চট্টগ্রাম

শুক্কুরের ইশারা ছাড়া সিআরবির গাছের পাতাও নড়ে না

  আবু তাহের ১০ জুলাই ২০২৪ , ৬:৩২:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

শুক্কুরের ইশারা ছাড়া সিআরবির গাছের পাতাও নড়ে না

চট্টগ্রাম সিআরবি এলাকার রেলওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে গড়ে তোলেন বস্তি। আর বস্তি ঘিরে চলছে গাঁজা, বাংলা মদ, ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের রমরমা বাণিজ্য। দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে আধিপত্যের সাথে সিআরবির তুলাতলী বস্তিতে বসবাস করছে শুক্কুর। তার হাতেই যেনো বন্দী তুলাতলী বস্তির সাড়ে তিন’শ পরিবার।

বস্তিতে থেকে নিয়ন্ত্রণ করেন পুরো সিআরবি এলাকার বিভিন্ন অপকর্মের সিন্ডিকেট। এলাকার প্রতিটি মাদক স্পট থেকে তোলেন দৈনিক দুই হাজার টাকা করে চাঁদা। এছাড়াও প্রতি কেজি গাঁজায় নেন হাজার থেকে পনের’শ টাকা।

তুলাতলী বস্তি এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দারা জানান, পুলিশের আদরেই চলছে শুক্কুরের মাদক ব্যবসা। যার জন্য ‘সিকিউরিটি মানি’ হিসেবে কোতোয়ালী থানার টহল পুলিশের গাড়ি দিনে দুইবারে নিয়ে যান ২৪শ টাকা। এছাড়াও সিআরবি পুলিশ ফাঁড়িতে যায় মাসোয়ারা। এর বাইরে ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গির আলম এবং মো. সাদেক হোসাইন আলাদাভাবে পান সম্মানী। পাশাপাশি গুঞ্জন রয়েছে সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গির আলমের সাথে শুক্কুরের রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। চট্টগ্রাম সিআরবি পুলিশ ফাঁড়ি মাদক বিরোধী কিছু অভিযান পরিচালনা করলেও কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যের যোগসাজশে পার পেয়ে যায় শুক্কুর।

বস্তির মাদক সম্রাট শুক্কুর ও তার তিন ভাই, ভাবি-বোন মিলে চালায় পারিবারিক মাদকের রমরমা ব্যবসা। শুক্কুর ও তার পরিবারের বদৌলতে সিআরবির আনাচে কানাচে বসে মাদকের আসর। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য মতে, আলম, মানিক, মানিকের বউ মনি বেগম ও শুক্কুরের নামে ২৮/৩০ মাদক, প্রতারণা ও চুরির মামলা রয়েছে।

পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে চুনোপুটিরা আটক হলেও ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে যায় শুক্কুর ও তার পরিবার। তারা যেনো প্রশাসনের কাউকে তোয়াক্কাই করে না। একাধিক মামলা কাঁধে নিয়ে সগৌরবে নিয়ন্ত্রন করেন পুরো মাদক সিন্ডিকেট। এরমধ্যে আলম (৫২) ও মানিক (৪০) দীর্ঘদিন যাবত ওই এলাকায় মাদক ব্যবসায় জড়িত। তারা দুজনেই শুক্কুরের আপন বড় ভাই। জনসম্মুখে বিক্রি করেন মাদক। শুধু ভাইয়েরা নন, সাথে আছে তাদের বোন শাহীনা, মানিকের বউ মনি বেগম (৩৬) ও আলমের বউ হীরা আক্তার।

তথ্যমতে ২০২২ সালের ৭ মার্চ শুক্কুরের সাম্রাজ্যের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলে শুক্কুর ও তার বাহিনীর হাতে মারাত্মক হামলার শিকার হন রেলের ৯ কর্মী। উক্ত ঘটনায় সরকারী কর্মচারীদের মারধর মামলারও প্রধান আসামী শুক্কুর। এছাড়াও সর্বশেষ গত সাত জুলাই চট্টগ্রাম নগরীর স্টেশন রোডের পাখি গলিতে আরেক মাদক ব্যবসায়ী মনাকে ছুরিকাঘাতে ও পায়ের রগ কেটে হত্যার ঘটনায় অন্যতম আসামি শুক্কুর। খুনে জড়িত দুই যুবক ধরা পড়লেও শুক্কুরসহ খুনের মূল হোতাদের এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ।

সিআরবি পুলিশ ফাঁড়ির তথ্যমতে, গত ১০ মাসে (এপ্রিল ২০২৩ থেকে জানুয়ারি ২০২৪) সিআরবি ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে মোট ৯৫ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে পুলিশ। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও ৩ হাজার ১শ ৭০পিস ইয়াবা ও ১হাজার ৫শ ১০ লিটার চোরাই মদ উদ্ধার করা হয়।

মাসিক মাসোয়ারা এবং ব্যক্তিগত চাঁদার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় সিআরবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক রনি তালুকদারের কাছে। তিনি সংবাদকর্মীকে বলেন, মাত্র দু-মাস হলো আমি ফাঁড়ির দায়িত্ব পেয়েছি। আগে কারা কি নিতো তা আমি জানি না এবং ব্যক্তিগতভাবে শুক্কুরকে চিনিও না। তবে তার অপকর্মের কথা শুনেছি। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম ওবায়দুল বলেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছি। শুধু সিআরবি নয় কোতোয়ালীর প্রতিটা কোনা থাকবে মাদক মুক্ত। এই ব্যাপারে আমরা কাউকে ছাড় দিচ্ছি না। শুক্কুরের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে কোতোয়ালী থানা পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করছে।

প্রশাসনসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের বারংবার অভিযানের পরেও কিভাবে এখানে অবৈধ দখলদার ও জমজমাট মাদক ব্যাবসা চলে তা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন বিভিন্ন মহল।

আরও খবর

Sponsered content