প্রতিনিধি ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ৬:৫২:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে সৌজন্যমূলক ফোন করা শুরু করেন জো বাইডেন। তবে ওয়াশিংটনের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি কল করেছেন প্রায় এক মাস পর। এক্ষেত্রে এত ‘দীর্ঘ’ সময় নেওয়ায় বিষয়টিকে তাৎপর্যপূর্ণ ও ইসরায়েলিদের জন্য বিশেষ বার্তাবহ বলে মনে করা হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।
গত ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। এরপর তিনি ফোন করেছেন কানাডা, যুক্তরাজ্য, ভারতের মতো দেশগুলোর সরকারপ্রধানের কাছে। বাদ যায়নি চীন-রাশিয়ার মতো ‘শত্রুভাবাপন্ন’ দেশগুলোও। অথচ বাদ পড়ছিল ইসরায়েল।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সুসম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। ২০১৭ সালে শপথগ্রহণের দু’দিনের মাথায় ইসরায়েলি ‘বন্ধু’র কাছে ফোন করেছিলেন ট্রাম্প।
বিশ্লেষকদের মতে, পূর্বসূরীর সঙ্গে দহরম মহরম থাকা নেতার কাছে দেরিতে ফোন করে বাইডেন হয়তো বোঝাতে চাচ্ছেন, তার প্রশাসন আগের মতো ইসরায়েল-ঘেঁষা হবে না।
তাছাড়া, আগামী ২৩ মার্চ ইসরায়েলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ফোন করে নেতানিয়াহুর প্রচারণায় বাড়তি সুবিধা দেওয়া থেকেও বিরত থাকার চিন্তা থাকতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
অনেকেই বলছেন, আগামী নির্বাচনে নেতানিয়াহু জিতে গেলে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আগের মতো অতটা উষ্ণ হবে না। অবশ্য দুই পক্ষের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো উত্তেজনার চিহ্ন দেখা না গেলেও তাদের মধ্যে ইরানসহ বেশ কিছু ইস্যুতে মতপার্থক্য স্পষ্ট।
বুধবার বাইডেন-নেতানিয়াহু ফোনালাপেও সৌহার্দ্যপূর্ণ কথা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওভাল অফিসে বাইডেন নিজেই সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘খুব ভালো আলাপ হয়েছে।’
আর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাইডেন-নেতানিয়াহু প্রায় ঘণ্টাখানেক ফোনে কথা বলেছেন। আরব ও মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়ে কথা হয়েছে তাদের। দুই নেতা নিজেদের দীর্ঘদিনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন বলেও জানানো হয়েছে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বাইডেন ও নেতানিয়াহু ইরান বিষয়ে পরামর্শ অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন।
মার্কিন প্রশাসনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাইডেন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সহযোগিতা বৃদ্ধির আশা করেন এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলিদের সম্পর্কোন্নয়নকেও পুরোপুরি সমর্থন করছেন।
Prime Minister Benjamin Netanyahu spoke this evening with US President @JoeBiden. The conversation was very warm and friendly and continued for approximately one hour. pic.twitter.com/AF3x6aTM36
— PM of Israel (@IsraeliPM) February 17, 2021
এসময় ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটন ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তিতে ফিরলে এবং পশ্চিম তীরে দখল করা জমিতে বসতি স্থাপনের বিরোধিতা করলে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব পরীক্ষার মুখে পড়তে পারে।
নেতানিয়াহুর মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে অনেকটা পায়ে পা মিলিয়ে এগিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার প্রায় সব পদক্ষেই ছিল ইসরায়েলপন্থী। তবে ক্ষমতাগ্রহণের আগেই ইরান-ফিলিস্তিনের মতো ইস্যুগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের পদাঙ্ক অনুসরণ না করার ঘোষণা দিয়েছিলেন বাইডেন।
অবশ্য ইসায়েলের এক কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেছেন, বাইডেনের ফোনকলে বিলম্ব হওয়া নিয়ে চিন্তিত নন তারা। তাদের বিশ্বাস, করোনাভাইরাস মহামারি, চীন-রাশিয়ার চ্যালেঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো আগে সামলাতে গিয়েই এই বিলম্ব করেছেন নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তাছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের নেতাদের মধ্যে নেতানিয়াহুর কাছেই সবার আগে ফোন করেছেন জো বাইডেন। বিষয়টিকে ইতিবাচক লক্ষণ বলেই মনে করছে ইসরায়েল।