ভারত

‘ঢাকার বন্ধুসুলভ আচরণ সুনিশ্চিত ভাবা বন্ধ করতে হবে দিল্লিকে’ – ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সম্পাদকীয়

  প্রতিনিধি ৯ মার্চ ২০২১ , ৭:৪১:১২ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

ভারত বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু। বাংলাদেশও বরাবরই ভারতের প্রতি বন্ধুসুলভ আচরণ দেখিয়েছে। তবে ঢাকার এই অবস্থান সবসময় একই থাকবে, তা সুনিশ্চিত ধরে নেওয়া ঠিক নয়। বিশেষ করে চলতি বছর বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধরে রাখা ভারতের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

গত সোমবার ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সম্পাদকীয়তে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এভাবেই মূল্যায়ন করা হয়েছে। পাঠকদের জন্য ‘ফ্রেন্ডস ইন ডিড’ বা ‘প্রকৃত বন্ধু’ শিরোনামে লেখাটির সারমর্ম তুলে ধরা হলো-

কিছুদিন আগে ঢাকা সফরকালে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের প্রচেষ্টা ছিল শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, দিল্লির ‘লুক ইস্ট নীতি’তে এবং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে ভারতের ‘মূল অংশীদার’ হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরা।

বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠান উদযাপনে আগামী ২৬ মার্চ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের ভিত্তি প্রস্তুত করতে এই সফরে গিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। চলতি বছর আরও দুটি বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্য রয়েছে- পাকিস্তানের হাত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি, যেখানে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল এবং ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরে পদার্পণ।

 

এসব ঐতিহাসিক কারণের পাশাপাশি শক্তিশালী আন্তঃসীমান্ত ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক যোগসূত্র থাকায় বাংলাদেশে ভারতের জন্য সম্প্রীতির বিশাল এক ভাণ্ডার রয়েছে। তবে এ সম্প্রীতি সদা সুনিশ্চিত ধরে নেওয়া বন্ধ করতে হবে দিল্লিকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের মুখ থেকে বাংলাদেশ ও এর জনগণ সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্যগুলো সম্পর্কের ওপর কালো ছায়া ফেলেছে, বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকরের পর।

গত বছর ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ঢাকা সফর করেছেন এবং এ বছর ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অংশ নিয়েছে। এগুলো হচ্ছে গত কয়েক মাসের মধ্যে দেখা যাওয়া প্রথম নমুনা, যে ক্ষতি পূরণের চেষ্টা শুরু হয়েছে। এছাড়া ভারত বাংলাদেশকে করোনা ভ্যাকসিনের ২০ লাখ ডোজ উপহার দিয়েছে, যা কোনো বিদেশি রাষ্ট্রে পাঠানো এ ধরনের সবচেয়ে বড় চালান।

বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আগরতলায় কনটেইনার কার্গো পরিবহনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম, ত্রিপুরাকে বাংলাদেশের জাতীয় নৌপথের সঙ্গে সংযোগকারী অভ্যন্তরীণ দুটি নতুন রুট, ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ হস্তান্তর, কনটেইনার ও পার্সেল ট্রেনের চলাচল শুরু এবং জ্বালানি খাতে যৌথ উদ্যোগ গঠনের দিকে ইঙ্গিত করে জয়শঙ্কর দাবি করেছেন, সম্পর্কের ‘বাস্তব অগ্রগতি শুরু হয়েছে’।

তিনি বলেন, উভয়পক্ষই সম্পর্ককে পূর্ণ মাত্রায় প্রসারিত করতে কঠোর পরিশ্রম করছে। নিরাপত্তা, বাণিজ্য, পরিবহন ও যোগাযোগ, সংস্কৃতি থেকে শুরু করে মানুষের সঙ্গে মানুষের মেলবন্ধ আমাদের অভিন্ন সম্পদগুলোর উন্নয়নে নিশ্চয়তা দেয়।

india-3

এ অভিন্ন সম্পদের মধ্যে তিস্তা নদীর পানিও রয়েছে। এর পানি ভাগাভাগি করতে ঢাকাকে দেওয়া দিল্লির প্রতিশ্রুতি দীর্ঘদিন ঝুলে রয়েছে। ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক থাকা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রতিশ্রুতি পূরণে দিল্লিকে হিমশিম খেতে দেখেছেন এবং এই ইস্যুতে তাকে নিজের দেশেও চাপ নিতে হয়েছে।

মহামারির মধ্যেও দর্শনীয় অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সের কারণে আজকের বাংলাদেশ নতুন আত্মবিশ্বাসে ভাসছে। সামাজিক কল্যাণের বেশকিছু সূচকে এর অবস্থান ভারতের চেয়েও ভালো। এখন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পথ শুধু বাণিজ্য বা পানিসম্পদ বিভাগে পড়ছে না। পশ্চিমবঙ্গে যেহেতু নির্বাচন হতে চলছে, সেখানকার তারকা প্রচারকদের নির্বাচনী স্লোগানেও নজর রাখা হবে। ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোহিঙ্গা শরণার্থী ‘প্রত্যাবাসন’র জন্য এই মুহূর্তটিই বেছে নিয়েছে, যা অবাক হওয়ার মতো।

এ বছর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের তাৎপর্য ভারতীয় সরকারকে প্রতিনিয়ত মনে রাখতে হবে। নাহলে খুব সহজে মুহূর্তটি হাতছাড়া এবং এই অঞ্চলে চীনের প্রবেশের পথ প্রশস্ত হয়ে যেতে পারে।

আরও খবর

Sponsered content