প্রতিনিধি ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ , ৬:৫১:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার একমাত্র সরকারি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান দাউদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি ১৯৩১ সালে এলাকাবাসীর যৌথ প্রচেষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১৯ সালের জাতীয়করণ লাভ করেন। এদিকে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। বিদ্যালয়ে প্রায় ৮শর অধিক শিক্ষার্থী পাঠদান করেন। মো. শাহজাহান খান বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২০০৩ সালে তিনি নিয়োগ প্রাপ্ত হন। পরে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান ২০১৯ সালে মো. শাহজাহান খান। তিনি প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পাওয়ার পর বিদ্যালয়ে সার্বিক পরিস্থিতিতে রূপ নেয় ভিন্নতা। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের বছর খানেক যেতে না যেতেই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় নানা অনিয়ম আর স্বজনপ্রীতির অভিযোগ। সম্প্রতি তার নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি নিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একজন অভিভাবক।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মোঃ শাহজাহান খান গত ২০১৯ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিদ্যালয়টি দুর্নীতি আর অনিয়মের স্বর্গরাজ্যের পরিণত করেছেন। তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত সরকারি আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙগুলি দেখিয়ে বিভিন্ন কায়দায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে ভূয়া ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে যাচ্ছেন। ক্রয় কমিটি গঠন না করে অর্থ ব্যবস্থাপনা বিধি উপেক্ষা করে ইচ্ছেমত ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন ও ব্যয় দেখাচ্ছে বিভিন্ন খাতে।হিসাবে গড়মিল রেখে ভূয়া ভাউচার তৈরী করে আসবাপত্র ক্রয় করারও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। সরকারী বিধি-বিধান তোয়াক্কা না করে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন তিনি। প্রধান শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ক্ষতি সম্মুখিন হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মনে দেখা দিচ্ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং এর খেসারত দিতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, সরকারি বিধি উপেক্ষা করে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই প্রভাব বিস্তার করে ২০০৩ সালে উক্ত বিদ্যালয়েন সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন তিনি। ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তি লটারীর অপেক্ষমান ১ম তালিকার ১৯ ক্রমিক ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দিয়ে ২০ ও ২২ নং ক্রমিকের ছাত্র ভর্তি করেন তার স্বজপ্রীতির মাধ্যমে । এ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে ঐছাত্রের অভিভাবক বিষয়টি জানতে গেলে তার সাথেও তিনি অসদাচারণ করেন এবং বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেন। সরকারি বিধি উপেক্ষা করে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীর ভর্তি ফি ও অন্যান্য বাবদ দুই হাজার টাকার অধিক আদায় করেন। এমনকি অকৃতকার্য ছাত্র ছাত্রছাত্রীদের ছাড়পত্র দেয়ার নামেও হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। এছাড়াও বিদ্যালয়ের আদায় রশিদ ব্যতি রেখে নানা উপকরণের নামে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে পর্যায়ক্রমে অর্থ আদায় করেন। প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে সিলেবাস বই দেয়ার নামে টাকা নিলেও সেই সিলেবাস বই বিনামূল্যে সরবরাহ করে থাকেন বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে। এদিকে শিক্ষার্থীদর নিকট থেকে যে অর্থ নেন তা তিনি নিজেইর পকেটে ঢুকান বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র বাবৎ একাধিবার টাকা উত্তোলন করারও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। প্রতিবছর প্রধান শিক্ষক তার পছন্দ মতো প্রকাশনীর এজেন্টের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ পেয়ে গাইড বইয়ের বিক্রির কৌশল অবলম্বন করেন। শিক্ষার্থীদেরকে গাইড ও নোট বই সংগ্রহের জন্য নানা কৌশলী হয়ে গাইড ও নোট কেনার উৎসাহ দেন তিনি । এতে করে প্রকাশনী থেকে প্রাপ্য অর্থ তিনি নিজেই ভোগ করেন। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে নতুন কারিকুলামে পরীক্ষা নেওয়ার বিধান না থাকলেও প্রতি শিক্ষার্থীদেও নিকট হতে ২শ-৩শ টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেন। প্রতিবছর ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির রেজিষ্ট্রেশন ও এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের নামে রশিদ বিহীন অতিরিক্তি অর্থ আদায়সহ নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের থেকে অর্থ আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর হতে অদ্যাবধি বিদ্যালয়ের আঙিনায় বিভিন্ন ফলফলাদির গাছ রয়েছে। ঐসব গাছের ফলফলাদি বিক্রি, কাঠগাছ বিক্রি ও বিদ্যালয়ের পুরাতন বই খাতা বিক্রির লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। যাহার কোন হিসাব বিদ্যালয়ের হিসাব বর্হিতে লিপিবদ্ধ নেই। তার ব্যবহৃত ব্যক্তিগত পুরাতন কম্পিউটার স্কুলের ভাউচারে খরিদ দেখান। ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বোর্ড ফি ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও প্রাপ্ত ফি শিক্ষার্থীদের নিকট ফেরৎ না দিয়ে সে নিজেই ভক্ষণ করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নানা রকম স্বেচ্ছাচারিতা ও দাম্ভিকতার প্রায়ই দেখতে হয় বিদ্যালয়ে আসা অভিভাবকদের। একাধিক অভিভাবক তার এসব আচরণে ক্ষুব্ধ । এদিকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের আচরণে বিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যেও ফাটল রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তাদের ফাটলের কারণে বিদ্যালয়ের সুষ্ঠুকার্র্যক্রম ও সঠিক পাঠদানের ব্যাহত হচ্ছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ শাহ জাহান খান তার উগ্রতায় বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশের উপর নানা রকম প্রভাব পড়ছে বলে স্থানীয়রা অভিমত প্রকাশ করেন। তাই এসবে বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের দৃষ্টি দিয়ে বিদ্যালয়ের সুষ্ঠু কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য দাবি জানান সচেতন এলাকাবাসী । তার নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির বিষয়ে সঠিক তদন্ত করলে তার সত্যতা মিলবে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান খাঁনের নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,৷ আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা। যেহেতু অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত হোক। তখন সত্য মিথ্যা বের হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ে সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সাইফুল ইসলামের বক্তব্যে জন্য তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. জুলফিকার হোসেন বলেন , একটি অভিযোগ পেয়েছি। জেলাপ্রশাসক স্যারের নিদের্শনায় তদন্ত কমিটি গঠন হলে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে আমি প্রধান শিক্ষককে বলেছি তিনি যেন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের জবাব রেডি রাখেন।