চট্টগ্রাম

“প্রতিনিয়ত হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাগান মালিক”

  প্রতিনিধি ৬ মে ২০২৪ , ৪:৫০:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

"প্রতিনিয়ত হাতির তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাগান মালিক"

প্রকৃতিতে ফুলে ফলে সেজেছে চৈত্রের মধুমাস। মধুমাস মানেই প্রকৃতিতে রসালো ফলের বাহারি আয়োজন। মধুমাসের রসালো ফল লিচু শোভা পাচ্ছে বাঁশখালীতে। বিশেষ করে বাঁশখালীর কালীপুরের পূর্ব পাহাড়ি অঞ্চলে দিগন্তজোড়া বিস্তৃত লিচু বাগানে ঝুলছে রসালো লিচু। দৃষ্টি যতদূর যায় দেখা যায় পাহাড়ের পাদদেশ জুড়ে লিচু গাছের বিশাল ছাউনি। পাহাড়ি বাগান ছাড়াও এ লিচু শোভা পাচ্ছে কালীপুরের প্রতিটি বাড়ির ছাদ বাগানেও।

কালীপুরের পূর্ব পাহাড়ি এলাকায় খুব কম বসতঘরই আছে যাদের তিন-চারটা লিচু গাছ নেই। মৌসুমী এ লিচু প্রকৃতিতে যেমন সৌন্দর্য বিলায় তেমনি চাষীদের মুখে হাসি ফোটায়। এবারে বাঁশখালীতে লিচুর ব্যাপক ফলন হয়েছে। বাঁশখালীর অভ্যন্তরীণ হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে বছরের সেরা রসালো ফল কালীপুরের লিচু। প্রধান সড়কের গুনাগরি মোড়, কালীপুর রামদাশ হাঁটসহ সব জায়গায় লিচুর পাইকারি বিক্রেতারা ভিড় জমিয়েছে। কেউ কেউ লিচুর থোকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিক্রির জন্য। সকাল-সন্ধ্যায় স্থানীয় বাজারগুলোতে মিলছে কালীপুরের লিচু।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও পোকামাকড়ের তেমন আক্রমণ না থাকায় বাঁশখালীতে লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে দাবি উপজেলা কৃষি অফিসের। তবে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় লিচুর আকার ছোট হয়েছে। হুট করে বৃষ্টিপাত হলেই আকার বড় হবে। কিন্তু লিচু ফেঁটে যাবে। লিচু চাষীরা বাগানে ব্যস্ত সময় দিচ্ছে।চলতি মৌসুমে বাঁশখালী উপজেলা জুড়ে ৬৩০ হেক্টর বাগানের লিচুর ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাঁশখালী উপজেলা অফিসার কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আবু সালেক। বিগত কয়েক বছর ধরেই বাঁশখালী উপজেলায় লিচুর খুব ভালো ফলন হয়ে আসছে। বাঁশখালীর লিচু বাজারে আগাম আসায় কদরও একটু বেশী।

বাজারে লিচুর আকার ভেদে প্রতিশত লিচু ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি হাজার লিচু পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে ১৫শ থেকে ২২শ টাকা পর্যন্ত। স্থানীয় কালীপুরী জাতের লিচুর পাশাপাশি উন্নত জাতের লিচু যেমন- বোম্বাই, চায়না-২, চায়না-৩, মোজাফফরী চাষও দিন দিন বাড়ছে। বাঁশখালী কালীপুরের লিচু অনেকটা দিনাজপুরের লিচুর মতো হলেও এটি আকারে একটু ছোট। কিন্তু স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়।সরেজমিনে দেখা যায়, কালীপুরে প্রবেশ করতেই দেখা মিলছে গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে রসালো লিচু। উপজেলার পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালিপুর হয়ে বৈলছড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকাজুড়ে সড়কের পাশে, বাড়ির আঙ্গিনায়, পাহাড় ও লোকালয়ের লিচু বাগানে এখন শুধু লিচু আর লিচু। তাছাড়া উপজেলার পূর্ব পাহাড়ি এলাকায় বিশেষ করে পুঁইছড়ি, নাপোড়া, চাম্বল, জঙ্গল জলদীতেও বাগানে বাগানে শোভা পাচ্ছে লিচুর দোল খাওয়া।

চলতি বছরে লিচুর বাম্পার ফলনে শুধুমাত্র বাঁশখালীতেই রেকর্ড সংখ্যক লিচু বিক্রির সম্ভাবনা দেখছে উপজেলার লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীরা।কালীপুরের মোহাম্মদ দিঘীর পাড় এলাকার লিচু চাষি নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার ৫ কানি মতো লিচু বাগান আছে। ফলনও ভাল হয়েছে। শ্রমিকের খরচসহ সব বাদ দিয়ে আমার একলক্ষ টাকা লাভ থাকবে। অতিরিক্ত গরমে লিচু ঝরে পড়ছে। কালবৈশাখীর প্রভাব নিয়েও শঙ্কিত। পোকা মাকড়ের প্রভাবও বেড়েছে। সম্প্রতি হাতির তাণ্ডবে আমরা অতিষ্ঠ। প্রতিদিনই বাগানের কয়েক হাজার লিচু খেয়ে যাচ্ছে হাতির দল। লিচু পারতে গিয়ে দিন-দুপুরে আমাদের আতঙ্কের শেষ নেই। ইতোমধ্যে হাতির আক্রমণে মারাও গেছেন কয়েকজন।

‘পূর্ব কালীপুরের আরেকজন চাষি রবিউল ইসলাম রণি বলেন, ‘আমার নিজের চাষ করা বাগান ও লিজ নেওয়া বাগানসহ প্রায় ১৫ কানি লিচু বাগান রয়েছে। তপ্ত রোদে লিচু বাগানের পরিচর্যা করা, পাহারা দেওয়া, লিচুপারা সহ অনেক কাজই কঠিন। গাছে গাছে রসালো লিচু ঝুলতে দেখে সব কষ্টই ভুলে যাই। তবে, হাতির তাণ্ডবে আমরা লিচু চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমার প্রায় ৩০ হাজার লিচু হাতি খেয়ে ফেলছে। সবমিলে আমি এবছর দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারবো বলে আশা রাখছি।

‘উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু ছালেক প্রতিবেদককে বলেন, ‘এবার চলতি মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মৌসুমি ফল আম, কাঁঠাল লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। তবে মৌসুমী ফলের মধ্যে বাঁশখালীর কালীপুরের লিচু স্পেশাল একটি ফল। এখানে বাণিজ্যিকভাবে লিচুর চাষাবাদ হয়। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী স্থাপন, পরামর্শ, দলীয় আলোচনা, ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে লিচু চাষি বাগানীদের সহযোগিতা করেছি।

এ বছর ৬শত ৩০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। পুরোদমে স্থানীয় বাজারে লিচু আসতে শুরু করেছে। কালবৈশাখীর প্রভাব না পড়লে, বৃষ্টি না হলে লিচু ব্যবসায়ীরা আশানুরূপ দাম পাবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by