আন্তর্জাতিক

দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে ডুবোজাহাজ টাইটানের অক্সিজেন

  প্রতিনিধি ২২ জুন ২০২৩ , ৯:২৫:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক :

আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ ডুবোজাহাজ টাইটানের কোনো সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টার কিছু পরেই ফুরিয়ে যাবে টাইটানের অক্সিজেন, একই সাথে শেষ হয়ে যাবে পাঁচ আরোহীর জীবিত উদ্ধারের আশা।

মার্কিন উপকূলরক্ষী বাহিনী তাদের অনুসন্ধান এলাকার পরিধি ইতোমধ্যে দ্বিগুণ করেছে। উদ্ধারকারীরা রীতিমতো সময়ের সাথে যুদ্ধ করছে।

সমুদ্রের নিচে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ এলাকা ঘুরিয়ে আনতে ভ্রমণ পরিকল্পনা করে থাকে ওশানগেট নামের একটি কোম্পানি। আরোহীদের পোলার প্রিন্স নামে জাহাজে করে প্রথমে আটলান্টিকের ওপর টাইটানিক ডুবে যাওয়ার জায়গাটায় নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে টাইটান নামের ওই ছোট আকারের সাবমেরিনে করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের মুখোমুখি করা হয়।

এই পুরো সময় সাবটি পোলার প্রিন্স জাহাজের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখে। কিন্তু রোববার, সাবটি ডুব দেয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে জাহাজের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সবশেষ ডেটা অনুযায়ী সাবটি তিন হাজার ২৮ মিটার গভীরে ছিল।

টাইটান যে অঞ্চলটির নিচে নেমেছিল, সমুদ্রের স্রোত সেখান থেকে সাবটিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। এ ধারণা থেকে একটি অত্যধিক রোবট বসানো ফরাসি জাহাজ রোবটিক্যালি অপারেটেড ভেহিকল-আরওভি পানির প্রায় চার কিলোমিটার গভীরে পাঠানো হয়েছে। জাহাজটির সমুদ্রের তলদেশে পৌঁছানোর সক্ষমতা রয়েছে বলে জানা যায়।

উদ্ধার অভিযানে ১০টি অতিরিক্ত জাহাজ ও বেশ কয়েকটি দূরবর্তী সাবমেরিন বৃহস্পতিবার যোগ দিবে বলে জানা গেছে। সবমিলিয়ে উদ্ধারকারীরা বলছে, তারা এখনো আশাবাদী। নিখোঁজ ডুবোজাহাজের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।

তবে অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ক্যাপ্টেন বলেছেন, ‘সত্যি বলতে, আমরা এখনো জানি না তারা কোথায় আছে।’

মঙ্গলবার ও বুধবার সমুদ্রের নিচের ধাক্কা দেয়ার শব্দ পাওয়ার পরই এ তল্লাশি এলাকা আরো বিস্তৃত করা হয়।

এটি এখন ১৪ হাজার বর্গ মাইল বা ২২ হাজার ৫৩০ বর্গ কিলোমিটার-জুড়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। যার পরিধি যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট রাজ্যের আকারের দ্বিগুণ।

টাইটান যে গবেষণা জাহাজ থেকে ছেড়ে যায়, ওই পোলার প্রিন্সে অনুসন্ধানের জন্য কমান্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। এটি টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপের কাছাকাছি বসে উদ্ধার তৎপরতা তদারকি করছে।

ক্যামেরা-সজ্জিত রিমোট-নিয়ন্ত্রিত বাহন আরওভি সারাদিন সমুদ্রতলের গভীরতা স্ক্যান করছে।

জাহাজে থাকা পাঁচ যাত্রীর মধ্যে রয়েছেন ব্রিটিশ ধনকুবের ৫৮ বছর বয়সী হামিশ হার্ডিং, ব্রিটিশ-পাকিস্তানি ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ৪৮ বছর বয়সী শাহজাদা দাউদ, তার ছেলে ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী সুলেমান দাউদ, ৭৭ বছর বয়সী ফরাসি অভিযাত্রী পল-হেনরি নারজিওলেট এবং ওশানগেটের প্রধান নির্বাহী ৬১ বছর বয়সী স্টকটন রাশ।

আরোহীদের মধ্যে নারজিওলেট, টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার অভিযানে আগেও অংশ নিয়েছেন।

অক্সিজেন কমে যাওয়াই একমাত্র সমস্যা নয়
একটি ২২ ফুট ডুবোজাহাজে এত সময় ধরে পাঁচজন মানুষ আটকে পড়ায় তাদের ক্লাস্ট্রোফোবিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

নিউফাউন্ডল্যান্ডের সেন্ট জনসের মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির হাইপারবারিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. কেন লেডেজ বলেছেন, বাতাস ফুরিয়ে যাওয়াই এখন একমাত্র বিপদ নয়।

