প্রতিনিধি ২৮ অক্টোবর ২০২৪ , ৬:৩৯:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ
রাঙ্গামাটির দূর্গম এলাকা লংগদুতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আয়োজনে ২৮ অক্টোবর তৎকালীন আওয়ামী সরকারের লগি-বৈইঠার তান্ডবের প্রতিবাদে আলোচনা সভা, দোয়া ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
২৮ অক্টোবর (সোমবার) বিকাল ৪ টায় উপজেলার বাইট্টাপাড়া বাজারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী লংগদু উপজেলার আয়োজনে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে আওয়ামী লীগের লগি বৈঠার তান্ডবের প্রতিবাদে আলোচনা সভা, দোয়া ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।
জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমীর মাওলানা মোঃ নাছির উদ্দীনের সভাপতিত্বে ও ওছমান গনির সঞ্চালনায় লংগদু উপজেলার স্থানীয় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সেক্রেটারি মাওলানা মো. জাহাঙ্গীর আলম।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী লংগদু উপজেলা নায়েবে আমীর মাওলানা এএলএম সিরাজুল ইসলাম,লংগদু সদর ইউনিয়নের সভাপতি মো. মঞ্জুরুল হক, মাইনীমুখ ইউনিয়ন (পশ্চিম) শাখার আমীর মো. আব্দুল জব্বার, আটারকছড়া ইউনিয়নের সভাপতি মাওলানা ফয়েজ আহমেদ, বগাচত্বর ইউনিয়নের সভাপতি ডা.ছিদ্দিকুর রহমান খোকন প্রমুখ।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আজ সেই ২৮ অক্টোবর। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কিত দিন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর। ঢাকার বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে চলছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব ঘোষিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। হঠাৎ এই শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থান করা আওয়ামী নরপশুরা লগি বৈঠা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করে। নির্মমভাবে হত্যা করে শিপন-মুজাহিদসহ ছয় জন মেধাবী ছাত্রকে। মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে অসংখ্য ছাত্র-জনতা। হত্যা করেই তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি, মৃত লাশের বুকের উপর এক অসভ্য ভঙ্গিমায় হিংস্র জানোয়ারের মত নেচে গেয়ে উল্লাস করে। যার ছবি ও ভিডিও গুলো সমস্ত বিশ্ব বিবেককে স্তব্ধ ও হতবাক করেছে। ফলে এদেশে একটি বাক্য মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হচ্ছে,”আপনি মানুষ না আওয়ামীলীগ?”
তারা আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আমরা বার বার সরকার পরিবর্তন হতে দেখেছি। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ চোরের দিক দিয়ে, লুটপাটের দিক দিয়ে, বার বার প্রথম হয়েছে। এই অবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে, আর এক্ষেত্রে আগামী দিনে আপনাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দক্ষ ও যোগ্য কর্মী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা। জামায়তে ইসলামীর নীতি ও আদর্শের আলোকে নিজেকে গড়ে তুলে আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে জামায়াতে ইসলামীর আহবানে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেন তিনি।
এ ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের বিবেকবান মানুষের হৃদয় নাড়া দিয়েছে। তবে সেদিন বাংলাদেশের ডান বাম সংগঠনের সকল বড় বড় সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী রাজনীতিবিদ আইনজীবীরা ঐ ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছিলেন এবং বিচারও দাবি করেন। শুধু বাংলাদেশ নয় পুরো পৃথিবীতে সেদিনের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ নিন্দা জানিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কর্মসূচি সফল করায় তার কর্মী বাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
বক্তারা আরও বলেন, সেদিনের বিভিন্ন টিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যায়, গুলিবর্ষণ ও লগি-বৈঠার তাণ্ডবের নেতৃত্বে ছিলেন ডা: ইকবাল ও হাজী সেলিম। তারা ক্ষমতায় থাকলেও হত্যা সন্ত্রাস করে আর না থাকলেও সন্ত্রাসই তাদের চরিত্র। ২০০১ সালে ডা: ইকবালের উপস্থিতিতে ও নির্দেশে চারজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করার সেই ঘটনা আজও দেশবাসীর মনে আছে। এ ছাড়া তাদের ১৯৭১-৭৪ আমলে ৩৭ হাজার নাগরিককে হত্যা করেছে, লুট করা হয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ, জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে হাজার হাজার বাড়ি ঘর। সেই বাকশালী চরিত্র যখন মানুষ ভুলতে বসেছে তখনই ১৯৯৬-২০০১ আমলে প্রায় ২০ হাজার মানুষকে হত্যাসহ ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে চরম হতাশায় নিমজ্জিত করেছিল। ২৮ অক্টোবর দেশব্যাপী যে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় তা আওয়ামী লীগের চরিত্রেরই ধারাবাহিকতা মাত্র।
আজ এই সমাবেশ থেকে আমরা বলতে চাই এখন সময় এসেছে ঐ খুনি হাসিনার সন্ত্রাসীদের পৈশাচিক নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের খুজে বের করে গ্রেফতার করতে হবে এবং তাদের উপযুক্ত বিচার করতে হবে।
সমাবেশ শেষে ২৮ অক্টোবর, ২০০৬ সালের আওয়ামী লীগের লগি বৈঠার তাণ্ডবের আলোকচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এবং হত্যাকান্ডে নিহত সকলের জন্য দোয়া করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা এএলএম সিরাজুল ইসলাম।