বরিশাল

টানা বর্ষণে বরগুনা জেলার জন-জীবন বিপর্যস্ত!

  প্রতিনিধি ২৪ অক্টোবর ২০২০ , ১:৫৫:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

বরগুনা সংবাদদাতা:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও চার দিনের ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে বরগুনা সদর, আমতলী ও তালতলী উপজেলাসহ গোটা উপকূলীয় এলাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সুইচগেট ও ড্রেনগুলো দিয়ে পর্যাপ্ত পানি নিস্কাশন না হওয়ায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে পৌরশহরসহ উপজেলা গুলোর প্রত্যন্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।

সর্বত্র পানিতে থৈ-থৈ করছে। এতে দূর্ভোগে পড়েছে শহর ও গ্রামে বসবাসরত ভূক্তভোগী হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে ভেরীবাঁধের বাহিরে নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহে বসবাসরতরা বেশী দূর্ভোগে পড়েছে। তলিয়ে রয়েছে রোপা আমন ধানের ক্ষেতসহ মাছের ঘের, পুকুর ও পানের বরজ। ভারি বর্ষণ ও হালকা দমকা হাওয়ায়  উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গাছ উপড়ে পড়ে ও লাইনের তার ছিড়ে বন্ধ রয়েছে উপজেলা গুলোর বিদ্যুৎ সরবরাহ।

গত মঙ্গলবার থেকে ভারি বর্ষণ শুরু হয়ে (শুক্রবার) পর্যন্ত অব্যহত রয়েছে। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। বৃষ্টিতে কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন সকল উপজেলার অনেক শ্রমজীবী মানুষ।

আজ বরগুনার সদর উপজেলা, পাথরঘাটা পদ্মা, বেতাগী, বামনা ,তালতলী, আমতলী উপজেলার বিষখালী ও পায়রা, বলেশ্বর নদীতে প্রবল জোয়ারের চাপে টানা চারদিনের বৃষ্টিতে বরগুনা শহরের প্রধান সড়ক, আবাসন ও বরগুনা সদর উপজেলার ১নং বদরখালী ইউনিয়নের  ২নং ওয়ার্ডের উত্তর কুমড়াখালী কাটাখালী , মাঝেরচর, গুলিশাখালী,  পাতাকাটা ,ফুলঝুড়ি বাজার, ও পুলিশ ক্যাম্প, ফুলঝুড়ি স্বাস্থ্য ক্লিনিক সহ বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে প্রায় ১৪ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

  আমতলী পৌর শহরসহ উপজেলার কয়েকটি এলাকায় খোজ নিয়ে জানাগেছে, পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ও পানি নিঃস্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতায় পৌর শহরের  ৩, ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি স্থানে ভূক্তভোগী বাসিন্ধাদের বসতঘরগুলো তলিয়ে দূর্ভোগে পড়েছেন। পানিতে তলিয়ে রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মফিজ উদ্দিন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সরকারী কলেজ, মফিজ উদ্দিন বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বন্দর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুকুর ও খেলার মাঠ।

আমতলী পৌর শহরের ৩নং ওয়ার্ড মাজার রোড এলাকার বাসিন্ধা আঃ সালাম বলেন, আমাদের বসত ঘরের চারদিকে বৃষ্টির পানি জমে থই- থই করছে। রাস্তায় উঠতে হলে ভিজে ও  জুতা হাতে নিয়ে উঠতে হয়।
দু’উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, সুইচগেট ও কালভার্ট দিয়ে জমে যাওয়া বৃষ্টির পানি তেমন একটা নিঃস্কাশন না হওয়ায় উপজেলার অধিকাংশ রোপা আমন ধান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। রোপা আমনের মৌসুমে অনেক স্থানে ধানে শীষ ধরেছে। এমন ভারি বর্ষণে উপজেলার আবাদি আমনের ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এ ছাড়াও পানিতে তলিয়ে থাকায় শীতের আগাম রবি মৌসুমের চাষকৃত সবজি ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এছাড়া গত সপ্তাহে পানের লতা রোপন করা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের টেপুরা গ্রামের কৃষক ও স্কুল শিক্ষক মোঃ আবু সালেহ্র ২ বিঘা জমিতে ৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরী পানের বরজটিও ৩ দিনের অতি বর্ষণে ৩/৪ ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। তাছাড়া ওই এলাকাসহ দু’উপজেলার অনেক পানের বরজ পানিতে তলিয়ে রয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।

হলদিয়ার টেপুরা গ্রামের কৃষব আবু সালেহ বলেন, ৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পানের বরজটি আজ ৩ দিন ধরে ৩/৪ ফুট পানিতে তলিয়ে রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই ইউনিয়নের অধিকাংশ রোপা আমন ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে রয়েছে।

আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বলেন, রোপা আমনের মৌসুমে অনেক স্থানে ধানে শীষ ধরেছে। ২/১ দিনের দিনের মধ্যে পানি নেমে গেছে আমনের তেমন একটা ক্ষতি হবে না। তবে অতিবর্ষণে পানের বরজ ও ক্ষেতে থাকা রবি মৌসুমের সবজির ব্যাপক ক্ষতি হবে। এ বছর উপজেলায় প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে রবি মৌসুমের সবজি আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০ হেক্টর সবজি নষ্ঠ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানাগেছে, অতিবর্ষণে উপজেলার অধিকাংশ মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে।  জলাবদ্ধতায় মাছের ঘের ও পুকুর অনেক ক্ষতি হবে। বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে প্রায় ৫ শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর থেকে মাছ বের হয়ে গেছে বলে ভূক্তভোগী মালিকরা তাদের জানিয়েছেন। বাধ্য হয়ে তারা মাছের ঘের ও পুকুরের চারদিকে নেটজাল দিয়ে মাছ আটকে রাখার চেষ্টা করতেছেন বলে জানাগেছে।

আমতলীর তারিকাটা গ্রামের মাছের ঘের মালিক আঃ হাই তালুকদার ও তালতলীর কড়াইবাড়িয়া গ্রামের আজিজুল হক শিকদার জানান, অতিবর্ষণে ঘেরের পানি বৃদ্ধি পেয়ে তার ৪/৫টি মাছের ঘের থেকে অনেক মাছ বের হয়ে গেছে। তারা ঘেরের চারদিকে নেটজাল দিয়ে আছ আটকানোর চেষ্টা করছেন। এত তাদের লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হবে।

আমতলী পৌরশহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও গত ৩ দিন ধরে ভারি বর্ষণ ও হালকা দমকা হাওয়ায় দু’উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই বললেই চলে। বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের উপড়ে গাছ উপড়ে পড়ে ও লাইনের তার ছিড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানায় আমতলী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র সাব জোনাল অফিসের একটি সূত্র।

তালতলী উপজেলার কড়াইবাড়িয়া বাজারের ব্যবসায়ী আবুল হোসেন তালুকদার ও হলদিয়ার লিমন হাওলাদার বলেন, গত ৩ দিন ধরে আমাদের বাজারসহ গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্দ।বরগুনা সদর উপেলার ১নং বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শরীফ ইলিয়াস আহমেদ স্বপন জানান, উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। যেভাবে পানির চাপ ও বৃষ্টি তাতে রাতের মধ্যেই কয়েক কিলোমিটার বেড়িবাধ ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কা এবং পুরো ইউনিয়ন তলিয়ে যাবে।

এবিষয়ে পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী  প্রকৌশলী জানান, অতিবৃস্টি, লগুচাপের বাতাসের কারনে হঠাৎ পানি ভেড়ে গেছে তাই এই ভাঙ্গন হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by