ঢাকা

পুলিশের ‘বিশেষ শাখা’ তে যাচ্ছেন গোপালগঞ্জের প্রথম নারী পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বিপিএম পিপিএম 

  প্রতিনিধি ৪ জুলাই ২০২৩ , ৭:০১:০০ প্রিন্ট সংস্করণ

কে এম সাইফুর রহমান, গোপালগঞ্জঃ 

রাতে প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটে গেছেন শীতবস্ত্র হাতে নিয়ে। মানবিক কর্মকান্ডে সবার মাঝে একটি আস্থা অর্জন করায় জেলার প্রতিবন্ধী, সুবিধা বঞ্চিত নারী-শিশু সহ বিপদগ্রস্থ অনেকেই তাঁর দ্বারস্থ হয়েছেন। সাধ্যমতো নিজে কিংবা কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সামাজিক দায়িত্ব পালনের বিষয়ে উপলব্ধি করিয়ে এদের মাধ্যমে অনেকের লেখাপড়া বা অক্ষম হলে ভরনপোষণ এর দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছেন, কাউকে দোকান করে দিয়ে বা গবাদি পশু ক্রয় করে দিয়ে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি জনগণের এত কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলেন যে আমরা দেখেছি আত্মহত্যার সময়েও একজন কিশোরী জেলার পুলিশ সুপারকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তার অভিমানের কথা বলতে চায়! আবার তারই তড়িৎ পদক্ষেপের কারণে সে কিশোরীকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হয়। এ ঘটনায় সর্ব মহলে পুলিশ সুপার হিসেবে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি স্কুল কলেজ পরিদর্শন করে ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মাদক, ইভটিজিং, বাল্যবিবাহ ও আত্মহত্যার মতন সামাজিক সমস্যার বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন। এ সচেতনতা বৃদ্ধি প্রোগ্রাম সমূহের মাধ্যমে তিনি তরুণ ও কিশোর-কিশোরীদের আদর্শে পরিনত হতে পেরেছেন। ইভটিজার ও কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে সময়ে সময়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেন। ছাত্রীদেরকে তিনি একটি বিশেষ স্লোগানে উজ্জীবিত করেছেন, 

“আমরা নারী-আমরা সব পারি।”

এছাড়া বৈশ্বিক মন্দার সময়ে তিনি জেলা পুলিশের সকল ইউনিট ও অফিসে সংরক্ষিত পতিত জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফসল চাষ করিয়েছেন; পুকুর গুলোতেও করিয়েছেন মাছের চাষ। এটি সবার জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করে এবং একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্র- পত্রিকায় ফলাও করে এ সাফল্য প্রকাশিত হয়। তিনি টানা দুই বছর গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশে মাত্র ১০০ টাকা ফি-তে সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ কার্যক্রম দক্ষতার সাথে পরিচালনা করেন এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেন। তিনি ২০২২ সালের ১৫ জুন গোপালগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশাসন ও অন্যান্য সংস্থার সাথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ঘনত্ব বিচারে দেশের সবচেয়ে বেশি পূজামণ্ডপ রয়েছে গোপালগঞ্জ জেলায়। সার্বজনীন দূর্গাপূজা, লাখো ভক্তের সমাবেশ ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ির মেলা, খ্রিস্টান ধর্মের বড়দিনের মত অনুষ্ঠান সহ সকল ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে এ জেলার যে অসাম্প্রদায়িক ও এসব অনুষ্ঠানে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ মূলক চেতনা রয়েছে তা সমুন্নত রাখেন। 

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন হিন্দুদের মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান সফর করেন। এ সময় ব্যাপক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করার দায়িত্ব পড়ে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশের ওপরে। দেশের বিভিন্ন জেলা হতে দক্ষ অফিসারগণ তাঁর নেতৃত্বে সফলভাবে স্মরণ কালের সবচেয়ে জনবহুল এ ভিভিআইপি ডিউটি সম্পন্ন করেন। একই সাথে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্ম শতবার্ষিকী 

এসময় কালে ২৫ জুন ২০২২ দেশের সর্ব বৃহৎ মেগা প্রজেক্ট তথা দক্ষিন এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ সেতু পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধন করা হয়। এর ফলে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাংশ যুক্ত হয় ঢাকা চট্টগ্রামের সাথে, উন্মোচিত হয় সম্ভাবনার নতুন দ্বার। গোপালগঞ্জ জেলার প্রায় ৮০ কিমি হাইওয়েতে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। টুঙ্গিপাড়াতে বেড়ে যায় পর্যটকের চাপ। বিভিন্ন সময়ে হাইওয়ে পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের সাথে নিয়ে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ তাঁর নেতৃত্বে সামগ্রিক ভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করেছে। 

পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, বিপিএম পিপিএম পুলিশ সুপার হিসেবে তাঁর আড়াই বছর দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন রকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অত্যন্ত সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে জেলার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রেখেছেন। এর পুরস্কার স্বরূপ এ সময়ের মধ্যে তিনি পুলিশের সর্বোচ্চ পদক বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) এ ভূষিত হয়েছেন। এছাড়া তিনি ‘পুলিশ ফোর্স এক্সেমপ্লারি গুড সার্ভিস ব্যাজ’ তথা আইজিপি পদকেও ভূষিত হন। তিনি  গোপালগঞ্জে কর্মকালীন সময়ে মোট ১৫ বার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু এঁর সমাধি সৌধ এলাকায় সফর করেছেন। এ ভিআইপি ব্যক্তিবর্গের সফর বা জনসভার সময় অত্যন্ত কর্মনিষ্ঠা, দক্ষতা, ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলায় কর্মকালীন সময়ে একজন নারী পুলিশ অফিসার হিসেবে সর্বদা নারী নেতৃত্বকে প্রমান করেছেন। একইসাথে অত্র এলাকা তথা দেশ মাতৃকার জন্যে তার একাগ্রভাবে কাজ করার ফলস্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশ, সরকার এবং রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি উজ্জল হয়েছে। বিদায়ের প্রাক্কালে আমরা পুলিশ সুপার, গোপালগঞ্জ, আয়েশা সিদ্দিকা-বিপিএম পিপিএম মহোদয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই; একইসাথে কর্ম ও ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা রইলো।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by