খেলাধুলা

জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য ‘টিম ডিরেক্টর’ সুজনের ‘ফর্মুলা’

  প্রতিনিধি ৮ নভেম্বর ২০২১ , ৫:০৯:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

সুজন বলেছেন, দল গোছানোর একটা ‘ফর্মুলা’ নিয়ে কাজ করবেন তিনি। - ছবি : সংগৃহীত

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

চলমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ পুরুষ জাতীয় দলের ভরাডুবির পর এবার আনকোরা একটি পদ তৈরি করে তাতে খালেদ মাহমুদ সুজনকে নিয়োগ দিয়েছে ক্রিকেট বোর্ড।

সাবেক জাতীয় দলের খেলোয়াড় এবং বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাথে দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট খালেদ মাহমুদ সুজন এরই মধ্যে ‘টিম ডিরেক্টর’ নামের এই নতুন দায়িত্বে কাজও শুরু করে দিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন।

কিন্তু জাতীয় দল যখন বিশ্বকাপের মতো আসরে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরল, ঠিক তখনই এমন একটি পদ সৃষ্টির প্রয়োজন পড়লো কেন?

ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে পুরুষ দলে অনেকটা এরকম একটি পদে ছিলেন অ্যান্ড্রু স্ট্রস। অবশ্য তার পদের নাম ছিল ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট। তার কর্মপরিধি ও ক্ষমতা ছিল বিরাট।

দল নির্বাচন থেকে শুরু করে ক্রিকেট কাঠামো কেমন হবে, খেলার স্ট্রাটেজি কী হবে – সব কিছুতেই মোটামুটি তার হাত থাকতো।

দায়িত্ব নিয়েই তিনি তৎকালীন কোচ পিটার মুরসকে বরখাস্ত করেন। তার আমলেই ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলে আমূল পরিবর্তন আসে।

এমন একটি দল তিনি সাজান যার একাদশে থাকা সব সদস্যই কমবেশি ব্যাটিং পারে।

এর ফলাফলও পেয়েছে ইংল্যান্ড – ২০১৫ থেকে দলটিকে নিয়মিত ৩৫০+ রান তুলতে দেখা গেছে, আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয় করেছে এবং এবারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেও উঠেছে।

২০১৮ সালে স্ট্রস স্ত্রীর স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করলে তার স্থলাভিষিক্ত হন অ্যাশলে জাইলস।

খালেদ মাহমুদ সুজনের কার্যপরিধি এমন কিছু হবে কী না তা নিয়ে বোর্ড এখনো মুখ ফুটে কিছু বলেনি, তবে বিবিসিকে সুজন বলেছেন, দল গোছানোর একটা ‘ফর্মুলা’ নিয়ে কাজ করবেন তিনি।

অবশ্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বোর্ড কর্মকর্তা বলছেন, টিম ডিরেক্টরের কাজ হবে মূলত কোচ ও জাতীয় দলের সাথে বোর্ড ও নীতিনির্ধারকদের একটা মেলবন্ধন ঘটানো।

সম্প্রতি বাংলাদেশের ক্রিকেটে ক্রিকেটার ও বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে কথার একটা দূরত্ব দেখা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে যেটার ছাপ পড়েছে। বিশেষত মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরে যাবেন কী না, সেটা নিয়ে একধরনের দূরত্ব দেখা গিয়েছিল বোর্ডের সাথে।

জিম্বাবুয়েতে একটি টেস্ট ম্যাচ চলাকালে মাহমুদউল্লাহকে গার্ড অব অনার দিয়েছিল সতীর্থরা, কাগজেও বেরিয়েছিল যে মাহমুদুল্লাহ অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন।

কিন্তু পরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছিলেন, এ নিয়ে কিছু জানেন না তিনি, তাকে আগেভাগে কিছু বলেওনি কেউ।

চলমান বিশ্বকাপেও দেখা গেছে, ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে নানারকম বক্তব্য দিচ্ছেন, আবার ম্যাচ-পূর্ব বা পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে গিয়ে কোচ বা খেলোয়াড়েরা ভিন্ন রকমের বক্তব্য দিচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বোর্ড কর্মকর্তা বলছেন, ‘এই ফাঁকা জায়গাটা পূরণ করাই হবে টিম ডিরেক্টরের কাজ।’

খালেদ মাহমুদ সুজনের মতে, এই দলটার প্রত্যেকটা ক্রিকেটার সামর্থ্যবান।
খালেদ মাহমুদ যা বলছেন
বিবিসি বাংলাকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে খালেদ মাহমুদ সুজন যা বলেছেন, তাতে ধারণা পাওয়া যায় যে তিনি দল গোছানোর দায়িত্বই পেয়েছেন।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শোচনীয় ব্যর্থতাকে ‘একটা ধাক্কা’ বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, একটা দল গোছাতে এক বা দেড় বছর সময় লাগেই।

‘এটা এমন না যে আমি এলাম বা কেউ এলো, রাতারাতি সব বদলে দিল। এটা একটা প্রক্রিয়া।’

তাই দলের চেয়ে একটা ‘ফর্মুলা’ নিয়ে কাজ করার প্রতিই জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে শুধু মারতে জানার ক্রিকেট না। সেটা হলে ওয়েস্ট ইন্ডিজই চ্যাম্পিয়ন হতো।’

‘পরিকল্পিত ঝুঁকি’ নেয়ার কথা বলেছেন তিনি।

টপ অর্ডার ব্যাটিংয়ে কিছু পরিবর্তন আসার কথা গণমাধ্যমে এসেছে।

কিন্তু এই দলের সদস্যদের ‘প্রত্যেকেই সামর্থ্যবান’ বলে মনে করেন তিনি। এই দলের কাউকে ‘ফেলে’ দেবার কথাও ভাবছেন না তিনি।

খালেদ মাহমুদ সুজন মনে করেন, ‘ঢালাও পরিবর্তন দিয়ে কিছু হবে না।’

আর ১০ দিন পরেই ঢাকায় পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এর মধ্যে যদি দলে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসা হয় তবে ‘খুব বেশি পার্থক্য গড়বে না’ বলে মনে করেন খালেদ মাহমুদ সুজন।

তিনি বলেছেন, সামগ্রিক পরিবর্তন ছোট ছোট সময়ে সম্ভব না। ‘আমাদের সমন্বয়টা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো নিয়েই কাজ করবো।’

বাংলাদেশের সাবেক এই ক্রিকেট অধিনায়ক এর আগেও বাংলাদেশ দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন।

দীর্ঘদিন বাংলাদেশের আবাহনী ক্লাবের কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন। এই ক্লাবেই বাংলাদেশের জাতীয় দলের অধিকাংশ ক্রিকেটার খেলেছেন।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার টি-টোয়েন্টি লিগেও ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

সূত্র : বিবিসি

আরও খবর

Sponsered content