ডুবোজাহাজটি বৈদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। বিদ্যুৎ অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার সাথে সাথে ভেতরের সবার প্রশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসা কার্বন ডাই-অক্সাইডের হার বেড়ে যাবে, যা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।

তিনি বলেন, ‘কার্বন ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে এটি চেতনানাশক গ্যাসের মতো কাজ করে। যার প্রভাবে মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে।’

একজন ব্যক্তির রক্তপ্রবাহে হাইপারক্যাপনিয়া নামে গ্যাস অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে গেলে এবং দ্রুত চিকিৎসা না করালে মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

সাবেক রয়্যাল নেভি সাবমেরিন ক্যাপ্টেন রায়ান রামসে বলেছেন, তিনি টাইটানের ভেতরের ভিডিওগুলো অনলাইনে দেখেছেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ ব্যবস্থা দেখতে পাননি, যা স্ক্রাবার নামে পরিচিত।

তার মতে, সাবটি সমুদ্রতটে থাকলে পানির তাপমাত্রা প্রায় শূন্যে নেমে আসবে। যদি এর বিদ্যুৎ চলে যায় তাহলে এটি ভেতরের পরিবেশ উষ্ণ রাখতে পারবে না।

ফলে হাইপোথার্মিয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। অর্থাৎ শরীর খুব ঠান্ডা হয়ে যাবে।

টাইটানের মধ্যে অক্সিজেনের অভাব ও কার্বন ডাই অক্সাইড জমা হওয়া মানে ভেতরের আরোহীদের উদ্ধারকারীদের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষমতা, যেমন নিয়মিত বিরতিতে হুলের ওপর আঘাত করার ক্ষমতা হ্রাস পাবে।

ডা. লেডেজ বলেন, যদি তারা অচেতন হয়, তাহলে তারা নিজেদের সাহায্য করার মতো কিছু করতে পারবে না।

যদিও কোস্টগার্ড সতর্ক করেছে যে সম্ভবত সামান্য অক্সিজেন অবশিষ্ট আছে, ক্রুরা তাদের সরবরাহ সংরক্ষণ করতে সক্ষম হতে পারে, অন্তত কিছু সময়ের জন্য।

বুধবার পর্যন্ত কী হয়েছে?
মার্কিন উপকূলরক্ষীরা বলেছে, নিখোঁজ টাইটানিক ডুবোজাহাজটি খুঁজতে তারা কিছু শব্দ পেয়েছে। তারা জানে না ওই শব্দের উৎস কী। ওই শব্দ টাইটান থেকে নাও আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সাবেক মার্কিন নৌবাহিনীর পারমাণবিক সাবমেরিন কমান্ডার ডেভিড মার্কুয়েট।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না ওই শব্দ ওই সাব থেকে এসেছে। এটা সমুদ্রের নিচের প্রাকৃতিক শব্দ হতে পারে। আমরা শব্দ শুনতে পাচ্ছি এবং আরো জাহাজ তল্লাশি অভিযানে যোগ দেয়। এরপর আমরা আরো শব্দ শুনতে পাই এবং আমি এটাকে কাকতালীয় বলে মনে করি না।’

ক্যাপ্টেন মারকুয়েট বিশ্বাস করেন যে বোর্ডে যারা আছে তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম।

কিন্তু তারপরো কিছুটা আশা রয়েছে। কারণ টাইটানকে তুলে আনার জন্য সব ধরনের সরঞ্জাম আনা হচ্ছে।

অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই ডুবো-যানটি খুঁজে পাওয়া দরকার বলে তিনি জানান।

গভীর সমুদ্রের পরিবেশ খুবই নিষ্ঠুর এবং ক্ষমাহীন। অনেকটার পৃথিবীর বাইরের মহাকাশের মতো।

টাইটানিক যেখানে ডুবেছে সমুদ্রের নিচের ওই স্থানটিকে ‘মধ্যরাতের অঞ্চল’ বলা হয়। যা এর হিমায়িত তাপমাত্রা ও চিরস্থায়ী অন্ধকারের জন্য পরিচিত।

টাইটানে আগের অভিযানে অংশ নেয়া অভিযাত্রীরা সমুদ্রের তলদেশে নামার আগে ওই ভয়াবহ অন্ধকারে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে।

ডুবোজাহাজের আলোয় সামান্য দূর পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়। তবে তাও মাত্র কয়েক মিটারের মধ্যে থাকলে।

উদ্ধারকারীদের সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে হচ্ছে।

টাইটান সম্পর্কে কিছু তথ্য

সূত্র : বিবিসি

আরও খবর

Sponsered content

Powered by