প্রতিনিধি ৩ জুলাই ২০২৪ , ৬:৫৩:৫১ প্রিন্ট সংস্করণ
গত তিন দিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মৌলভীবাজারে দ্বিতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়েছেন তিন লাখের বেশি মানুষ। জেলার সবকটি উপজেলার অর্থাৎ সদর, রাজনগর, কুলাউড়া, বড়লেখা, কমলগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল ও জুড়ীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে চার উপজেলার কোথাও কোথাও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও তিনটিতে পানি বেড়ে নতুন করে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বুধবার (০৩ জুলাই) বিকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হওয়ায় পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি।
জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা তিন লাখ তিন হাজার ৩২৭ জন। আগামী দুদিন বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা আছে। গত দুদিন ধরে বাড়িঘর পানির নিচে তলিয়ে থাকায় জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ বেড়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বন্যাদুর্গত এসব এলাকায় স্যানিটেশন, গোখাদ্য, শিশুখাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে আছে মানুষ।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় বন্যার পানি আরও বাড়ছে। সেইসঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। রাজনগর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন ও সদরের তিনটি ইউনিয়নে গত দুদিনের চেয়ে পানি বেড়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় রূপ নিয়েছে। হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখায় বন্যাকবলিত মানুষজন কষ্টে দিন পার করছেন। বিশেষ করে কুলাউড়া উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখের বেশি মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও পানি ঢুকেছে। পানির নিচে তলিয়ে আছে কুলাউড়া পৌরসভার পাঁচটি ওয়ার্ড, উপজেলা পরিষদ, জুড়ী উপজেলা পরিষদ ও আশপাশের বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাট। সবকিছু ডুবে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারছে না মানুষ।
কুলাউড়ার বাসিন্দা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট সব ডুবে আছে। ঘরের জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। থাকার মতো কোনও অবস্থা নেই। চারদিকে পানি। যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। এ অবস্থায় আমাদের কাছে এখনও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। খুব কষ্টে আছি আমরা।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, গত সোমবার রাত থেকে মনু ও কুশিয়ারাসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। বুধবার মনু নদীর পানি চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং কুশিয়ারার পানি শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে জুড়ি নদীর পানি। তবে ধলই নদীর পানি বিপদসীমার ১৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় কুলাউড়া জুড়ি ও বড়লেখায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। সদর উপজেলার হামরকোনা এলাকায় কুশিয়ারা নদীর তীররক্ষা ২০-২৫ ফুট বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওসব এলাকার মানুষজন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জিওব্যাগ ফেলে বাঁধ মেরামতের কাজ করছেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘জেলার সবগুলো নদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। কুশিয়ারার খলিলপুর এলাকায় পাউবোর স্থায়ী কোনও বেড়িবাঁধ নেই। তীররক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম বলেন, ‘জেলার ৯৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকেছে। আর আশ্রয়কেন্দ্রে হিসেবে চালু আছে ৬৪টি। সেগুলোতে পানি প্রবেশ করেনি।’
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, ‘জেলার ৩৮টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সেগুলো বন্যা ঘোষণা করা হয়েছে।’
বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বলে জানালেন জেলা প্রশাসক উর্মি বিনতে সালাম। তিনি বলেন, ‘বাঁধ উপচে নদ-নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকছে। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত পানিবন্দি অবস্থায় আছেন তিন লাখ তিন হাজার ৩২৭ জন। বন্যাকবলিতদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে। কিছু বিতরণ করা হয়েছে। চিকিৎসা সহায়তায় ইউনিয়নভিত্তিক মেডিক্যাল টিম কাজ করছে।’