ভারত

বাংলাদেশ সফরে মোদির মন্দির পরিদর্শনের ‘উদ্দেশ্য’ নিয়ে কবীর সুমনের পোস্ট (ভিডিও)

  প্রতিনিধি ২৪ মার্চ ২০২১ , ৬:৩০:১৯ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এবারের সফরে ২৭ মার্চ সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে যাবেন তিনি। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো এ মন্দিরে পূজা দেওয়ার কথা রয়েছে নরেন্দ্র মোদির।

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের অবদান ও মোদির বাংলাদেশ সফরে মন্দির পরিদর্শন নিয়ে জরুরি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় গায়ক, গীতিকার ও অভিনেতা কবীর সুমন। গত সোমবার (২২ মার্চ) নিজের ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। ৮ মিনিট ২৯ সেকেন্ডর ওই ভিডিওতে তুলে ধরেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটে যাওয়া নানা তথ্য।

ভোরের দর্পণ পাঠকদের জন্য তার বক্তব্যটি তুলে ধরা হলো-

ভিডিওর শুরুতেই কবীর সুমন বলেন, ‘ভিডিও বার্তাটি তৈরি করেছি প্রধানত আমাদের প্রিয় প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের শ্রদ্ধেয় সরকার, তাদের সকল মাননীয় সদস্য, তাদের সকল মাননীয় অনুগামী অনুসারী এবং বাংলাদেশের আমাদের প্রিয় জনগণের উদ্দেশ্যে। বন্ধুরা, এই ৭৩ বছর বয়সে পুরনো দিনের কথা খুব বেশ মনে পড়ে। আগে এতটা পড়ত না। এখন আমার মনে পড়ছে বাংলাদেশের মুক্তিযদ্ধের কথা। সে সময় আমি ছিলাম যুবক, লাখ লাখ বাংলাদেশি শরণার্থী চলে এসেছিলেন আমাদের পশ্চিমবঙ্গে। কী অবস্থা যে হয়েছিল, তার একটু পরিচয় পেতে আপনারা অনুগ্রহ করে আমেরিকান কবি অ্যালেন জিন্সবার্গের লেখা ‘অন যেশো রোড’ কবিতাটি পড়লে খুব ভালো হয়। উনি এসেছিলেন সে সময়, স্বচক্ষে দেখেছিলেন বাংলাদেশের শরণার্থীদের।’

ওপার বাংলার জনপ্রিয় এ গায়ক বলেন, ‘বাংলাদেশের এত মানুষ আসাতে সে সময় পশ্চিমবঙ্গের একটি মানুষের মুখও কিন্তু আমি ভারাক্রান্ত দেখিনি। মনে রাখবেন, আমাদের গোটা উপমহাদেশের সাধারণ মানুষের জীবন কিন্তু ভারাক্রান্ত। তারা কেউ ধনী নন, তাদের আর্থিক ভার বয়ে বেড়াতে হয়। তারই মধ্যে আমাদের এই পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষ তাদের সামান্য সম্বল ভাগ করে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের সঙ্গে। আমি কোনোদিনও তাদের ভারাক্রান্ত মুখ দেখেনি। অনেক সময় লোকে তামাশা করে হেসে বলত, এবার বেশ ভালো ইলিশ পাওয়া যাবে। বাঙালি একটু উদারপরায়ণ। কেন আমাদের শেয়ার করতে হবে বাংলাদেশের শরণার্থীদের সঙ্গে, এমন কথা কোনোদিন শুনিনি। এটা আমার বিশেষ গর্ব।’

নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে কবীর সুমন ভিডিওতে বলেন, ‘খবর পাচ্ছি ভারতের সম্মানীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে যাচ্ছেন, যাবেন হয়তো কিছুদিন থাকবেনও। ঠিক ওই সময় যখন পশ্চিমবঙ্গে ভোট হচ্ছে, সে সময় একটি বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ের দেবালয়ে গিয়ে পূজা দেয়ার জন্য। এই ধর্ম সম্প্রদায় কিন্তু এখানেও থাকেন। আমি এখনো পর্যন্ত কোনো কাগজে দেখিনি যে, উনি হঠাৎ বিশেষ কোনো দেবালয়ে চলে গেলেন, গিয়ে ষষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করছেন। আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি। ভোট চলে ভোটের নিয়মে, মানুষের নিয়মে না। আমার শুধু চিন্তা হচ্ছে এই ভেবে, যে পার্টি আজকে ভারতের কর্তৃত্বে, সে পার্টির নীতি হলো বিভাজন, ধর্মীয় বিভাজন। মনে রাখবেন, আমাদের ভারত কিন্তু সেক্যুলার দেশ। এখানে ওস্তাদ বড়ে গুলাম আলী খান, যিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া মুসলমান, রোজা রাখা মুসলমান তিনি কিন্তু ‘হারি ওম তাদসাদ’ বলে গান করেন। তাতে কিন্তু মুসলমান বা হিন্দু কারো কোনো আপত্তি হয় না।’

