দেশজুড়ে

শাহজাদপুরে অসময়ে যমুনায় ভাঙন

  প্রতিনিধি ১১ এপ্রিল ২০২০ , ৩:৫৯:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

মো. মুমীদুজ্জামান জাহান, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)-ঃ চৈত্রের এই প্রখর খরতাপের মধ্যেও সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীতে ব্যাপক ভঙ্গণ শুরু হয়েছে। এতে উপজেলার কৈজুরি, খুকনী ও জালালপুর এই ৩টি ইউনিয়নের ১০ গ্রাম ভাঙনের কবলে পড়ে ক্রমশ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। ফলে এ সব গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসের আতংকের চেয়ে বাড়িঘর সহায় সম্বল হারানোর আতংকেই বেশি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ভাঙনে এ সব গ্রামের কমপক্ষে ৪ শতাধিক বাড়িঘর, ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১টি চিকিৎসা কেন্দ্র, ২টি মসজিদ, ২টি ঈদগাহ মাঠ, ৫০টি তাঁত কারখানা, ৪০০ বিঘা আবাদি জমি, ৩ কিরোমিটার কাচা সড়ক, ১টি মাদ্রাসা, ১টি কবরস্থান, ১টি শ্মাশান ঘাট, ১টি মন্দর ও ২ শতাধিক গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এই ভাঙনকবলিত গ্রামগুলির মধ্যে রয়েছে, ব্রহ্মণগ্রাম, আরকান্দি, পাকুরতলা, পুঁটিপাড়া, বাঐখোলা, ঘাটাবাড়ি, ভেকা, জালালপুর, চিলাপাড়া ও হাট পাচিল। এ সব গ্রামের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকার মানুষ এই ভাঙনের তীব্রতায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে বেশকিছু ঘরবাড়ি, তাঁত কারখানা ও ফসলি জমি বিলিন হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত নূরু মির্জা, আমিরুল ইসলাম, আব্দুল হালিম, আব্দুল হামিদ আলী, এমদাদ আলী, ইউসুফ আলী, এমদাদুল হক মিলন, রাসেল সরকার, শাকিল আহমেদ, সাব্বির হোসেন, সিয়াম হোসেন, আলমগীর হোসেন, সাহেরা খাতুন, মোমেনা খাতুন, শাহাদ আলী, জসিম উদ্দিন, আলিমুদ্দিন, সিরাজুলইসলাম, পরমেশ^র সরকার, জানান, গত বছরের বন্যায় এ এলাকার প্রায় ৪ শতাধিক বাড়িঘর যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। এতে প্রায় ৪ শতাধিক মানুষ গৃহহীন হয়েছে। এ বছর সবেমাত্র নদীতে জোয়ার শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরুর এখনও ৩ মাস দেরি আছে। অথচ এরই মধ্যে নদীতে ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। ফলে তারা অস্তিত্ব সংকটে পড়েছি। আমরা করোনা ভাইরাসের আতংকের চেয়ে বাড়িঘর হারানোর আতংকে বেশি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। তারা আরো বলেন, বাঁধ নির্মাণের দাবীতে গত ৪ বছর ধরে মিছিল মিটিং ও মানববন্ধন করেও কোন কাজ হচ্ছে না। ফলে আমরা এখন প্রশাসনের প্রতি তারা আস্থা হারিয়ে ফেলেছি।
এ বিষয়ে খুকনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁদ মিয়া, জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ ও কৈজুরি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীতে এই অসময়ে ভাঙন নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এখানে এখনই এ পরিমাণ ভাঙন শুরু হয়েছে যে, এখানকার মানুষ করোনা ভাইরাসের চেয়ে নদী ভাঙ্গণে বাড়িঘর হারানোর আতংকেই বেশি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাই দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে এবারের বর্ষায় এ গ্রাম গুলি মানচিত্র থেকে চিরতরে মুছে যাবে। তারা আরো বলেন, স্থায়ী তীর সংরক্ষরণ বাঁধ নির্মাণ কাজ কবে শুরু হবে,সেই অপেক্ষায় থাকলে এসব গ্রাম সম্পূর্নরূপে অস্তিত্ব হারাবে। এই ভাঙন রোধে এখনই দ্রুত কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তারা বলেন, গত বছর এমন সময় রাজশাহী পাউবো’র উত্তর-পুর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী, বগুড়া পওর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক আব্দুল্লাহ, সিরাজগঞ্জ পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এ ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে রাজশাহী পাউবোর্ডের উত্তর-পুর্বাঞ্চলীয় প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী স্থানীয় বাসিন্দাদের বলেন, ব্রহ্মণগ্রামের নূরু মির্জার বাড়ি হতে পাচিল হয়ে চিলাপাড়া পর্যন্ত প্রায় ৮শ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ীভাবে তীর সংরক্ষণ বাঁধ ও ১০ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ের একটি প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে। আশা করছি তা দ্রুত সময়ের মধ্যে এ প্রকল্প অনুমোদন হয়ে কাজ শুরু হবে। তার এ আশ^াসে আমরা আশায় বুক বেধে ছিলাম। কিন্তু এক বছর পার হলেও সে কাজ এখনও শুরু হয়নি। ফলে আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি।
এ বিষয়ে পাচিল গ্রামের অধিবাসি ঢাকার মহাখালি বক্ষব্যাধি হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত বক্ষব্যাধি ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন এবং ইউনাইটেড হাসপাতালের কনসালটেন্ট অধ্যাপক ডা. শামছুল আলম বলেন, আসন্ন বর্ষা মৌসুমের আগেই যমুনা নদীর এ ভাঙন রোধ করা না হলে এ বছর শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী পাচিল গ্রাম সহ এখানকার ১০টি গ্রাম যমুনার ভাঙ্গণে বিলিন হয়ে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। এতে এ সব গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ জমিজমা ও বাড়িঘর সহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে। তাই আসন্ন বর্ষার আগেই এই ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোরদাবী যানাচ্ছি। 
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন,অচিরেই এখানকার ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু হবে। এটি হলে তখন আর এ সমস্যা থাকবে না।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ পানিউন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন,এখানকার ভাঙন রোধে প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্রহ্মণগ্রাম হতে হাটপাচিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকায় তীরসংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ, চর ড্রেজিং ও নদী শাসন রয়েছে। এ প্রস্তাবটি প্রি-একনেকে খসড়া আকারে অনুমোদনও হয়েছে। এখন একনেকে পাশ হলেই পরবর্তী প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া এ বছর বর্ষার আগে ভাঙন ঠেকাতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বালুর বস্তা ফেলের কাজ শুরু করা হবে। 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by