খুলনা

পাইকগাছায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প

  প্রতিনিধি ১৬ নভেম্বর ২০২৩ , ৩:২৫:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ

পাইকগাছায় বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প

“খুলনার পাইকগাছায় গ্রামীণ জনপদে এক সময় বাঁশঝাড় ছিল না এমনটা কল্পনাও করা যেতো না। যেখানে গ্রাম সেখানে বাঁশঝাড় এমনটিই ছিল স্বাভাবিক।বাড়ির পাশে বাঁশঝাড় বেত বনের ঐতিহ্য গ্রাম বাংলার চিরায়ত রূপ। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিক পণ্যের আধিপত্যের করনে জনজীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্পের বিভিন্ন পণ্য।

এক সময় গ্রামীণ জনপদে বাংলার ঘরে ঘরে তৈরি হতো বাঁশ ও বেতের হাজারো পণ্য সামগ্রী। ঘরের কাছের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ ও কুঞ্চি কেটে গৃহিণীরা তৈরী করতেন হরেক রকম জিনিস। অনেকে এ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। দরিদ্র পরিবারের অনেকের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিলো এগুলো।

কিন্তু আজ কটি গ্রামে এ হস্তশিল্পটি উপার্জনের পেশা হিসেবে বেঁচে আছে তা ভাবনার বিষয়। এ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই বাপ-দাদার আমলের পেশা ত্যাগ করে অন্য পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন বা হচ্ছেন। আগে বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসের কদর ছিল। চেয়ার, টেবিল, বইয়ের সেল্ফ, মোড়া, কুলা, ঝুড়ি, ডোল, চাটাই থেকে শুরু করে এমনকি ড্রইং রুমের আসবাবপত্র তৈরিতেও বাঁশ ও বেত প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করা হতো। এ ছাড়া মাছ ধরার পলো, হাঁস, মুরগীর খাঁচা, শিশুদের ঘুম পাড়ানোর দোলনা এখনো গ্রাম অঞ্চলের বিভিন্নস্থানে ব্যাপকভাবে সমাদৃত।

একসময় পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বিপুল পরিমাণে এসব বাঁশ ও বেতের সামগ্রী তৈরী হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান হয়ে যেতো। এখন সচরাচর গ্রামীণ উৎসব বা মেলাতেও বাঁশ ও বেতজাত শিল্পীদের তৈরি উন্নতমানের খোল, চাটাই, খালুই, ধামা, দোয়াড়, আড়ি, টোনা, আড়, হাপটা, মোড়া, বুকসেলফ চোখে পড়ে খুব কম। যেখানে তালপাতার হাত পাখারই কদর নেই, সেখানে অন্যগুলো তো পরের কথা। প্রান্তিক পর্যায়ে বিদ্যুৎ সুবিধা যেমন হাত পাখার চাহিদা কমিয়েছে তেমনি মৎস্য শিকার, চাষাবাদ, ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র সকল ক্ষেত্রেই কমেছে বাঁশ আর বেত জাতীয় হস্তশিল্পের কদর।

প্রকৃতপক্ষে বাঁশ বেতের স্থান অনেকটাই প্লাস্টিক সামগ্রী দখল করে নিয়েছে। তাছাড়া এখন বাঁশ ও বেতের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এর দামও বেড়ে গেছে। ফলে বাঁশ ও বেতের সামগ্রীর ব্যয়ও বেশি হচ্ছে। সৌখিন মানুষ ঘরে বাঙালির ঐতিহ্য প্রদর্শনের জন্য বাঁশ বেতের সামগ্রী বেশি দাম দিয়ে কিনলেও মূলত ব্যবহারকারীরা বেশি দাম দিতে চান না। স্বল্প আয়ের মানুষেরা সমিতি থেকে সুদের বিনিময়ে টাকা নিয়ে বাঁশ ও বেতজাত দ্রব্যসামগ্রী তৈরি করে বিক্রি করলেও এতে তাদের খরচ পোষায় না। এর ফলে তারা অন্য পেশায় আকৃষ্ট হচ্ছে।

উপজেলার গোপালপুর গ্রামের নির্মল বিশ্বাস বলেন বর্তমানে বাঁশ ও বেতের অপ্রতুলতার কারনে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বেশি দামে বাঁশ ও বেত কিনে পণ্য তৈরি করে লাভ খুবই কম হচ্ছে। সেকারনে বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হচ্ছে।বিজলী রানীদাস,বলেন,প্রকৃতপক্ষে বাঁশ ও বেতের সামগ্রী আমরা যারা তৈরি করছি আমাদেরকে সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও’র সহায়তা করা অত্যন্ত জরুরী। বাঁশ ও বেতের সামগ্রীকে টিকিয়ে রাখতে হলে এর পেছনের মানুষগুলোকে আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে তাদের পেশাকে বাঁচাতে হবে।

পাইকগাছা বাজারে বাঁশ ও বেতের পণ্য বিক্রেতা, বিশ্বজিত দাস,জানান, প্লাস্টিক পণ্যের সহজলভ্যতার কারনে বাঁশ ও বেতের পণ্যের কদর কমেছে। কিছু সৌখিন ও নিন্মবিত্ত লোকের কারনে কোন রকমে এ শিল্প টিকে আছে। তবে আমার মনে হয় অচিরেই বাঁশ ও বেত শিল্প এএলাকা থেকে হারিয়ে যাবে।পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর জানান, বাঁশ ও বেত শিল্প বাঁচাতে হলে এর কারিগরদের বিনা সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।এবং নতুন নতুন পণ্য তৈরিতে প্রশিক্ষন দিতে হবে। অন্যথায় এসব সুন্দর বাঁশ ও বেতের হস্তশিল্প একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by