নরেন্দ্র মোদির সরকার বাংলা ভাষাকে ‘ক্ল্যাসিক্যাল’ ভাষার মর্যাদা দেয়নি উল্লেখ করে প্রবীণ এ গীতিকার, সুরকার বলেন, ‘এই যে বর্তমান ভারত সরকার, সে সরকার কিন্তু বাংলা ভাষাকে ক্ল্যাসিক্যাল ভাষার মর্যাদা দিতে চায়নি, দেয়নি। প্রতিবেশী ওড়িশার ভাষা ক্ল্যাসিক্যাল মর্যাদা পেয়েছে কিন্তু বাংলা পায়নি। মাননীয় বন্ধুরা মনে রাখবেন, যে ব্যক্তিটি যাচ্ছেন নিশ্চয় খুব সম্মানীয়। তিনি কিন্তু তার দল ভারতকে সেক্যুলার দেশ হিসেবে স্বীকার করে না। তারা বাংলা ভাষাকে স্বীকার করে না। তাদের নথিতে রয়েছে বাংলা ভাষায় যারা কথা বলে তারা বাংলাদেশের লোক। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে কেউ ভারতের লোক না। এই জায়গা থেকে তারা দেখছেন।’

কবীর সুমন বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সেক্যুলার। ধর্মান্ধতার রাজনীতি এখানে কোনোদিন হালে পানি পায়নি, পাবেও না। তারা সেটা জানেন, জেনেশুনে তারা এবার প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের স্মরণ নিচ্ছেন। যাতে তিনি ওখান থেকে একটি বক্তৃতা করতে পারেন, যে এখানকার নির্বাচনী শিষ্টাচার মেনে অর্থাৎ এখানে কিছু করা হলো না, অন্য জায়গায় থেকে করা হলো, এখানে মানুষ শুনল। বন্ধুরা, মনে রাখবেন আমি সেই কবীর সুমন যে পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে গান লিখিনি কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে লিখেছি। আমি সেই সম্প্রীতি, সেই ভালোবাসার জায়গা থেকে এই ভিডিও বার্তাটি পাঠাচ্ছি। অনুগ্রহ করে আপনারা ব্যবহৃত হবেন না। পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের বন্ধু, এ ব্যাপারে অন্য কোনো বিবেচনা আনবেন না।’

সবশেষ তিনি বলেন, ‘এইটুকু মনে রাখবেন, যে ব্যক্তিটি যাচ্ছেন তার সরকার এবং দল বাংলা ভাষাকে ক্ল্যাসিক্যাল ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি জানাননি। আরো অনেকে ভাষা স্বীকৃতি পেয়েছে কিন্তু বাংলা পায়নি। এটা মনে রেখে কি আপনারা একটি আপত্তি করতে পারেন না? আপনাদের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা। এই পয়েন্টকে মনে রেখে অন্তত, পারেন না? বঙ্গবন্ধু কন্যা আপনি পারেন না? আপনার ভাষা, আপনার দেশের ভাষা, বঙ্গবন্ধুর ভাষা, আপনার পরিবারবর্গের ভাষা, আপনাদের সকলের ভাষা, আপনার দেশবাসীর ভাষা, ধ্রুপদী ভাষায় স্বীকৃতি পায়নি। যে সরকার এই স্বীকৃতি দেয়নি সে সরকারের প্রধান যাচ্ছে আপনাদের দেশে। আমার বক্তব্য এখানেই শেষ হলো। জয় বাংলা, জয় বাংলা ভাষা, জয় বাংলাদেশ, জয় পশ্চিম বাংলা।’

প্রসঙ্গত, মুজিববর্ষ উদযাপন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের যৌথ উদযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আগামী ২৬ মার্চ ঢাকা আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

মহামারি কোভিডের এই সময়ে এটি মোদির প্রথম বিদেশ সফর। সফরের প্রথম দিন ২৬ মার্চ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে গার্ড অব অনার দেওয়া হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। এরপর নরেন্দ্র মোদি জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।

একই দিন বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে গেস্ট অব অনার হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন। সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন।

পরের দিন ২৭ মার্চ সকালে নরেন্দ্র মোদি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ পরিদর্শন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তাছাড়া তিনি সাতক্ষীরা ও গোপালগঞ্জে দুটি মন্দির পরিদর্শন করে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বিকেলে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠক ছাড়াও প্রতিনিধি পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হবে। বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কিছু সমঝোতা স্মারক ও কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বের ৫০ বছর উপলক্ষে পৃথক দুটি স্মারক ডাকটিকেট উন্মোচন করবেন।

সর্বশেষ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে ২৭ মার্চ রাতে দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

দেখুন ভিডিওটি