প্রতিনিধি ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪:০৬:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিনের ক্ষমতার পাওয়ার দেখিয়ে নিজের স্ত্রীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালাতেন মিরসরাই মডেল মসজিদের খতিব মাওলানা আরিফুল ইসলাম। নির্যাতনের ধকল সইতে না পেরে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন স্ত্রী সায়মা বিনতে সিদ্দিক।বিচ্ছেদের পর আরিফুল ইসলাম নিজের সাবেক প্রেমিকাকে বিয়ে করলেও প্রথম স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করতে ও অনিহা প্রকাশ করেন।
অভিযোগ রয়েছে শ্বশুরের বাড়ি নির্মাণের ১২ লক্ষ টাকা আত্মসাতের। এছাড়া মডেল মসজিদের খতিব হওয়ায় ও ইউএনও মাহফুজা জেরিনের সাথে সখ্যতা থাকায় স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের ব্যবহার করে আরিফুল ইসলাম নিজের শ্বশুরকে ভয় ভীতি দেখিয়ে শ্বশুরের বাড়ি তৈরির ৬০ লক্ষ টাকার হিসাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। শশুর প্রবাসী হওয়ায় ও তার আর কোন ছেলে সন্তান না থাকায় আরিফের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন তারা। শ্বশুরের অবর্তমানে শাশুড়ি ও স্ত্রীকে কোন ঠাসা করে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
খবর নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় অনুসারী হওয়ায় উপযুক্ত যোগ্যতা না থাকলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় মডেল মসজিদের খতিব হিসেবে অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত হন আরিফুল ইসলাম। খতিব হিসেবে নিয়োগের পরই ইসলামী কুরআন ও সুন্নাহ কে অবজ্ঞা করে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে মসজিদের মিম্বার থেকে ভ্রান্ত আকিদা প্রচার করতে থাকেন মুসল্লিদের মাঝে। ইসলামে কঠোরতার সাথে নিষিদ্ধ সুদের কর্মকান্ডে মুসল্লিদের উৎসাহিত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সময়ের ব্যবধানে তোষামোদীর মাধ্যমে ইউএনও মাহফুজা জেরিনের পছন্দের তালিকায় ও স্থান করেন তিনি।
ইউএনও মাহফুজার সন্তানকে আরবি শিক্ষার অযুহাতে তার বাসায় যাতায়াতের সুযোগে ইউএনও এর পাশাপাশি তার স্বামীর সাথেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন। ইউএনওর সন্তানকে আরবি শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক টুকিটাকি কাজ বাজার সদাই সহ বিভিন্ন কাজেও সহায়তা করেন তিনি। এতে ইউএনও মাহফুজা জেরিনের ঘনিষ্ঠ জনে পরিণত হন আরিফুল। ইউএনওর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের পাওয়ার দেখিয়ে স্ত্রীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালাতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
ওয়াজ মাহফিল ও দাওয়াতের বাহানা দেখিয়ে শুক্র ও শনিবার ছাড়া রাতে স্ত্রীর সান্নিধ্যে থাকতেন না বলেও অভিযোগ স্ত্রীর। ফোনে অজানা নারীর সাথে দীর্ঘ আলাপে বাঁধসাদলে স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন। স্ত্রী সায়মা বিনতে সিদ্দিক এই প্রতিবেদককে জানান, ২০২২ সালের ২১শে ডিসেম্বর নিজ এলাকা মিরসরাই উপজেলার ১০ নং মিঠানালা ইউনিয়নের সৈয়দপুরের দীন ইসলামের পুত্র মডেল মসজিদের খতিব মাওলানা আরিফুল ইসলামের সাথে সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে ৭ লক্ষ টাকা ও ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার মোহরানায় বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন খুবই সুখে শান্তিতে সংসার চলছিলো। এর মধ্যেই আমার পিতা তার কর্মস্থল সাউথ আফ্রিকা চলে যান। সাউথ আফ্রিকা যাওয়ার পর আরিফুলের উপর আস্থা রেখে তার তত্ত্বাবধানে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ভবনের নকশা থেকে শুরু করে মালামাল ক্রয় সহ সকল আনুসাঙ্গিক কাজ আরিফুল দেখাশোনা করতো।
বাড়ি তৈরির জন্য প্রবাস থেকে আমার পিতা আমার মায়ের মাধ্যমে আরিফুল কে ধাপে ধাপে ৬০ লক্ষ টাকা দেয়। ওই টাকা আরিফুল ভবন নির্মাণের কাজে যথাযথ ব্যয় না করে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে। আমার বাবা আবু বকর সিদ্দিক প্রবাস থেকে ছুটিতে দেশে এসে তার কাছে টাকার হিসাব চাইলে সে ইউএনওর ভয় দেখিয়ে হিসাব দেয়া থেকে বিরত থাকে। তার সাথে টাকার হিসাব নিয়ে বসতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে মডেল মসজিদে বৈঠকের আয়োজন করে। মডেল মসজিদে গেলে আমার বাবাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হিসাব না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়।
এসব করতে করতে আরিফ স্ত্রী হিসেবে আমার সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে তার মানসিক যন্ত্রণা থেকে নিজেকে অনিরাপদ রাখতে পারিবারিক ভাবে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হই। বিচ্ছেদের পর দেন মোহরের টাকা, বকেয়া থাকা ৩ ভরি স্বর্ণালঙ্কার পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করে লেবাসধারী প্রতারক ভন্ড মাওলানা আরিফুল। বাবা প্রবাসে থাকায় ও পরিবারে কোন পুরুষ সদস্য না থাকায় ইউএনও মাহফুজা জেরিনের হুমকি দেয়ায় আমরা ভয়ে কারো কাছে বিচার চাইতে পারি নাই। শুনেছি আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর প্রতারক আরিফুল আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল।
দীর্ঘ এক মাস পলাতক থাকার পর ইউএনও মাহফুজা জেরিনের সহায়তায় মডেল মসজিদে পুনরায় খতিব হওয়ার জন্য তদবির চালাচ্ছে ও আওয়ামী লীগের পরীবর্তে অন্য একটি রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়েছে। তাই মিরসরাইয়ে প্রশাসন ও সচেতন মহলের নিকট আকুল আবেদন এই প্রতারককে মড়েল মসজিদ থেকে প্রত্যাহার করে যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন ও অভিযুক্ত মডেল মসজিদের খতিব আরিফুল ইসলামের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।