সিলেট

সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর যেন মরণ ফাঁদ

  প্রতিনিধি ১৭ আগস্ট ২০২০ , ৭:১৯:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

বাপ্পা মৈত্র, সিলেট : সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগরে সড়কে মৃত্যুর মিছিল কিছুতেই থামছে না। দিন দিন বেড়েই চলছে এ মৃত্যুর মিছিল। গত ১৪ দিনে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওসমানীনগর উপজেলার অভ্যন্তরেই প্রাণ হারিয়েছেন নারী শিশুসহ ১৩ জন যাত্রী। চালকেরা দাবি করছেন, এই মহাসড়কে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী খানাখন্দে ভরপুর রাস্তা ও হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করেই বেপরোয়া গতিতে চলা অবৈধ চালকদের সিএনজি অটোরিকশা। আউশকান্দি থেকে সিলেটের হুমায়ুন রশিদ চত্বর পর্যন্ত প্রায় ৫২ কিলোমিটার মহাসড়কের এসব দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা না বলে সড়ক হত্যা বলে মন্তব্য করছেন সচেতন মহল। সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে চলকদের অসচেনতায় এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। এই মহাসড়কে গত জুলাই মাসের ৩১ তারিখে ঈদুল আযহার আগের দিন সকালে ব্র্যাক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কর্মস্থল মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ থেকে ঈদের ছুটিতে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শ্যামারচর গ্রামে যাচ্ছিলেন। সাথে ছিলেন তাঁর স্ত্রী লাভলী রানী দাশ ও বড় ছেলে সৌরভ দাস (১২), শৈবাল দাস এবং সৌমিত্র দাস (৮)। ওই দিন সকাল সাড়ে ৭ টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওসমানীনগর উপজেলার বড়াইয়া চাঁনপুর নামক স্থানে কুমিল্লা টান্সপোর্ট নামক ঘাতক বাস-কার মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মারা যান ব্র্যাক কর্মকর্তা বাবা স্বপন কুমার দাস, স্ত্রী লাভলী রানী দাশ জমজ দুই সন্তান শৈবাল দাস এবং সৌমিত্র দাস (৮)। স্বপন কুমার দাশের বড় ছেলে সৌরভ গুরুতর আহত হয়ে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই মর্মান্তিক ঘটনার রেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই গত বুধবার (১২ আগস্ট) ঢাকা থেকে আসা এনা পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-১৫-০১১৯) মহাসড়কের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারে দুই মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দেয়। তখন মোটরসাইকেল আরোহী মো. মুজিব (১৮) নামে এক তরুণ মারা যান। তিনি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার গোলসা গ্রামের সদই মিয়ার পুত্র। এসময় আহত হন আব্দুস সালাম (৩৫)। ১২ আগস্টের এই দুর্ঘটনার একদিন পার হতে না হতেই আবারও রক্তে জড়ে এ মহাসড়কে। পরের দিন বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ৭ টার দিকে মহাসড়কের ওসমানীনগর উপজেলার সাদিপুরের ভাঙ্গা নামক স্থানে মামুন পরিবহনের সিলেট গামী একটি বাসের চাপায় একই পরিবারের ৪ জনসহ মোট ৬ জন নিহত হন। বৃহস্পতিবারে বাস চাপায় নিহতরা হলেন, ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার ইউনিয়নের পশ্চিম ব্রাহ্মণগ্রামের কামরু মিয়ার দুই শিশু কন্যা খাদিজা (২) ও কারিমা (৪), কমরু মিয়ার বড় ভাই ফজলু মিয়ার শিশুকন্যা আরিফা বেগম (১৪), কমরু মিয়ার বউয়ের বড় বোন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ভাদ্র গ্রামের আওয়াল মিয়ার স্ত্রী হামিদা বেগম (২৮), ওসমানীনগর উপজেলার মোবারকপুর গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে অটোরিকশা চালক জুনাইদ (২৮) ও একই গ্রামের ইউসুফ উল্যার ছেলে জাহাঙ্গীর মিয়া। স্থনীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটগামী মামুন পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৯৮৪৮) একটি বাস শেরপুরগামী সিএনজি অটোরিকশাকে (মৌলভীবাজার-থ-১১-৩৬৯১) ভাংগারবাজার নামক স্থানে চাপা দিলে এই মর্মান্তিক দুঘটনাটি ঘটে। ঘাতক বাসটি আটক করেছে শেরপুর হাইওয়ে থানা পুলিশ। দুর্ঘটনা ঘটার সময় রাস্তায় বাড়ি নির্মাণের বালু রাখা ছিল। এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জের আউশকান্দি পানিউমদা বাজার থেকে সিলেট হুমায়ুন রশীদ চত্তর পর্যন্ত সড়কে বড় বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। বড় বড় গর্তের কারণে রং সাইটে গিয়ে এসব দুর্ঘটনা হচ্ছে। অন্যদিকে সিএনজি অটোরিকশার চালককে স্টিকার দিয়ে গাড়ি চালানোর অবৈধ অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। যার কারণে এসব ঘটনা ঘটছে। তবে সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রশাসন। বরং মহাসড়কে অটোরিকশার চলাচল বন্ধ করতে এবং বেপরোয়া গাড়ি চলাচল রোধে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে শেরপুর হাইওয়ে থানার ওসি মো. এরশাদুল ভূইয়া বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশা বন্ধে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সব কিছু করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। জরিমানা করতে হলে ভ্রাম্যমাণ আদালত লাগবে। সে ক্ষমতা আমাদের নেই। এ ব্যাপারে ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশা যাতে চলতে না পারে সেজন্য আমি জায়গায় জায়গায় গিয়ে চালকদের বুঝাচ্ছি। পাশাপাশি মহাসড়কের পাশে রাখা বালু পাথর তুলে দিচ্ছি। এ ব্যাপারে ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমরা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মহাসড়কে অটোরিকশা চলতে পারবে না। মহাসড়ক জুড়ে সকল অবৈধ জিনিসপত্র সরিয়ে দিতে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by