আবু তাহের ২৫ মে ২০২৪ , ৬:২৪:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ
দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার খ্যাত কর্ণফুলী উপজেলাধীন ৫টি ইউনিয়নে গত ৮ বছর ধরে কমিটি দিতে ব্যর্থ উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা। এরমধ্যে একটি ইউনিয়নে সম্মেলন হলেও এখনও পাঁচ ইউনিয়নই একপ্রকার কমিটি শূন্য অবস্থায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
কমিটিতে জায়গা পেতে আগ্রহী নেতাকর্মীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে দৌড়ঝাঁপ করে কমিটি গঠনের বিষয়ে জানতে চেয়েও কোনো উত্তর পাচ্ছেন না। ইতোমধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগ কর্তৃক ঘোষিত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়েও নেতারা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ ও হতাশার মধ্যে রয়েছেন।
জানা যায়, গত ২০১৬ সালের ৮ মার্চ কর্ণফুলী থানার পাঁচ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তখন সম্মেলন করতে না পারায় তৎকালীন ভূমি প্রতিমন্ত্রীর পরামর্শে কমিটি ঘোষণা করেছিলেন থানা শাখার সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমদ (বর্তমানে প্রয়াত) ও সাধারণ সম্পাদক হায়দার আলী রনি।
সেই সময়ে ঘোষিত কমিটিতে শিকলবাহা ইউনিয়নে দিদারুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও আবদুল করিম ফোরকানকে সাধারণ সম্পাদক, চরপাথরঘাটায় সৈয়দ আহমদ সভাপতি ও জসিম উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক, চরলক্ষ্যায় রফিক আহমদ সভাপতি ও মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ সাধারণ সম্পাদক, জুলধায় আমির আহমদ সভাপতি ও রফিক আহমদ সাধারণ সম্পাদক এবং বড় উঠানে আমজাদ হোসেন সভাপতি ও আবদুল মান্নান খানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের কেউ আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেননি।
বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৬ নভেম্বর শিকলবাহা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দিদারুল ইসলাম চৌধুরী দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে শূন্য হয়ে যায় সভাপতি পদ। ফলে, এক নেতা বিশিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে পরিণত হয় শিকলবাহা।
অন্যদিকে কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রচারণা করায় ২০২২ সালের ২৯ অক্টোবর চরপাথরঘাটা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ আহমদকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর পূর্বে এই ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মারা গেলে তার স্থলে কামাল আহমেদ রাজাকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
২০২৩ সালের ১৭ মার্চ শাহমীরপুর বাদামতল (পিএবি) সড়কের পাশে বড়উঠান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বড়উঠান ইউনিয়ন সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থী হন মোহাম্মদ নাজিম, আবদুল মান্নান খান। আজিম উদ্দিন সাগর সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হন। এরপর উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হলে তাতে দপ্তর সম্পাদক হন বড় উঠান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমজাদ হোসেন।
কিন্তু এখনো বড়উঠান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সম্পাদক দাবি করছেন আমজাদ-আব্দুল মন্নান খান। চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিক আহমদকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি করা হয়। কিন্তু একই ব্যক্তি আবার বর্তমান ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি। এই ইউনিয়নে ৮ বছর ধরে মোহাম্মদ হারুনুর রশিদ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঝুলে রয়েছেন।
জুলধা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির আহমদ মাঝখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভক্ত তৃণমূল নেতাকর্মীরা ফারুক-সোলায়মান পরিষদের কর্মকাণ্ডে অনেকটা হতাশ। নির্বাচন এলেই নৌকার একের পর এক পরাজয় ঘটে। দুর্বল হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাটিও।
যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে টানা চারবার ক্ষমতায় থেকেও ইউনিয়নে মাঠ গোছাতে ব্যর্থ হচ্ছেন কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগ। কোনো রকমে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি-সম্পাদক দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম। কোন ইউনিয়নে ৮ বছর আগের সাধারণ সম্পাদক আছে, সভাপতি নেই। আবার গুটিকয়েক ইউনিয়নে সম্মেলন করে ইউনিয়ন কমিটি বিলুপ্ত হলেও সভাপতি-সম্পাদক বহাল তবিয়তে দিব্যি দাবি করছেন তাঁরা আবারো সভাপতি সম্পাদক।
শুধু তাই নয়, কমিটির মেয়াদ চলে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে মাথাব্যথা নেই উপজেলা আওয়ামী লীগের। দলটির সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ বিভিন্ন ইউনিটেও বিরাজ করছে একই পরিস্থিতি। এতে দীর্ঘ হচ্ছে কমিটিতে স্থান পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকা নেতাকর্মীদের সারি। অনেকের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সব স্তরেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কোন উদ্যোগ নেই উপজেলা নেতাদের। এর অভ্যন্তরে রয়েছে শীর্ষ নেতাদের দ্বন্দ্ব, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, বিতর্কিত ও হাইব্রিডদের নাম আসায় কমিটি গঠনে বড় অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে বলে মন্তব্য পদবঞ্চিত অনেক নেতাদের।
এ প্রসঙ্গে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান তালুকদার বলেন,’ আমরা পাঁচ ইউনিয়নে যে ওয়ার্ড কমিটি গুলো দিয়েছি, এসব কমিটির নেতাকর্মীদের সাথে সামনে বসবো। তারপর আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির সাথে পরামর্শ করে শিগগিরই পাঁচ ইউনিয়নে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করব। ‘সভাপতি ফারুক চৌধুরী’র মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম টুকু বলেন, সম্মেলনের সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ইতিমধ্যে বড়উঠান ইউনিয়নে সম্মেলন হয়েছে। শিগগিরই বাকি চার ইউনিয়নেও করা হবে। তারপর দলকে গতিশীল করার লক্ষ্যে নতুন নেতৃত্বে আনতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। কমিটিতে যাঁরাই আসবেন সবাইকে নিয়ে মিলে মিশে কাজ করব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এমপির হাতকে শক্তিশালী করতে।
‘চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হায়দার আলী রনি বলেন,’ আমি সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে পাঁচ ইউনিয়নে যে কমিটি দিয়েছিলাম সেটি এখনো চলছে। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক এখনো নতুন করে কমিটি দিতে পারেনি। শুনেছি চেষ্টা করছে, হয়ত টাইমিং হচ্ছে না। আমি তো এখন জেলায় চলে আসলাম। তাই এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’