রংপুর

সাদুল্যাপুরে তিন বছরে আউসের চাষ বেড়েছে ৭৯ গুণ

  প্রতিনিধি ২৮ জুলাই ২০২১ , ৭:৩১:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

এম.এস সোহেল, সাদুল্যাপুর (গাইবান্ধা) :

কৃষিতে আবার ফিরেছে আউস! প্রায় হারিয়ে যেতে বসা আউস ধান চাষে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার কৃষকরা। তিন বছরে এখানে আউস ধানের চাষ বেড়েছে ৭৯ গুণ। চলতি মৌসুমে এখানে আউস ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন। আউস ধানের চাষ বাড়তে থাকায় কৃষকরা দো-ফসলি জমিতে এখন বছরে তিন ফসল ফলানো শুরু করেছে। এতে বার্ষিক ধান উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে। তাই কম সেচে, স্বল্প খরচে আউস ধান চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে কৃষকদের কাছে। একই সঙ্গে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, সাদুল্যাপুর উপজেলায় গেলো মৌসুমে ইরি-বোরো রোপণ করা হয়েছিলো ১৫ হাজার ৬১৮ হেক্টর জমিতে। এখানে ইরি-বোরো কর্তনের পর দীর্ঘ সময় ধরে জমি ফাঁকা (পতিত) ফেলে রাখা হয়।

অর্থাৎ ইরি-বোরো কর্তনের পর আমন ধান রোপণের আগ পর্যন্ত আর কোন ফসল চাষ করা হয়না। এই সময়ে কৃষকরা অন্য ফসল ফলাতে তেমন আগ্রহী ছিলোনা। ফসল উৎপাদন না করে জমি পতিত রাখায় সাদুল্যাপুর উপজেলায় বিশাল পরিমান জমিতে শুধুমাত্র দুই ফসল (ইরি-বোরো আর আমন) ফলানো হত। এই অবস্থা চলার মাঝেই এখানে আউস ধান চাষের উদ্যোগ নেয় কৃষি বিভাগ। কৃষকদের নানাভাবে বুঝিয়ে আউস চাষে আগ্রহী করে তোলা হয়। এজন্য কৃষকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে বিনামূল্যে আউসের চারা এবং সার দেয় কৃষি বিভাগ। এতে আগ্রহী হয়ে কিছু কৃষক আউস চাষ শুরু করেন।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, বিগত ২০১৮ সালে সাদুল্যাপুর উপজেলায় আউস ধান চাষ হয়েছিলো মাত্র ৭০ হেক্টর জমিতে।

সেখানে এবার চলতি মৌসুমে (২০২১ সালে) আউস ধান চাষ হয়েছে ১ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে। তিন বছরে আউস ধানের চাষ বেড়েছে ৭৯ গুণ। এবার এখানে আউস ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৩৯০ মেট্রিক টন। আউস চাষে এবং ধান উৎপাদনে এটি এই উপজেলার জন্য একটি রেকর্ড। আউসের উৎপাদন বাড়তে থাকায় এখানে চালের ঘাটতি থাকবে না। কালোবাজারিরা চাল নিয়ে কোন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতেও পারবেনা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মাহবুবুল আলম বসুনিয়া জানান, এখানে ৬২ শতাংশ জমিতে (১০ হাজার ৫০০ হেক্টর) বছরে মাত্র দুই ফসল ফলানো হয়। অথচ কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিলে এই জমিতে বছরে তিন ফসল ফলানো যাবে। ইরি-বোরো কর্তনের পর জমি ফাঁকা ফেলে না রেখে অনায়াসে আউস ধান চাষ করা যায়। ইরি-বোরোর চেয়ে দেড়গুণ কম খরচে আউস ধান উৎপাদন হবে। আউসে চিকন এবং মোটা ব্রি ধান-৪৮, ব্রি ধান-৫৫, ব্রি ধান-৮২ ও ব্রি ধান-২৮ চাষ হচ্ছে। আউস চাষের সময়টাতে বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির তেমন প্রয়োজন হয় না। এর সঙ্গে খুবই কম পরিমান সার ব্যবহার করে হেক্টরে ৩ দশমিক ৬ থেকে ৫ দশমিক ৪ মেট্রিক টন আউস ধান উৎপাদন হচ্ছে। তাই দেখা যাচ্ছে কৃষকরা স্বল্প খরচে একটি বাড়তি ফসল হিসেবে আউস ধান পাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান জানান, মাত্র ২০ থেকে ২৫ দিন বয়সি আউস ধানের চারা জমিতে রোপণের ৮০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যেই ফলন দেবে। এখানে এপ্রিল মাসে আউস ধান রোপণ শুরু হয়।

এরপর জুলাই মাসের শেষে অথবা আগষ্টের শুরুতে আউস কর্তন করা যায়। আউস চাষ করা জমিতে বছরে তিন ফসল ফলানো যাবে। যেমন ইরি-বোরো কর্তনের পর আউস চাষ। এরপর আউস কর্তন শেষে ওই জমিতে আমন ধান রোপণ করা যাবে। আর যদি উচুঁ জমি হয় তবে আউস কর্তন শেষে আগাম আলু, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, মুলা, শিম, লাউ, গম, সরিষা ও ভুট্টা চাষ করা যাবে। এতে কৃষকরা একই জমিতে বছরে তিন ফসল ফলিয়ে বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারবেন। তাদেও বেশ আর্থিক উন্নতি হবে।

উপজেলার কাজীবাড়ী সন্তোলা গ্রামের কৃষক দিলিপ কুমার জানান, এক সময় আউস আর আমনই ছিল কৃষকের প্রধান ফসল। কিন্তু ইরি-বোরো চাষাবাদ শুরু হওয়ায় আউস ধানের চাষ ভুলতে বসে কৃষকরা। এই অবস্থায় বর্তমানের প্রযুক্তিময় কৃষিতে আবার ফিরে এসেছে আউসের চাষ। এতে কৃষকরা বাড়তি একটি ফসল উৎপাদন করতে পারছে। পূর্বের সেই দুই ফসলি জমিতে এখন বছরে ফলানো যাচ্ছে তিন ফসল। এজন্য কৃষি বিভাগ বেশ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। আর কৃষকরাও এতে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by