প্রতিনিধি ২৬ এপ্রিল ২০২০ , ৫:১৮:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ
উত্তম ঘোষ, যশোর : দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের ১০টি জেলার মধ্যে যশোরে সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। যশোর জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বিভাগের মধ্যে শীর্ষে পৌঁছেছে। এ জেলায় ৩০ জন করোনা রোগীর মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসক রয়েছেন ১০ জন।
অথচ, ৪৬ দিন আগে অথ্যাৎ গত ১০ মার্চ খুলনা বিভাগের প্রথম করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হওয়া চুয়াডাঙ্গা জেলার সেই ইতালী ফেরত যুবক সুস্থ হয়েছেন। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গায় এ পর্যন্ত ৮ জনে সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে যশোরে প্রতিদিনই একাধিক করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পাশাপাশি দ্রæত সংখ্যা বাড়তে থাকায় করনোর হটস্পটে পরিণত হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১০ মার্চ ইতালী ফেরৎ এক যুবক আক্রান্তের মধ্য দিয়ে খুলনা বিভাগে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় চুয়াডাঙ্গায়। দীর্ঘ ৪৬ দিনের ব্যবধানে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ঢাকা ফেরৎ আরও এক করোনা রোগীসহ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮ জন। এরমধ্যে প্রথম আক্রান্ত সেই ইতালী ফেরৎ যুবক সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
অন্যদিকে, গত ১২ এপ্রিল যশোর জেলার মণিরামপুর উপজেলার একজন স্বাস্থ্য কর্মী আক্রান্তের মধ্য দিয়ে এ জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। পরবর্তীতে ওই স্বাস্থ্য কর্মীকে পাশ্ববর্তী উপজেলা কেশবপুরে শ্বশুর বাড়িতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। এতে তার সংস্পর্শে আসা শ্যালকের করোনা আক্রান্ত হয়। পরে ২৬ এপ্রিল কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন স্বাস্থ্য কর্মী এবং উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের এক নারীর করোনা শনাক্ত হয়।
গত তিনদিনের ব্যবধানে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারজন স্বাস্থ্য কর্মী, মোবারকপুর গ্রামের এক নারী ও বামনআলী গ্রামের এক নারী করোনা শনাক্ত হয়।
২৪ এপ্রিল যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠিতে আশুলিয়া ফেরৎ এক ব্যক্তি করোনা শনাক্ত হয়। তবে দুইদিনের ব্যবধানে ওই ব্যাক্তির ছেলের করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়াও উপশহর ও খড়কি এলাকায় একজন করে, লেবুতলা ইউনিয়নে তিনজন, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দুইজনের করোনা শনাক্ত হয়।
এছাড়াও গত ২২ এপ্রিল চৌগাছা উপজেলার এক প্রসূতি নারী ও এক কিশোরের করোনা শনাক্ত হয়। দুইদিনের ব্যবধানে ওই নারীর স্বামী এবং শনাক্ত কিশোরের চিকিৎসা দেওয়া এক চিকিৎসকের করোনা শনাক্ত হয়।
এছাড়াও শার্শার একজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং বেনাপোল ইমিগ্রেশনের একজন স্বাস্থ্য কর্মী করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়াও বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে এক ব্যক্তির করোনা শনাক্ত হয়েছে। ফলে সর্বপরি মিলিয়ে গত কয়েকদিনে যশোর জেলায় শনাক্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকায় আশাংকা থেকেই যাচ্ছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘বিভাগের মধ্যে যশোর জেলাতেই সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে, বিষয়টি নিয়ে আতঙ্ক না ছড়িয়ে জনগণ সচেতন হয়ে ঘরে থাকলে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এজন্য তিনি সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকার পরামর্শ দেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক ডা. শামীম আরা নাজনীন বলেন, গতকাল পর্যন্ত (২৫ এপ্রিল) খুলনা বিভাগে ৪৯ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিলো। জেলাওয়ারি হিসেবে যশোরে তুলনামূলক বেশি শনাক্ত হয়েছে। তবে, যতো দিন যাচ্ছে পর্যপ্ত সংখ্যক পরীক্ষা করা হচ্ছে বলেই রোগী বাড়ছে বলে জানান তিনি।