প্রতিনিধি ৫ নভেম্বর ২০২২ , ৯:০৫:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ
মোঃ শহীদুল ইসলাম,বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:
প্রধানমন্ত্রীর কাছে শহীদ সার্জেন্ট আলতাফ উদ্দিনের পরীবারের আকুতি চান স্থায়ী আবাসনের নিশ্চয়তা।
“সার্জেন্ট আলতাফ উদ্দিন”মুক্তিযুদ্ধে তার পরিচয় নাম্বার ১৩০৮৪৯১, একজন শহীদ বীর মুক্তিযুদ্ধা।বর্তমানে এই শহীদ পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবত বসবাস করছেন বান্দরবান জেলার লামা উপজেলা,চম্পাতলী এলাকায়।
১৯৩৭ সালেের সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখে নোয়াখালীর,হাতিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এই বীর মুক্তিযুদ্ধা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কুমিল্লা ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এর ৬ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এর অধিনে ২নং সেক্টর হতে মহান মুক্তিযুদ্ধ অংশগ্রহণ করেন।যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শহীদ হন।নিজ বাড়ি নোয়াখালীর হাতীয়া উপজেলায় হওয়া সর্তেও মেঘনার করাল গ্রাস কেড়ে নেয় তার পরীবারের মাথা গোজার শেষ আশ্রয় টুকু।
মুক্তি যোদ্ধা শহীদ সার্জেন্ট আলতাফ উদ্দিনের স্ত্রী নুরেন নাহার বেগম,দুই পুত্র ও দুই কন্যা মোঃ আফছার উদ্দিন,মোঃ আকতার উদ্দিন,নাসিমা আক্তার,পারভীন আক্তার কে নিয়ে শহীদ মুক্তি যোদ্ধার পরীবারের সদস্যরা বান্দরবানের লামা উপজেলায় ভিটামাটি হীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন শুরু করে।
ভীটেমাটি হীন অসহায় শহীদ পরিবারের মাথা গোজার আশ্রয়ের জন্য তৎকালীন লামা পৌরসভা মেয়র বরাবরে ১০ই জুন ২০০৯ সালে উপজেলার চম্পাতলী সাবেক গজলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পরিত্যক্ত ভবনটি সংস্কার পূর্বক, মাসিক ভাড়ার বিনিময়ে পরিত্যক্ত বাড়িটি বরাদ্দ পাওয়ার আবেদন জানায় শহীদ পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান আকতার উদ্দিন তপন।
আবেদনের প্রেক্ষিতে ১লা নভেম্বর ২০০৯ সালে লামা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ তাজুল ইসলামের সাথে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ উদ্দিনের দ্বিতীয় পুত্র মোঃ আকতার উদ্দিন তপন এর একটি তিন বছর মেয়াদি চুক্তি সম্পাদিত হয়।একই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালের ২০শে এপ্রিল তৎকালীন লামা পৌর মেয়র আমির হোসেনের সাথেও ২য় মেয়াদে ১০ বছরের জন্য আরেকটি চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয়,চুক্তি সম্পাদনের সময় ১ম সাক্ষী হিসেবেও নাম পাওয়া যায় লামা পৌরসভার বর্তমান মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলামের।সরজমিনে দালিলিক কাগজপত্র থেকে যানজায় এই দীর্ঘস্থায়ী চুক্তির মেয়াদের ১ম হালনাগাদ হওয়ার কথা রয়েছে জানুয়ারি ২০২৪ সালে।
অভিযোগ উঠেছে বীর মুক্তিযুদ্ধা শহীদ পরিবারের এই সদস্যদের পৌরসভার কাছ হতে দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তিতে ভাড়া নেয়া বাড়ি হতে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাদেরকে অন্য কোথাও পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা না করেই জোর পূর্বক উচ্ছেদ করার পায়তারা করছেন লামা পৌরসভার বর্তমান মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম।
এ বিষয়ে শহীদ পরিবারের সদস্য বীর মুক্তিযুদ্ধা আলতাফ উদ্দিন এর পুত্র শিক্ষক আকতার উদ্দিন এর স্ত্রী রোকেয়া সুলতানা জানায় কয়েকদিন আগে স্থানীয় কাউন্সিলরের করা একটি চুরির মামলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ উদ্দিনের ছেলে স্কুল শিক্ষক এম আকতার উদ্দিন এখন জেলে আছেন।
