চট্টগ্রাম

মিরসরাইয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ

  প্রতিনিধি ২৮ আগস্ট ২০২৪ , ৭:০৬:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ

মিরসরাইয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চাঁদাবাজি ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন আটজন। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িঘর।

মঙ্গলবার (২৭ আগষ্ট ) রাতভর বারইয়ারহাট পৌরসদরে থেমে থেমে এসব ঘটনা ঘটে।

হামলার ঘটনায় আহতরা হলেন বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম লিটন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার মাহমুদ জিপসন, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মিনহাজ উদ্দিন টিটু, যুবদল নেতা ইকবাল হোসেন মিয়াজি, হিঙ্গুলী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিনহাজ উদ্দিন সোহান, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য পারভেজ, যুবদল নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলু, বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম ও তার অন্তঃসত্ত্বা পুত্র বধু । আহতদের মধ্যে ইকবালের অবস্থা সংকটাপন্ন তার মাথার খুলিতে একাধিক ফাইল ধরা পড়েছে সিটিস্কেন প্রতিবেদনে। তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে নীবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। 

চাঁদাবাজি ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাঈন উদ্দিন লিটন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুল ইসলাম মামুন, সাবেক কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিনের বাড়িঘর ভাঙচুর ও ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে।

বারইয়াহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজি বলেন, মাঈন উদ্দিন লিটনের অনুসারী জিয়া উদ্দিন বাবলু বিএনপির নামে বারইয়ারহাটের একটি ভাঙারি দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন। ওই দোকানের মালিক বিষয়টি জানালে আমি তাকে সর্তক করি। পরে জিয়া উদ্দিন বাবলু ক্ষিপ্ত হয়ে ৩০-৪০ জন নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় এক পথচারী নারী, বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাতজন আহত হন। এদের মধ্যে আমার ভাই ইকবাল হোসেনকে গুরুত্বর অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় মামলা করবো।

অপরদিকে বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন কমিশনার বলেন, শেখ হাসিনার পতনের পর বারইয়ারহাট বাজারে দিদারুল আলম মিয়াজির অনুসারীরা ব্যাপক চাঁদাবাজি ও লুটপাটের মহোৎসব শুরু করে। তার চাঁদাবাজি রুখে দিতে বিক্ষোভ মিছিল করি আমরা। বিক্ষোভ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার রাতে দিদারুল আলম মিয়াজির নেতৃত্বে মাঈন উদ্দিন লিটন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুল ইসলাম মামুন, নিজাম উদ্দিন কমিশনার ও আমার বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় ও ব্যাপক লুটপাট চালায়। ঘরের প্রতিটি আসবাবপত্র তছনছ করে দেয় । পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যরা রাতের খাবার খাচ্ছিল তাদের মুখের ভাত ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। আমরা রাজনীতি করি যা হবে রাজপথেই হবে কিন্তু বাড়ি ঘরে হামলা গত ১৭ বছরেও হয়নি। নিজ দলের কর্মীদের হাতে এভাবে লাঞ্চিত হতে হবে কখনো চিন্তা করি নাই।

উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যান বলেন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী ও বারৈয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন লিটনের অনুসারী বাবলু মিয়াজী বারৈয়ারহাটে বিভিন্ন দোকানে চাঁদাবাজি শুরু করে। বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে দলিয় স্বার্থে আমরা তাকে শাষিয়েছি যাতে আর চাঁদাবাজি না করে। কিন্তু সে ক্ষিপ্ত হয়ে ৪০ থেকে ৫০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী নিয়ে বারৈয়ারহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজীর উপর হামলা করতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার ছোট ভাই ইকবাল মীয়াজির উপর হামলা করে তাকে মারাত্মক আহত করে। এসময় আহত হয় আরো কয়েকজন। তাদের উপর হামলার খবর পেয়ে স্থানীয় জনতা একত্রিত হয়ে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করে। সাবেক দুই কমিশনার সহ ৪ টি বাড়িতে কারা হামলা ও লুটপাট করেছে আমরা জানি না।

মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমাদের উপজেলা বিএনপির একটি অংশ ৫ তারিখের পর থেকে পুরো উপজেলা জুড়ে জ্বালাও পোড়াও হামলা লুটপাট ও দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা গত ১৭ বছর জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে এখন হচ্ছে নিজ দলের সন্ত্রাসীদের কাছে। আমরা এর প্রতিকার চাই । কেন্দ্রীয় বিএনপির কাছে আমরা লিখিতভাবে জানাবো এবং এসবের সুষ্ঠ বিচার চাইবো। আমরা শান্তি চাই।

ঘটনার পর থেকে বুধবার দিন ব্যাপী বারৈয়ারহাট মহাসড়কে অবস্থান ছিল পৌর বিএনপির আহ্বায়ক দিদারুল আলম মিয়াজীর অনুসারীদের দখলে। বিকালে প্রায় কয়েকশ অনুসারীদের নিয়ে মহাসড়ক এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

 জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল হারুন জানান, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়ে মাঈনুদ্দিন লিটন নামে এক বিএনপি নেতা মুঠোফোনে জানিয়েছেন। তবে কেউ এখনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করে নাই। 

আরও খবর

Sponsered content