প্রতিনিধি ১২ এপ্রিল ২০২০ , ৬:৩০:১৪ প্রিন্ট সংস্করণ
রফিকুল হাসান ফিরোজ, রাজশাহী : করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে রাজশাহীকে অঘোষিত লকডাউন করে রেখেছে প্রশাসন। এই লকডাউন শুরু হবার পর থেকেই চিরচেনা এই শহরের জনজীবনে বড় ধরনের পরির্বতন দেখা দিয়েছে। মহানগরীর সবখানেই বিরাজ করছে থমথমে ভাব। মহানগরীতে বাইরে থেকে কেউ যেন প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য নগরীর প্রবেশমুখগুলোতে পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ব্যারিকেড। এছাড়াও মহানগরীর দরগাপাড়াসহ কয়েকটি জায়গায় স্থানীয় বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগেই বাঁশ দিয়ে ঘিরে এলাকা লকডাউন করে রেখেছেন।
এদিকে রাস্তাঘাটসহ মহানগরীর সবখানই দেখা যাচ্ছে ফাঁকা। লোকজন প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না। কেউ বের হলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে দিতে হচ্ছে নানা প্রশ্নের উত্তর। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষই মাস্ক ব্যবহার করেই প্রয়োজনীয় কাজ সারতে বাইরের বের হচ্ছেন।
তবে বাইরের বের হওয়া লোকের সংখ্যা খুব কম। মহানগরীর সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানই দেখা যাচ্ছে জনমানবমশূন্য। কোথাও দুই-তিনজনের অধিক লোকজন আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি অটোরিকশায় ওঠার ক্ষেত্রেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে নিয়ম। কোন অটোরিকশায় দুইজন উঠলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের নামিয়ে দিচ্ছেন।
রাজশাহীকে বলা হয় শিক্ষানগরী। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে থাকে এই মহানগরী। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই। তাই এই শিক্ষানগরীর এখন হয়ে পরেছে শিক্ষার্থীশূণ্য। প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গনে কিংবা রাস্তায় নেই শিক্ষার্থীদের ভিড়।
রাজশাহী শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন রকমের দোকান। মোড়ে মোড়ে দেখা যায় চায়ের দোকান। এই দোকানগুলোতে সবসময় ভিড় লেগেই থাকে। তরুণ থেকে বৃদ্ধরা পর্যন্ত এই চায়ের দোকানগুলোতে ভিড় জমান। অথচ এই দোকানগুলো এখন বন্ধ। তাই লোকজনের ভিড় দেখা যাচ্ছে না।
বিকেল হলেই মহানগরীর টি-বাঁধ, আইবাঁধ, শহীদ কামরুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান কিংবা পদ্মার পাড়ে ভিড় জমায় তরুণ-তরুণীরা। বিকেল বেলায় লোকজনের ভিড় থাকে চোখে পাড়ার মতো। কেউ বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেন। কেউবা তার ছোট সন্তান নিয়ে বেড়াতে আসেন এই জায়গাগুলোতে। লকডাউনের জন্য এই এই জায়গাগুলোতে নেই কোন ভিড়। জনমানবশূণ্য হয়ে পড়েছে মহানগরীর এই গুরুত্বপুর্ণ স্থানগুলো।
এমনকি ভিড়শূন্য হয়ে পরেছে মহানগরীর কাঁচা বাজারগুলো। এই কাঁচা বাজারগুলোতে সবসময় ভিড় লেগে থাকলেও এখন দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। দোকানীরা সামান্য কিছু পণ্য নিয়ে বসে আছেন। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা খুব কম। ভিড়হীন হয়ে পড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারগুলোও। ক্রেতা না থাকায় এই দোকানীরা পড়েছেন নানা সমস্যায়। তেমনি সমস্যায় পড়েছেন নগরীর অটোরিকশা চালকরা। লকডাউনের প্রভাব পড়েছে তাদের উপরেও। লকডাউনের জন্য লোকজন বের না হওয়ায় তারা পড়েছেন বিপাকে।
মহানগরীর সাহেববাজারে অটোরিকশা নিয়ে বসে ছিলেন হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, লোকজন খুব কম। বসে থাকলে সংসার চলে না বলেই এই অবস্থায় বের হয়েছি। কিন্তু যে টাকা পাচ্ছি সেই টাকা দিয়ে সংসার চলেই না। কখনও কখনও অটোরিকশা মালিকের জমার টাকাও ওঠে না।
মহানগরীর ল⊃2;ীপুর ওষুধ নিতে এসেছিলেন আবির হক। তিনি বলেন, আমার মায়ের জন্য ওষুধ নিতে এসেছিলাম। এভাবে চলাচল করা খুব কষ্টকর ব্যাপার। অনেকক্ষণ পর অটোরিকশা পেয়েছি। খুব তাড়াতাড়ি পরিস্থিতির উন্নতি হলেই সবার জন্য মঙ্গল।