প্রতিনিধি ১৪ জুলাই ২০২৪ , ৩:১০:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ
মাত্র কয়েক দশক আগেও কর্ণফুলী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ১৪টি খাল সচল ছিল। উপজেলার চতুর্দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে মিলিত ছিল ওই খালগুলো। এক সময় বড় সাম্পান, বজরা, ময়ূরপঙ্খী, ডিঙ্গি, পালতোলা পানসি, সওদাগরী নৌকা, বাইচের নৌকা ও শ্যালো নৌকা চলতো এসব খালে।
সে সময়ে নৌপথে মালামাল পরিবহন, বাণিজ্যিক ও পানি পথে যোগাযোগের প্রসার ছিলো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপ ছিল তখন পশ্চিম পটিয়া তথা কর্ণফুলী। সম্প্রতি ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের দখল-দূষণে সংকটাপন্ন ১৪টি খাল। যদিও খননে নেমেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নিয়েছে কয়েকটি প্রকল্পও। কিন্তু কর্ণফুলীবাসীর মনে প্রশ্ন জেগেছে, “শিকলবাহা চরলক্ষ্যা খালের মতো কী অন্যান্য খালগুলোও দখলমুক্ত করে সচল করা হবে?“
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা, উপজেলা ভূমি অফিস ও বিভিন্ন নদী নিয়ে গবেষণা করা সংস্থা, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, বেলা ও নোঙ্গর এর নানা প্রতিবেদন অনুযায়ী কর্ণফুলীতে কোথাও খালের সংখ্যা ১৩, কোথাও ১৪টি। কাগজে কলমে পাওয়া খালগুলো হলো চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত চরলক্ষ্যা-শিকলবাহা খাল, চরলক্ষ্যা-চরফরিদ খাল, লেইঙ্গা খাল, মামা ভাগিনার খাল, চরলক্ষ্যা-খোয়াজনগর খাল এবং চরলক্ষ্যা-বালুরচর খাল। শিকলবাহা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে শিকলবাহা খাল, শিকলবাহা-জুলধা খাল।
এছাড়াও রয়েছে চরপাথরঘাটা খাল, চরপাথরঘাটা-খোয়াজনগর খাল, চরপাথরঘাটা-চরলক্ষ্যা খাল, বাদামতল খাল। এছাড়াও রয়েছে জুলধা-শিকলবাহা খাল ও জুলধা-চরলক্ষ্যা খাল। বড় ওঠানের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কৈয়গ্রাম খাল। কিন্তু বড়উঠানে কোন খাল নেই বলে জানান তহশিলদার।
চরলক্ষ্যা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা (তহশিলদার) সাজ্জাদ শাহ আমজাদ, চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা উজ্জ্বল কান্তি দাশ ও শিকলবাহা ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘স্ব স্ব ইউনিয়নে গুটিকয়েক খাল দৃশ্যমান আছে, বাকি খালগুলো তেমন চোখে পড়ে না।’
কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী বলেন, ‘কর্ণফুলীতে যে খালগুলো আছে, সেগুলো বিভিন্ন দিকে দখল হয়ে গেছে বা দূষণের কারণে নদীর সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে না। সেগুলো উদ্ধার করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে। তখন এলাকার জলাবদ্ধতা কমে যাবে। এ খাল বাঁচাতে অনেকদিন যাবত আমি আন্দোলন, মানববন্ধন করতেছি। সরকারি দপ্তরে মামলাও করেছি।’
এ বিষয়ে নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন নোঙর-এর পক্ষে সুমন শামস বলেন, ‘সিএস-আরএস ম্যাপ অনুযায়ী কর্ণফুলীর খাল গুলো চিহ্নিত করা দরকার। আইন অনুযায়ী খাল, নদী ও জলাশয় দেখা ভাল করেন মূলত জেলা প্রশাসক। তাঁরা কতটুকু সহযোগিতা আর দায়িত্ব পাল করেন। সেটার ওপর নির্ভর করে খাল দখল পরিস্থিতি। খাল উদ্ধারে শক্তি দরকার। আশা করছি কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ, কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনের সেই শক্তি আছে। সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক পরিবহণসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগে খাল উদ্ধার সম্ভব হবে।’
লেখক গবেষক এবং চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলী উর রহমান বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্টের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে দেশের আরএস সিটের নকশা অনুযায়ী সব খাল উদ্ধার করা। সে রায়ে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদী উদ্ধার কাজ চলমান। রায়টি কিন্তু সারা বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য। হাইকোর্টের রায়কে সম্মান দেখিয়ে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন খালগুলো উদ্ধার করুক। যদি তাঁরা উদ্ধার না করে তাহলে আমরা সঠিক তথ্য উপাত্ত নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবদুল মালেক বলেন, ‘জেলা প্রশাসন এ বিষয়ে খুবি আন্তরিক। নকশা দেখে ধারাবাহিকভাবে সব খাল উদ্ধার করা হবে।’