আন্তর্জাতিক

বিশ্বজুড়ে বন্যা ও ভূমিধস বৃদ্ধির কারণ ‘উড়ন্ত নদী’

  প্রতিনিধি ২৬ আগস্ট ২০২৪ , ৩:০২:২৪ প্রিন্ট সংস্করণ

গাজী টায়ারসে আগুন: এখনও নিখোঁজ ৯২
ছবি: সংগৃহীত

বর্ষাকালে বৃষ্টি ও বন্যা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। কিন্তু সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে বাড়ছে বৃষ্টিপাত। সঙ্গে রয়েছে শিলা ও বজ্রপাত। হঠাৎ আসা এই বন্যা ও প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণ কি? সাম্প্রতিক ব্যাপক বৃষ্টি ও বজ্রপাতের জন্য বায়ুমণ্ডলে রেকর্ড পরিমাণ আর্দ্রতাকে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। যাকে তারা বায়ুমণ্ডলীয় নদী বা উড়ন্ত নদীও বলছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত তথ্য।

সম্প্রতি এই সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। বন্যায় ডুবে গেছে দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ জেলা। ভারতের রাজধানী দিল্লি ও কলকাতায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। চীন ও পাকিস্তান ও আফগানিস্তানেও বৃষ্টিসহ বন্যা ও ভূমিধস বেড়েছে। শুধু তাই নয় সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যার অভিজ্ঞতা হয়েছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোরও। ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোও পিছিয়ে নেই। হঠাৎ আসা বন্যায় তলিয়ে যাচ্ছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশও।

এতো ঘন ঘন বন্যার পিছনের কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠতে থাকা বায়ুমণ্ডল এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি আর্দ্রতা ধারণ করছে। যার কারণে বজ্রপাত, শিলাবৃষ্টি এবং অতি মাত্রায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, সম্প্রতি আকস্মিক বন্যাগুলো বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোর কারণে হয়েছে যা ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো প্রতিনিয়ত দীর্ঘ, প্রশস্ত ও ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠছে; যা বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষকে বন্যার ঝুঁকিতে ফেলছে বলে জানিয়েছে নাসা।

এই ‘আকাশের নদী’ বা ‘উড়ন্ত নদী’ হল ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডল পর্যন্ত লম্বা ও প্রশস্ত জলীয় বাষ্পের স্তর যার উদ্ভব হয় সাধারণত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল থেকে, পরে তারা ঠান্ডা মেরু অঞ্চলের দিকে সরতে থাকে।

এই উড়ন্ত নদীগুলো পৃথিবীর মধ্য-অক্ষাংশ জুড়ে চলাচল করা মোট জলীয় বাষ্পের প্রায় ৯০ শতাংশ বহন করে।

একটি বায়ুমণ্ডলীয় নদী গড়ে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ, ৫০০ কিলোমিটার প্রশস্ত ও প্রায় তিন কিলোমিটার গভীর হয়ে থাকে। অনেক সময় তা পাঁচ হাজার কিলোমিটারের চেয়েও বেশি দীর্ঘ ও প্রশস্ত হয়ে থাকে। তবে মানুষ এই নদী চোখে দেখতে পায় না। তারা যা দেখে তা শুধুই কিছু পুঞ্জীভূত মেঘ।

উত্তর আমেরিকার দীর্ঘতম নদী মিসিসিপি যতটা না আর্দ্রতা ছড়ায় তার চাইতে ১৫ গুণ বেশি আর্দ্রতা ছড়াতে পারে বায়ুমণ্ডলের বিশাল ও শক্তিশালী নদীগুলো।

উড়ন্ত এই নদীগুলো গড়ে যে পরিমাণ পানি নিঃসরণ করে তা বিশ্বের সবচেয়ে বড় নদী আমাজনের নিয়মিত পানি প্রবাহের প্রায় দ্বিগুণ।

বায়ুমণ্ডলীয় এই নদীগুলো সবসময়ই ছিল। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি আরও বেশি জলীয় বাষ্প তৈরি করছে। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে ভূপৃষ্ঠে প্রচুর পরিমাণে পানি ঝরে। যার কারণে বিপর্যয়কর বন্যা এবং ভূমিধস দেখা দেয়।

জার্মানির পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ জিওসায়েন্সের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বায়ুমণ্ডলীয় নদী অনেক দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছে।

পটসডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সারা এম ভ্যালেজো-বার্নালের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বায়ুমণ্ডলীয় নদী ঘনীভূত হওয়ার হার ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ায় ১৯৪০ সাল থেকে বায়ুমণ্ডলীয় নদী উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।

জিওফিজিক্যাল রিসার্চ জার্নালের ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্ব চীন, কোরিয়া ও পশ্চিম জাপানে বর্ষা মৌসুমের শুরুতে (মার্চ এবং এপ্রিল) যে ভারী বৃষ্টিপাত হয়, তার মধ্যে ৮০ শতাংশই হয় বায়ুমণ্ডলীয় নদীর কারণে।

এদিকে ভারতের আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ভারত মহাসাগরের উষ্ণ পরিবেশ ‘উড়ন্ত নদী’ তৈরি করছে এবং জুন থেকে সেপ্টেম্বরে এই অঞ্চলে মৌসুমি বৃষ্টিপাতকে প্রভাবিত করছে।

ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ ট্রপিক্যালের আবহাওয়াবিদ ড. রক্সি ম্যাথিউ কোল বলেছেন, যখন সমুদ্রের পানি উষ্ণ হয়ে ওঠে তখন তা বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোতে জমা হতে থাকে। বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলো এই বিপুল পরিমাণ আর্দ্রতা বা পানি কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন ধরে ভূপৃষ্ঠে ফেলতে থাকে। এর ফলে ভারতজুড়ে ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার ঘটনা বেড়ে গেছে।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুমণ্ডলীয় নদীগুলোর পর্যবেক্ষণ এবং পূর্বাভাস শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল থেকেই দেয়া সম্ভব।

তবে ভারতের ইন্দোর আইআইটির আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে পিএইচডিরত শিক্ষার্থী রোজা ভি লিংওয়া বলছেন, এ সম্পর্কিত গবেষণা ও অধ্যয়ন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

আরও খবর

Sponsered content