বাড়িতে ছেলে কোন সদস্যের অনুপস্থিতিতে পৌরসভা হতে মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলর সহ এসে তাদেরকে বাসা খালি করে দেয়ার কথা বলে,বাড়ির সামনে দেয়ালে টাঙ্গানো শহীদ পরিবার এর একটি পরিচয় ফলক ও তারা তুলে নিয়ে যায়,
তারা জানায় এখানে উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে মুরং কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।তাই তাদের এখনি বাড়ি খালি করে দিতে হবে।
ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন স্কুল শিক্ষক আকতার উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধার পরীবারের সদস্যরা সহ এই পরিত্যক্ত বাড়িটি মেরামত করে থাকছেন,সম্প্রতি একটি মহল তাকে বানোয়াট একটি মামলায় জড়িয়ে তার পরিবারের সদস্যদের বাড়ি ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেছে বলে শুনেছি যা কখনই কাম্য নয়।
এ বিষয়ে লামা পৌরসভার সাবেক মেয়র আমির হোসনে বলেন এটা সত্যি যে,আমি মেয়র থাকাকালীন শিক্ষক আকতার উদ্দিন কে বীর মুক্তিযুদ্ধার সন্তান হিসেবে পৌরসভার অনুকূলে থাকা পরিত্যাক্ত একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে সে মেরামত করে থাকতে পারবে বলে একটা চুক্তি করেছি,বর্তমান মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম তখন তাদের পক্ষে আমাকে সুপারিশও করেছিলো।ঘরটি কোন কাজেই আসতো না বিধায় মুক্তিযুদ্ধার পরীবারের একটা মাথা গোজার ঠাই দেয়াটাকে জরুরি মনে করেছি,তবে মৌখিক ভাবে তাকে বলাও ছিলো যদি পৌরসভার কোন প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে তা ফিরিয়ে দিতে হবে।
শহীদ পরিবারের নেয়া পৌরসভার অনুকূলের সেই পরিত্যক্ত বাড়ির জায়গায় মুরং কমপ্লেক্স নির্মাণ এর বিষয়ে উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন ইয়াসির আরাফাত এর সাথে যোগাযোগ করলেও ফোন না ধরায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নি।
এ বিষয়ে লামা পৌরসভার বর্তমান মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম এর সাথে কথা বল্লে তিনি জানান সাবেক মেয়র আমির হোসনে ২০১২ সালে পৌর পরিষদের সভায় পৌরসভার অনুকূলে থাকা বাড়িটি অবৈধ দখলমুক্ত করার জন্য পৌর পরিষদের নিকট একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।২০১৩ সালের ৭ই জুলাই শহীদ পরিবারের সন্তান শিক্ষক আকতার উদ্দিন কে বাড়ি খালি করার জন্যে নোটিশও প্রদান করেছিলেন সাবেক মেয়র।পরবর্তীতে আমি ২০১৬ সালে পৌর মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পর তৃতীয় পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় আমরা অবৈধভাবে দখলকৃত জায়গা দখল মুক্ত করে সেখানে পৌরসভার কিছু আয়বর্ধক স্থাপনা নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করি।শহীদ পরিবারের সদস্য শিক্ষক আকতার উদ্দিন এর সাথে হওয়া ১০ বছর মেয়াদি চুক্তিপত্রের বিষয়ে তিনি বলেন তার এই চুক্তিটি সম্পুর্ণ অবৈধ,এ ধরনের চুক্তিটি পৌরসভা করেনি, চুক্তি সম্পাদনে সুপারিশ করেন নি সাবেক মেয়র আমির হোসনের কাছে এমনটাই দাবী করেন লামা পৌরসভার বর্তমান মেয়র মোঃ জহিরুল ইসলাম।
এ ধরনের পদক্ষেপে এলাকার সুশীল সমাজ ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা চরম অনিরাপত্তায় তাদের দিন অতিবাহিত করছে,এই বুঝি মাথার উপর থেকে শেষ ঠিকানা টুকুও কেড়ে নেয়া হবে,উচ্ছেদ আতংকে কাটছে তাদের প্রতিটি দিন।সমস্যা সমাধানে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন বীর মুক্তিযুদ্ধা শহীদ সার্জেন্ট আলতাফ উদ্দিন এর পরীবারের সদস্যরা।