দেশজুড়ে

সীতাকুণ্ডে মহামারী থেকে রক্ষা পেতে গ্রামবাসীর সিন্নি রান্না

  প্রতিনিধি ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৫:২৯:২১ প্রিন্ট সংস্করণ

কামরুল ইসলাম দুলু, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) :

গ্রামের গাছিরা একটি দিন কেউ রস বিক্রি করে না। ঔই দিন ভোর থেকে গাছিরা শত শত কেজি রস নিয়ে রাখেন এক জায়গায়। সেই রস দিয়ে রান্না হয় রসের সিন্নি। আর সেই সিন্নি খাওয়ানো হয় গ্রামের হাজারো মানুষকে। এভাবেই ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে প্রায় একশত ৩০ বছর ধরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের উত্তর ভাটেরখীল গ্রামে।

ওই গ্রামের বেশ কয়েকজন বয়োবৃদ্ধ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ১৩০ বছর আগে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে যখন গ্রামের অনেক মানুষ মারা যাচ্ছিল তখন কেউ একজন স্বপ্ন দেখেন যে, ঔই এলাকার এক কবরস্থানের পাশে সিন্নি রান্না করে সবাইকে খাওয়ালে এই মহামারী থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। তবে এই সিন্নি আল্লাহর ওয়াস্তে দিতে হবে। এবং সেচ্ছায় সিন্নি রান্নার কাজে সবাই সহযোগিতা করবেন। কারো থেকে জোরপূর্বক কোন টাকা পয়সা নেওয়া যাবে না। সেই থেকে শুরু।

শত বছর ধরে ঔই গ্রামের মানুষ প্রতি বছর এই আয়োজনটি পালন করে আসছে। আর এ আয়োজনে গ্রামের সবাই যার যার খুশিমতো নিজ অবস্থান থেকে অর্থ দান করে এই শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। প্রতিবছর শীতের একটি নিদিষ্ট দিনে উপজেলার উত্তর ভাটেরখীল বাইতুল মামুর জামে মসজিদ সংলগ্ন বড় কবরস্থানের পাশে ১৪ টি বড় ডেকে রস দিয়ে তৈরী করা হয় সিন্নি। একসাথে গ্রামের ৫ শতাধিক বিভিন্ন বয়সের মানুষ মাটিতে বসে খায়।

এরপর পুরো গ্রামের ঘরে ঘরে বিতরন করা হয় সিন্নি। ভাটেরখীল গ্রামের প্রবীণ বৃদ্ধ ৯১ বছর বয়সী ছালে আহমেদ বলেন, আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমি দেখে আসছি এবং আমার মা,বাবার কাছ থেকে শুনে আসছি গ্রামে রসের সিন্নি রান্না করে গ্রামের মানুষকে খাওয়াতে। এ রসের সিন্নি খাওয়াতে একটা ফজিলত আছে।

এ গ্রামের এক কলেজ প্রভাষক নাজিমুজ্জামান বলেন, আমার বাপ-দাদারা এটি আয়োজন করে আসছেন। আমরাও করে আসছি। ভবিষ্যতেও এই আয়োজনটা চলে আসবে। এটি আমাদের গ্রামের একটি ঐতিহ্য।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by