প্রতিনিধি ২৭ আগস্ট ২০২৪ , ৭:২৪:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের বিভিন্ন স্থানে আদিবাসীদের উপর হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ভুমি দখলের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে আদিবাসী ছাত্র-জনতা এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থী কৃষ্ণ প্রিয়া মুর্মু আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বৃীকৃতি, পৃথক মন্ত্রনালয় ও ভুমি কমিশন গঠনদাবীসহ সিধু-কানু‘র ভার্স্কয্য ভাংচুরকারীদের বিচার ও অনতিবিলম্বে ভার্স্কয্য পূন:নির্মানসহ সারাদেশে আদিবাসীদের নিরাপত্তার দাবী করেন।
এ দাবীতে ছাত্র-জনতার উদ্যোগে দিনাজপুরের কাহারোলের তেভাগা চত্বরে আদিবাসীদের প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষনা দেয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এসময় লিখিত বক্তব্যে কৃষ্ণ প্রিয়া মুর্মু বলেন, গত ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে দেশের সকল স্তরের ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে। এরফলে দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনা, বৈষম্য থেকে মুক্ত হতে পেরে মুক্তিকামী জনগণ বিজয় মিছিল করেছে।
কিন্তু এই আনন্দঘন মুহুর্তেও কিছু সুযোগ সন্ধানী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ভূমি দখল করেছে। আদিবাসীরাও এই অন্যায় অত্যাচার থেকে রেহায় পায়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পরে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো আদিবাসী গ্রামগুলোতে আদিবাসীরা নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। আদিবাসীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
অতীতের অনেক সরকার আদিবাসীদের ভূমি অধিকার সুরক্ষা ও উন্নয়নের অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে কেউ কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। নওগাঁর বহুল আলোচিত আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন হত্যা, দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ঢুডু সরেনসহ তার ভাই ও পিতাকে হত্যা, পার্বতীপুর উপজেলার চিড়াকূটা গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা, সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মে বাপ-দাদার সম্পত্তির দাবিদার তিন সাঁওতাল হত্যাসহ ১৮৪২.৩০ একর সম্পত্তি ফেরত দানে গড়িমসি, রুখিয়া রাউত ধর্ষণ ও হত্যা, নবাবগঞ্জে বন বিভাগ কর্তৃক আদিবাসীদের জমি দখল ও আদিবাসীদের নামে মিথ্যা বন মামলা প্রদান ইত্যাদি ঘটনার কোনটিরই ন্যায্য বিচার আদিবাসীরা আজো পায়নি।
এমনকি দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে যেসব আদিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধীন করেছেন তাদের অনেকেই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পর্যন্ত পাননি। অনেক আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধাও দেশ স্বাধীন পরবর্তী সময়ে ভূমিদস্যুদের অত্যাচার ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে পরিবারসহ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদু উরাও এর নেতৃত্বে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আদিবাসীরা তীর ধনুক নিয়ে আক্রমণ করেছিল কিন্তু সেই বুদু উরাওকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাবিপ্রবির হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অনামিকা মার্ডি ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রংপুর বিষ্ণু সরেন অভিযোগ করেন গত কয়েক দিনের ঘটনায় উল্লেখিত স্থানে প্রায় ৭০ টি আদিবাসী পরিবারের প্রায় ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ৭০টি পরিবার অসহায়ের মধ্য দিন যাপন করছে। সংবাদ সম্মেলনে দুঃষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতার ও আদিবাসীদের নিরাপত্তার দাবীর জন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকারের কাছে আহবান জানানো হয়।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মানিক সরেন, মানিক মুর্মু, ঈশ্বর টুডু, রিপন মার্ডি, নারায়ন মাডি, দুলাল সরেন, বৃষ্টি সরেন।