প্রতিনিধি ১৮ মে ২০২২ , ৭:৩১:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ
বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি:
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার উপর দিয়ে রয়েছে ৩৭ কিলোমিটার হাইওয়ে সড়ক। নাটোর-ঢাকা ও নাটোর-পাবনা এই মহাসড়কটির বড়াইগ্রাম এলাকা এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত ১১ দিনে এই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় ১১ জন প্রাণ হারিয়েছে। পঙ্গুত্ব বরণ করেছে ৫ জন।
এছাড়া আহত হয়েছে কমপক্ষে ৮০ জন। দুই লেনের সরু সড়ক অথচ যানবাহনের চাপ অনেক বেশি এবং ঘন ঘন আকা-বাঁকা বাঁক বা মোড় থাকায় এই দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করছেন স্থানীয় সুধীজনেরা।
এছাড়া মহাসড়কের পাশে ট্রাক পার্কিং করার কারণেও দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে বলেও দাবি অনেকেরই। বনপাড়া হাইওয়ে পুলিশ যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ সহ মনিটরিং করেও লাভ হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুই মহাসড়কের দ্ইু প্রান্তে পুলিশ চেক পোস্ট বসালে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমবে।
গত ১১ দিনে জরিপ অনুযায়ী প্রথম সড়ক দুর্ঘটনা ৭ মে সকাল ১১ টায় নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের বড়াইগ্রামের গাজী অটো রাইচ মিলের সামনে ন্যাশনাল ট্রাভেলস্ ও সিয়াম স্পেশাল দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় ৬ জন এবং হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যায় ১ জন। এই দুর্ঘটনায় আহত হয় ৫০ জনের অধিক যাত্রী। নিহতরা হলেন, নাটোরের হরিশপুর পাইকরদোল গ্রামের শাজাহান আলীর দুই সন্তান সাদিয়া (১২) ও কাউসার (১৮)।
তাদের মা ওই বাসেই ছিলেন এবং অক্ষত ছিলেন। বাকী ৫ জন ন্যাশনাল ট্রাভেলস এর যাত্রী। নাটোর সরকারী এন.এস কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান (৪৫), লালপুর ওয়ালিয়ার রুহুল আমীনের স্ত্রী মোহনা আক্তার মিলি (২৬), হরিশপুর পাইকরদোলের আলমগীর হোসেন (৪৮), মাগুরার মিজানুর রহমান (৩০) ও টাঙ্গাইলের জলিল সেখ (৬০)। ওই দুর্ঘটনায় সিয়াম গাড়ির চালকের ডান পা ও ন্যাশনাল ট্রাভেলস এর হেলপারের বাঁ হাত বিছিন্ন সহ ৫ যাত্রী পঙ্গুত্ব বরণ করেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে। একই দিন সন্ধ্যায় অপর এক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়। নাটোর-পাবনা মহাসড়কের উপজেলার বনপাড়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তির নাম শামীম আহমেদ (২৮)। সে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার শিবপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে এবং পাবনা ব্রাক ব্যাংকের কর্মকর্তা ছিলেন।
১৭ মে নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের উপজেলার থানার মোড় এলাকায় দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে লিটন দফাদার (৪২) নামে এক ট্রাকচালক নিহত হয়েছেন। এসময় গুরুতর আহত হেলপারকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত লিটন যশোরের দেওগাছি এলাকার আব্দুল মালেক দফাদারের ছেলে।
সর্বশেষ গতকাল (১৮ মে) রাত ৩টার দিকে নাটোর-পাবনা মহাসড়কের উপজেলার নগর কয়েনবাজার এলাকায় বালু ভর্তি ট্রাকের সাথে যাত্রীবাহি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ৩ জন আহত হন। নিহত দুই জন হলেন, মাইক্রোবাসের চালক মনিরুজ্জামান (৩৫) ও যাত্রী আল-মাহবুব (৪৩)। নিহত চালক মনিরুজ্জামান চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের তালতলা পশুরহাট এলাকার আছির উদ্দিনের ছেলে ও যাত্রী আল-মাহবুব একই উপজেলার গহরপাড়া গ্রামের মৃত আদম আলীর ছেলে। আহতরা সকলেই মাইক্রোবাসের যাত্রী ও বাড়ি ওই একই এলাকায়। দুর্ঘটনার পর ট্রাকের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।
বনপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, সড়কে যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। এক্ষেত্রে সড়ক প্রশস্ত করা জরুরী। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে হাইওয়ে থানা পুলিশ তৎপর রয়েছে। তবে দীর্ঘ ৩৭ কিলোমিটার মহাসড়কের চলাচলকারী যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপুর্ণ জায়গাগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশি চেকপোস্ট স্থাপন করতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছেন।