রাজশাহী

সিরাজগঞ্জে ৪ লাখ কোরবানির পশু প্রস্তুত

  প্রতিনিধি ৩০ মে ২০২৩ , ৬:০৯:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ


এস.এম আল আমিন,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদুল আজহা। ঈদ উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলায় কোরবানির জন্য খামারে মোটাতাজা করা হচ্ছে প্রায় ৪ লাখ গবাদি পশু। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭১২টি এবং ১ লাখ ৫৫ হাজারের মতো ছাগল। এছাড়া বাকি পশুর মধ্যে রয়েছে মহিষ ও ভেড়া।
বাড়তি লাভের আশায় খামারের পাশাপাশি বাড়িতে বাড়িতে পশুর বাড়তি যতœ আর লালন পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারি ও প্রান্তিক কৃষকেরা। জেলার চাহিদার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন হাটের চাহিদা পুরণ করে এখানকার গবাদি পশু।
এবার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মোটাতাজা করা পশু ক্রয় বিক্রয় হবে বলে আমরা আশা করছে জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা।
এদিকে, দফায় দফায় বেড়েই চলছে গো-খাদ্যের দাম। খামারিদের এখন প্রতিদিন গো-খাদ্যে খরচ বেড়েছে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। উপযুক্ত মূল্যে গরু বিক্রি করতে না পারলে খামারিদের লোকসান গুনতে হবে। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধিতে কোরবানির পশুর দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
জেলা প্রাণি সম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় ১৭ হাজার ছোট বড় খামারি বিভিন্ন প্রজাতির গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা মোটাতাজা করেছে। এতে খামারে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৩৯৬টি গবাদিপশু মোটাতাজা করা হয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় ১ লাখ ৭১ হাজার ৭১২টি, মহিষ ১ হাজার ৪০৫টি, ছাগল ১ লাখ ৫৫ হাজার ও ভেড়া ৬১ হাজার ১৩৩টি। এ জেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা ১ লাখ ৬০ হাজার। এই চাহিদা মিটিয়ে ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৯৬টি পশু সারাদেশে চলে যাবে। এসব পশু মোটাতাজাকরণে খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক খাবার যাতে ব্যবহার না করে এজন্য প্রচারণা চালানো হয়েছে। এ বছর জেলায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মোটাতাজা করা পশু ক্রয়-বিক্রয় করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
একাধিক খামারির সাথে আরাপচারিতায় জানান, কোরবানির ঈদে তারা এসব গবাদিপশু বিক্রির মাধ্যমে বাড়তি আয় করবে। খামারিরা নিজ বাড়ি ও খামারে বছর জুড়ে গবাদি পশুগুলো লালন পালনের মাধ্যমে মোটাতাজা করেন। প্রাকৃতি ভাবে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাস খাইয়ে এখানকার পশু মোটাতাজা করা হয়। ছোট বড় গবাদি পশুর খামারের মাধ্যমে এ জেলার হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ও আয়ের পথ তৈরি হয়েছে।
খামারিরা গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি তুলে ধরে বলেন, ৩৭ কেজি ওজনের এক বস্তা গমের ভুষির বর্তমান বাজার মূল্য ২ হাজার ৩শত টাকা, যা গত বছর ছিল ১ হাজার ৮০০ টাকা। ৭৪ কেজির এক বস্তা খৈল এখন ৩ হাজার ৪শত থেকে ৩ হাজার ৬শত টাকা, গত বছর ছিল ২ হাজার ৮শত টাকা। ৫০ কেজির ধানের কুঁড়ার দাম হাজার টাকা, গত বছর ছিল ৫/৭শত টাকা। প্রতি কেজি খড় এখন ১৫/১৬ টাকা, যা পূর্বে ছিল ৮/৯ টাকা। এছাড়া খেসারি ও ছোলার ভুসির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার ৭ থেকে ৮ দফা গো-খাদ্যের দাম বেড়েছে। খামার শ্রমিকদের দুই বছর আগে বেতন ছিল ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এখন ১৫ হাজারের নিচে কোনো শ্রমিক কাজ করতে চায় না। পশু পালনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ খামার খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। পাশাপাশি ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের অতিরিক্ত সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে খামারিরা খুব একটা লাভের মুখ এবার দেখছেন না।
সদর উপজেলার কালিয়া কান্দাপাড়ায় অবস্থিত তালুকদার ডেইরি ফার্মের ম্যানেজার শফিউর রহমান জানান, এবছর কোরবানির জন্য ৪৫টি ষাড় প্রস্তুত করেছেন। কিন্তু গো-খাদ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে তাদের এবার বড় ধরনের লোকসান গুণতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন।
সদর উপজেলার খামারি সুজন বলেন, এ বছর বিক্রির জন্য ৬টি ষাড় প্রস্তুত করেছি। গো-খাদ্যের মুল্য বৃদ্ধিতে বিপাকে আছি। যে পরিমাণ গরুগুলোকে খাওয়ানো হচ্ছে তাতে সঠিক দাম পাবো কি না এ নিয়ে বড় চিন্তায় আছি।
সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউপিতে অবস্থিত আরাভ এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার মাহমুদুল হাসান সিহাব জানান, তাদের খামারে দেশি-বিদেশি মিলে শতাধিক ষাঁড়, মহিষ, ছাগল, দুম্বা মোটাতাজা করা হয়েছে। তাদের খামারে লাখ টাকা থেকে ১৫ লাখ টাকা দামের পশু মোটাতাজা করা হয়েছে। যার বেশিরভাগ পশু খামার থেকেই বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া তারা সারা বছরই পশু মোটাতাজা করে বিক্রি করে থাকেন।
শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান জানান, এ উপজেলায় গো-খামারের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। যারা প্রকৃত খামারিদের গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে উন্নতমানের ঘাসের আবাদ করতে হবে। এতে গো-খাদ্যের খরচ বেশ কমে যাবে। পাশাপাশি ঘাস গরুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। যেসব খামারি শুধু ভুসি, খৈল, খড়ের মতো গো-খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল তাদের গরু পালন করে এবারে লাভবান হওয়া খুবই কষ্টসাধ্য হবে।
জেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী তালগাছি হাটের ইজারাদার সাইফুল ইসলাম বলেন, এখনও কোরবানির হাট জমে নাই। বাইরের ব্যাপারিও তেমন আসছে না। কোরবানীর ২ থেকে ৩ সপ্তাহ পূর্বে সাদারণত গরু ক্রয় বিক্রয় বেশি হয়। এখনও হাট জমে উঠেনি।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গৌরাঙ্গ কুমার তালুকদার জানান, প্রতিটি উপজেলার খামার পরির্দশন করে খামারিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ ওষুধপত্র দিচ্ছি। এবার জেলায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার মোটাতাজা করা পশু ক্রয় বিক্রয় হবে বলে আমরা আশা করছি।
ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা জেলার বিভিন্ন ব্যাংকের সাথে কথা বলেছি। প্রতিটি হাটে ব্যাংকের লোক থাকবে। গবাদি পশু ক্রেতা এবং বিক্রেতারা যে কোন ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং কিউআর কোড ব্যবহার করে ই-ব্যাংকিং লেনদেন সেবা গ্রহণ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, জেলায় ৩১টি স্থায়ী ও ১৬টি অস্থায়ী পশুর হাটের মাধ্যমে এসব গবাদি পশু বিক্রি করা হবে। এছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের মাধ্যমে পশুর ছবি আপলোড করে অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে বলে তিনি জানান।

আরও খবর

Sponsered content