আন্তর্জাতিক

হিজবুল্লাহর পরিকল্পনা, ইসরায়েলের হুমকি-যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত দুই পক্ষ ?

  প্রতিনিধি ২৮ জুলাই ২০২৪ , ২:৫৮:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

হিজবুল্লাহর পরিকল্পনা, ইসরায়েলের হুমকি-যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত দুই পক্ষ ?

হিজবুল্লাহ বিভিন্ন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান সংঘাত আর বড় কিছুতে পরিণত হওয়ার হুমকি পাচ্ছে তারা। রবিবার (২৮ জুলাই) ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা রাফাহ আক্রমণ বন্ধ করে লেবাননের দিকে অভিযান স্থানান্তরের কথা ভাবছে।

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ অক্টোবর থেকেই বারবার বলে আসছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি সম্মত না হওয়া পর্যন্ত তারা লড়াই করতে পারে এবং করবে।

এমনকি ইসরায়েল যদি তার সামরিক বাহিনীর সিংহভাগ লেবাননের দিকে দেয়, তবু হিজবুল্লাহ তার অবস্থানে অনঢ় থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

লেবাননে ইসরায়েলি সামরিক পদক্ষেপ আঞ্চলিক এবং সম্ভবত আন্তর্জাতিকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হিজবুল্লাহর উপর দুটি বইয়ের লেখক আমাল সাদ বলেছেন, আমি মনে করি না গাজায় যুদ্ধবিরতি না হলে হিজবুল্লাহ আলোচনায় আসবে। তাদের যুদ্ধ চলমান থাকবে।

নেতানিয়াহুর কট্টরপন্থী জোটের অংশীদাররা যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগে হামাসের সম্পূর্ণ পরাজয় দাবি করার কারণে যুদ্ধবিরতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মধ্যেও হামাসের পরাজয় নিয়ে সংশয় রয়েছে।

গত ১৯ জুন নাসরাল্লাহ তার দলের শক্তি প্রদর্শন করেছেন। জানিয়েছেন, তার দলে এক লাখের বেশি যোদ্ধা রয়েছে। আঞ্চলিক সশস্ত্র গোষ্ঠী প্রধানরা তার দলে যোগ দেওয়ার আগ্রহ দেখালেও, প্রাথমিকভাবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু তাদের প্রস্তাবে তিনি যে অভিভূত সেটিও জানিয়েছিলেন।

এর আগে, তিনি ইসরায়েলি শহর হাইফা দখলের ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়া ইসরায়েল ও ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী লক্ষ্যবস্তুগুলোর ভিডিও প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ যুদ্ধ শুরু হলে এগুলোতে আঘাত করা হবে।

লেবানিজ আমেরিকান ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইমাদ সালামেয় বলেছেন, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের কাছে যুদ্ধের প্রসারিত করার বিকল্পগুলি প্রদর্শন করছে।

নাসরুল্লাহ সাইপ্রাসকেও হুমকি দিয়েছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশটি ইসরায়েলকে সমর্থন করলে, ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছিলেন। সাইপ্রাস ইসরায়েলকে সামরিকভাবে সহযোগিতা না করার কথা জানিয়েছে।

সালামেয় বলেছেন, সাইপ্রাসকে হুমকি মানে ইসরায়েলকে সমর্থনের বিষয়ে পরোক্ষভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বিরত থাকতে বলা।

বৈরুতে সেন্ট জোসেফ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক করিম এমিল বিতার বলেছেন, দক্ষিণ লেবাননে একটি সীমিত ও দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের ক্ষেত্রে হিজবুল্লাহ সম্ভবত একটি কৌশল তৈরি করেছে এবং ব্যাপক পূর্ণ-স্কেল যুদ্ধের জন্যও একটি কৌশল প্রস্তুত করেছে।

কিছু বিশ্লেষক বিশ্বাস করেন, দক্ষিণ লেবাননে সীমিত স্থল আক্রমণ সম্ভব, যদিও এতে উভয় পক্ষের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে।

যদিও হিজবুল্লাহ ও ইরান সরকার জানে যে, এ ধরনের আক্রমণ লেবাননের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং ধ্বংসাত্মক হবে বলে জানান বিতার।

মার্কিন বিশেষ দূত আমোস হোচস্টেইন সম্প্রতি তেল আবিব এবং বৈরুতে সফর করেছেন। তিনি হিজবুল্লাহকে স্পষ্ট করেছেন, এটি অনুমান করা ভুল হবে যে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে বৃহত্তর যুদ্ধ শুরু করতে বাধা দিতে পারে।

কূটনীতি এবং সামরিক পদক্ষেপের বিষয়গুলো পরস্পর সংযুক্ত। দুই পক্ষই এই বিষয়গুলিকে বিবেচনায় নিচ্ছে। তবে বিতার জানিয়েছেন, আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে রয়েছি যা অত্যন্ত অস্থির। উভয় পক্ষের যে কোনও ভুল গণনা এই অঞ্চলকে একটি নতুন পূর্ণাঙ্গ সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

সূত্র: আল জাজিরা