দেশজুড়ে

রাতের আঁধারে চলছে বালু লুটের মহোৎসব হুমকিতে জাদুকাটা নদীতীরবর্তী একাধিক স্থাপনা, অধরা বালুখেকো চক্র

  প্রতিনিধি ১০ অক্টোবর ২০২০ , ৭:৪৬:৪৫ প্রিন্ট সংস্করণ

রাতের আঁধারে চলছে বালু লুটের মহোৎসব হুমকিতে জাদুকাটা নদীতীরবর্তী একাধিক স্থাপনা, অধরা বালুখেকো চক্র

বাপ্পা মৈত্র, সিলেট : রাতের আঁধারে সুনামগগঞ্জ জেলার তাহিরপুরের সীমান্ত নদী জাদুকাটায় চলছে নদীর পাড় কেটে বালু বিক্রির মহোৎসব। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালুখেকো চক্রটি প্রতি রাতে তান্ডব চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই জাদুকাটা নদীতে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নদীর পাড় কেটে সাবার করা হচ্ছে। রাতেই নৌকা দিয়ে অন্য স্থানে পাচার কার হচ্ছে এই বালু। যার কারণে সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। নদীর তীর কেটে ফেলায় হুমকির মুখে পড়ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জাদুকাটা নদী তীরবর্তী গ্রাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি, রাস্তাঘাটসহ শতাধিক গ্রাম। আশেপাশের অনেক পরিবারের ভিটেমাটি বিলিন হয়ে গেছে। এদের প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও হয় আভিযান। আটক হয় দিনমজুর খেটে-খাওয়া শ্রমিকরা। কিন্তু অদৃশ্য কারণে অধরাই থেকে যাচ্ছে মূল হোতারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নদী তীরবর্তী স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগের ওসি মোহাম্মদ আতিকুর রহমান থাকা কালে নদীর তীর কাটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নতুন ওসি আব্দুল লতিফ তরফদার যোগদান করার পর পরই বেপরোয়া হয়ে উঠে বালুখেকো চক্রটি। স্থানীয় থানা পুলিশের সোর্স পরিচয় দেয় এমন কয়েক জনকে ম্যানেজ করেই রাতের গভীরে চলে নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। গত সোমবার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফের মাইকিং করে উপজেলার যেকোন নদী, বালুমহাল হতে সবধরনের বালু-পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। জানা যায়, বালুখেকো চক্রটি রাতের আঁধারে নদীর উভয় তীরের গ্রাম ঘাগটিয়া, বড়টেক, গড়কাটি, ঘাগড়া, রাজারগাঁও, লাউড়েরগড়, বিন্নাকুলি, মাহারাম, মানিগাঁও, পাঠানপাড়া, কুনাটছড়া, পিরিজিপুরসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম সংলগ্ন নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। এদিকে জাদুকাটা নদী ভাঙ্গনের প্রভাব পড়েছে এর শাখা নদী বৌলাইতেও। এ ভাঙনের ফলে উপজেলার মানচিত্র ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে। ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে লাউড়েরগড়ের একটি বিশাল গোচারণ ভূমি, কবরস্থান, নোয়াহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অদ্বৈত মহা প্রভুর আশ্রম, আনোয়ারপুর বাজার, বিন্নাকুলি বাজার ও ফাজিলপুর। হুমকির মুখে রয়েছে সোহালা, পিরিজপুর, দক্ষিণকূল, আনোয়ারপুর, নোয়াহাট, পাতারী, তিওরজালাল, বালিজুড়ি, মাহমুদপুর, বারুঙ্কাসহ শতাধিক গ্রাম। ক্রমাগত নদীভাঙ্গনে এ উপজেলার এক সময়ের বিত্তবান পরিবারগুলো সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছে। বছরের পর বছর ধরে নদীতে বালুখেকোদের আগ্রাসনে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে উত্তর বড়দল, বাদাঘাট ও বালিজুরি ইউনিয়নের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এ বিষয়ে সদ্য যোগদান করা তাহিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ তরফদার বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তা সঠিক নয়। আর আমি যোগদান করে, পূর্বের সব তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে নদীর তীর কাটা বন্ধে ও নদী তীরবর্তী স্থাপনা রক্ষার্থে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, খবর পেয়ে অভিযানে গেলে ঘটনাস্থলে অভিযুক্তদের পাওয়া যায় না। কীভাবে তারা খবর পায় তা আমরা বুঝতে পারছি না। এ ব্যাপারে আমরা আরও কঠোর হয়ে অভিযান পরিচালিত করবো।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by