দেশজুড়ে

ঘুমধুম,তুমব্রু সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে

  প্রতিনিধি ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৫:৩৪:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

ঘুমধুম,তুমব্রু সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম,তুমব্রু বাংলাদেশ – মিয়ানমার সীমান্ত এখন অনেকটাই শান্ত।সীমান্তের গোলাগুলির আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্র ও আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে চলে যাওয়া স্থানীয় বাসিন্দারা ফিরেছেন গ্রামে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে গত শনিবার রাতে থেমে থেমে গোলাগুলি ও ভারী গোলাবর্ষণ হয়েছিল।

তবে গতকাল রাতে কোনো ধরনের গোলাগুলির শব্দ শুনেনি স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘সীমান্তের পরিস্থিতি আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হচ্ছে,তবে মাঝে মধ্যে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে গত ২৭ জানুয়ারি থেকে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সাথে বিদ্রোহী আরকান আর্মির তুমুল সংঘর্ষে সীমান্তে থেমে থেমে গোলাগুলি ও বোমার আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল।

সীমান্তের ৩৩নম্বর পিলার, ঘুমধুম ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ড তুমব্রু পশ্চিম কুলে মিয়ানমার অভ্যন্তরে গোলাগুলির আওয়াজে কেঁপে উঠে সীমান্ত লাগুয়া গ্রাম গুলো। গোলাগুলির শব্দে অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয় জনসাধারণ। গোলাগুলির ঘটনায় আতঙ্কে ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, কোনারপাড়া, ভাজাবনিয়া ও বাইশফাঁড়ি এলাকার শত শত পরিবার যে যেদিকে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জনসাধারণের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় টি আশ্রয় কেন্দ্রে হিসেবে ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় গ্রহণ করে ২৮ টি পরিবারের ১৪০ জন সদস্য যার সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ।

পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষিতে গত ২৯ জানুয়ারি সীমান্তের কাছাকাছি ১টি মাধ্যমিক ও ৫ টি প্রাথমিক সহ ৬ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ। এদিকে সীমান্তে বিজিপি ও আরকান আর্মির সাথে গোলাগুলির সময় নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের ঘুমধুমের জলপাইতলি এলাকায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের ডেকিবুনিয়া ক্যাম্প হতে ছোড়া মর্টারশেল এর আঘাতে হোসনে আরা (৪৫) নামে একজন নারী বাংলাদেশি নাগরিক এবং নবী হোসেন (৬৫) নামে একজন রোহিঙ্গা শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এছাড়া আহত হয়েছেন চারজন কয়েকজন।

এছাড়াও পরবর্তীতে তুমব্রু সীমান্ত এলাকায় পর পর তিনটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেলও উদ্ধার করে বিজিবি যা সেনাবাহিনীর বোমা বিশেষজ্ঞ দল নিষ্ক্রিয় করে। চলমান মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) ও আরকান আর্মির সাথে চলামান সংঘর্ষে টিকতে না পেরে এর প্রেক্ষিতে গত ৭ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু বিওপি ও ঘুমধুম সীমান্ত বিওপি পরিদর্শন করেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

এসময় তিনি সাংবাদিকদের জানান সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদা তৎপর রয়েছে। এসময় তিনি সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সীমান্তে উদ্ভূত যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) কে সদা তৎপর থাকার নির্দেশ দেন। মূলত বিজিবি মহাপরিচালকের সীমান্ত পরিদর্শনের পরের দিন হতেই পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসে ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত।

এদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি তুমব্রু লেফট ক্যাম্প ও ঢেঁকিবনিয়া সীমান্ত চৌকি,তুমব্রু রাইট ক্যাম্প বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সঙ্গে বিজিপি ও সেনাবাহিনীর তীব্র লড়াইয়ে আরাকান আর্মি দখল করে নেয়। আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে বিজিপি সদস্য, সামরিক ও বেসামরিক ৩৩১ জন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত ও উখিয়া কক্সবাজার উখিয়া সীমান্ত দিয়ে পালিয়ে আসেন। পরে তারা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে যান। বর্তমানে তারা বিজিবির তত্ত্বাবধানে রয়েছেন।

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতির পরই বাংলাদেশে অবস্থানকারী মিয়ানমারের বিজিপি সদস্যদের সে দেশে জাহাজে করে নিয়ে যাওয়া হবে। সীমান্তে বসবাসকারী জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবং স্থানীয় প্রশাসন কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

এদিকে সীমান্ত পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী,বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন, পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন এবং সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সীমান্ত পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম।

এদিকে বর্তমানে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে আরাকান আর্মির দখল করা বিজিপি ক্যাম্প গুলো থেকে, আরএসও এবং নতুন গজিয়ে উঠা আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি বা এআরএ সদস্যদের সাথে আধিপত্য বিস্তার কে কেন্দ্র করে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাই প্রায় সময় গোলাগুলি ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে ঘুমধুম,তুমব্রু সীমান্তের গ্রাম গুলোতে।

এদিকে সীমান্ত নিরাপত্তায় টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি বান্দরবান সীমান্তের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নিরাপত্তা চৌকিগুলোতে আর কে-৩ কোর্সার অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল (এটিজিএম) মোতায়েন করা হয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবস্থায় আছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ(বিজিবি)।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by