প্রতিনিধি ২৬ আগস্ট ২০২৪ , ৫:৫৯:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে পতন হয়েছে কেরানীগঞ্জের শীর্ষ দুই ভূমিদস্যু সাবেক বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের। প্রায় সাড়ে ১৫ বছর দুজনই ক্ষমতাসীন ছিলেন। পতন হওয়ার আগ পর্যন্ত টানা চারবার সংসদ-সদস্য ছিলেন বিপু আর টানা চারবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন শাহীন আহমেদ।
এই সময়ে দুজনই বৈধ-অবৈধ উপায়ে কামিয়েছেন শত কোটি টাকা। নামে-বেনামে জমি কিনেছেন শত শত বিঘা। দখল করার অভিযোগ আছে ভূরিভূরি। রাজধানীতে বহুতল ভবন, একাধিক ফ্ল্যাট ও কেরানীগঞ্জে বেনামেও রয়েছে শত শত একর জমি। বিপুর রয়েছে রাজৈন্দ্রপুর এলাকায় প্রিয়প্রাঙ্গণ হাউজিং। হাউজিংয়ের নামে সাধারণ মানুষের জমি দখল করা হয়েছে। নামমাত্র মূল্য দেওয়া হয়েছে অনেককে। অনেককে কোনো টাকা-পয়সা না দিয়েই দলিল করে নেওয়া হয়েছে। এভাবে শত শত বিঘা জমি নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে প্রিয়প্রাঙ্গণ হাউজিং। দোলেশ্বরে নিজ এলাকায় রয়েছে শত বিঘা জমি। কাটুরাইল এলাকায় কয়েক বিঘা জমিতে বিশাল পুকুরসহ গড়ে তুলেছেন খামার বাড়ি।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ একাধারে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। পরবর্তীতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা শাহীন আহমেদ উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর তার ভাগ্যের চাকা খুলে যায়। এসএসসি পাশ হলেও তুখোড় বুদ্ধিদীপ্ত শাহীন আহমেদ সংসদ-সদস্য বিপুর আশীর্বাদে কেরানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের হর্তাকর্তা হয়ে ওঠেন। গড়ে তোলেন নিজস্ব বলয়। উপজেলা পরিষদের সব কার্যালয়সহ প্রায় সবকিছু চলত তার নির্দেশে। রোহিতপুর ইউনিয়নে ‘কেরানীগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ গড়ে তোলেন কয়েকশ বিঘা কৃষি জমি নিয়ে। সব জমি দখল করে মালিকদের বাধ্য করা হয়েছে বিক্রি করতে। এছাড়াও এই প্রজেক্টের আশপাশের জমি যাতে মালিকরা বিক্রি করতে না পারে এজন্য সাবরেজিন্ট্রার অফিসে জমির বিভিন্ন দাগের তালিকা পাঠাতেন। যাতে ওই সব দলিল রেজিস্ট্রেশন করা না যায়। ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে কম দামে তার কাছে বিক্রি করতেন। তেঘরিয়া ইউনিয়নে গড়ে তুলেছেন কিউট হাউজিং। এছাড়াও ঝিলমিল, শুভাঢ্যা, রাজেন্দ্রপুর, আব্দুল্লাহপুরসহ বিভিন্ন মৌজায় বিঘায় বিঘায় জমি রয়েছে তার ভাই – বোনদের নামে।
কেরানীগঞ্জে বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৩০ টির মতো হাউজিং কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এর প্রায় সবগুলোয় গড়ে উঠেছে বিপু ও শাহীনের ছত্রচ্ছায়ায়। এসব হাউজিংয়ের বেশির ভাগে তাদের শেয়ার রয়েছে।
এই দুজনের আরও কয়েকজন সহযোগী ছিল। তার মধ্যে অন্যতম প্রতিমন্ত্রী বিপুর ঘনিষ্ঠ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জসিম মাহমুদ, মধু সিটির হাবিব, তারানগর ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ফারুক, জিনজিরা ইউপি চেয়ারম্যান সাকুর হোসেন সাকু, আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান। সরকার পতনের দিন সপরিবারে দুজনই গা ঢাকা দিয়েছেন। ক্ষুব্ধ জনতা ওইদিন বিপুর দোলেশ্বর এলাকার বাড়িতে আগুন দেয়। খামার বাড়িতে লুটপাট করে। একইভাবে শাহীন আহমেদের বাড়িতে ভাঙচুর আগুন দেয়।