প্রতিনিধি ১৩ আগস্ট ২০২৪ , ৫:১৩:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরকার পতনের পর পুরো শহর যখন এলোমেলো, তখন শহরটাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে বিভিন্ন স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অপরিচ্ছন্ন রাস্তাঘাট যেন নিমিষেই পরিস্কার পরিষ্কার করে নতুনরূপে সাজিয়েছে শিক্ষার্থীরা। সাধারণ মানুষ যখন নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত , শিক্ষার্থীরা তখন অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজেদের শহরকে ভিন্নরূপে চিত্রায়তি করেছে মনের মাধুরি মিশিয়ে।
গত ৫ আগষ্ট থেকে সড়কে ট্রাফিকসহ পুলিশের কোন উপস্থিতি ছিলোনা। এ সময় শহরের শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নগরজুড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে জনজীবন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছে শিক্ষার্থীরা। ঘুষ ও কোন ধরনের চাঁদা না দিয়েই নিরাপদভাবে সড়কে চলছে গণপরিবহন। শিক্ষার্থীদের সাথে সহযোগিতা করছেন বিএনসিসি সহ কিছু আনসার সদস্যরা। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগে সন্তুষ্ট নগরবাসী। চালক, যাত্রী, পথচারী সবাই নিয়ম মেনে চলছেন।
এদিকে নগরীর অপরিচ্ছন্ন দেয়ালগুলো আজ যেন শিক্ষার্থীদের হাতের ছোয়ায় রঙিন হয়ে উঠেছে। রোদ-বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে স্বাধীন দেশকে নতুনভাবে সাজিয়ে তুলতে তারা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। চারিদিকে যেন নতুনত্বের ছোঁয়া। সাদা, কালো, লাল, নীল, হলুদ কমলা এ যেন রঙের এক রঙিন মেলা।
দেয়ালে দেয়ালে লেখা হয়েছে, রাষ্ট সংস্কারের কাজ চলছে, স্বাধীন, ৩৬ জুলাই, পানি লাগবে, স্বাধীন বাংলাদেশে আপনাকে স্বাগতম, আমার ভাই আবু সাঈদ, আমিই বাংলাদেশ, ২.০ সধীনতা এমন প্রগতিশীল উক্তি আর চিত্রশৈলীতে সেজে উঠেছে নগরীর দেয়ালগুলো। রাজনৈতিক পোষ্টারে ঢাকা দেয়ালগুলো আজ শহরের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছে।
যেখানে কিছুদিন আগেও ছিলো অসুন্দরের ছাপ, আজ সে দেয়াল রঙিন আলোয় আলোকিত। শিক্ষার্থীদের হাতের রঙ-তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন। দেয়ালে দেয়ালে লেখা হয়েছে স্বাধীন বাংলার মানুষের মনের আবেগ, ভালোবাসা ও স্বপ্নের কথা। এ শহর আর কাদবে না, অন্যায় আর থাকবে না এ অকাঙ্কা নিয়ে তারা দেশকে নতুন রুপে সাজাতে অক্লান্ত পরিশ্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
নগরীর বারিক বিল্ডিং মোড়ে দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকছিলেন একদল শিক্ষার্থী। জানা গেলো তারা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লিও ক্লাব অব চিটাগাং বন্ধনের সদস্য। তারাও শরীক হয়েছে এ নবযাত্রার আন্দোলনে। নগরীর আগ্রাবাদ সরকারী কমার্স কলেজের দেয়াল সাজানোর কাজ করা শিক্ষার্থীরা জানালো মাসুকা নামের এক শিক্ষিকা তাদেরকে দুপুরের খাবার দিয়েছেন গতকাল। শিক্ষার্থীদের খাবার, ড্রেস, বাঁশি, হেলমেট, ছাতা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন নগরীর সাধারণ মানুষ।
নগরীর জিইসি মোড়ে দেখা হয়, সাংবাদিক নুরুদ্দিন খান সাগরের সাথে। তিনি শিক্ষার্থীদের নানা কাজের প্রশংসা এবং তাদেরকে কোমল পানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করেছেন। শাহেদুল ইসলাম শাহেদ নামে এক যুবনেতা তাদেরকে দিয়েছেন তুলি, রং, ব্রাশসহ আলপনার নানা সামগ্রী।
নগরীর সিআরবি এলাকায় আলপনারত শিক্ষার্থী আরিয়া জানালেন, তারা কষ্ট করে যে সুন্দর সুন্দর ছবি এবং বক্তব্য আঁকছেন, তা স্থায়ী হলে মানুষের মধ্যে বিবেকবোধ জাগ্রত হবে। সৌন্দর্য্য রক্ষায় সবাইকে আন্তরিক হতে হবে। তথ্য প্রযুক্তিবিদ টিটু বলেন, পরিচ্ছন্নতা এবং সৌন্দর্য্য একে অপরের পরিপূরক। শিক্ষার্থীরা এবার দেখিয়ে দিয়েছে, আন্তরিকতা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা এবং সদিচ্ছা থাকলে কোনো কাজই কঠিন নয়।