছে ৭৩ হাজার ৩১০ মেট্রিকটন। এর বিপরীতে উপজেলার দুটি সরকারি খাদ্যগুদামে ধান ক্রয় হবে ৮৯৫ মেট্রিকটন। চাল ক্রয় হবে ২ হাজার ২০৭ মেট্রিকটন। কৃষকরা সরাসরি প্রতি কেজি ধান বিক্রি করবে ২৮ টাকায়। আর চুক্তিবদ্ধ মিল-চাতাল থেকে প্রতিকেজি চাল ক্রয় হবে ৪২ টাকায়। উপজেলার তরফবাজিত গ্রামের মিল-চাতাল ব্যবসায়ী জহুরু হক বলেন, বাজারে প্রতি কেজি মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ২৯ থেকে ৩০ টাকা। আর প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকায়। এতে দেখা যাচ্ছে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজার মূল্য বেশি। তাই সরকারি খাদ্যগুদামে চাল দিলে লোকসান হবে। সেজন্য এমন ব্যবসা আর না। ভাবছেন নতুন ব্যবসার বিষয়ে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এএইচএম তৌহিদুল্লাহ জানান, এখানে সরকারি তালিকাভুক্ত মিল-চাতাল ৮০ টি। এর মধ্যে আমন মৌসুমের চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে ৩৯ মিল-চাতাল। আর চুক্তিতে না আসা ৪১ মিল-চাতালের তালিকা পাঠানো হয়েছে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। সেখান থেকে পরবর্তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের রাখা হতে পারে কালো তালিকাভুক্ত করে। এর সঙ্গে অন্য শাস্তি থাকতে পারে। কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া বলেন, আমন মৌসুমের বীজ বপন থেকে শুরু করে রোপণের জমি তৈরিতেই প্রচুর খরচ হয়েছে। এর সঙ্গে সার, তেল, চারা রোপণ, আগাছা পরিস্কার, কীটনাশক ক্রয়, ধান কর্তনে দিনমজুর ব্যায় বেড়েছে। তাতে প্রতিমণ ধান উৎপাদন খরচ ১ হাজার ৩০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
উপজেলার কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের কৃষক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে খোলাবাজারেই ধানের মূল্য বেশি। তাই লোকসান দিয়ে কেন সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করবেন? সেজন্য সরকারি ক্রয় মূল্য বাড়াতে হবে। নইলে কোন কৃষকই সরকারি খাদ্যগুদামে যাবে না। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে ভাবতে হবে।
স্থানীয় মিল-চাতাল মালিক সমিতির সভাপতি জাকিউল হক মানিক বলেন, লোকসানের কারণে আমন মৌসুমে অনেকেই সরকারি চুক্তিবদ্ধ হয়নি। এতে মিল-চাতালের রেজিষ্ট্রেশন বাতিলসহ শাস্তি হলেও মেনে নিতে হবে। লোকসান গুণে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যাবেনা। এজন্য অনেকেই এই ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন।
ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোকসানা বেগম বলেন, সরকার নির্ধারিত মূলের বাহিরে ধান-চাল ক্রয়ের সুযোগ নেই। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ধান-চাল ক্রয়ের জন্য। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by