বাংলাদেশ

অনমনীয় রাজনৈতিক মনোভাব, সংঘাতের দিকে ঝুঁকছে দেশ

  প্রতিনিধি ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩:১৩:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

অনমনীয় রাজনৈতিক মনোভাব, সংঘাতের দিকে ঝুঁকছে দেশ

শিগগির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় আগামী বছরের জানুয়ারি। মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকলেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এখনো বাগযুদ্ধ চলছেই। ক্ষমতাসীন ও বিরোধীপক্ষ নিজ নিজ দাবি বা অবস্থানে অনড়। এ অবস্থায় ঘনীভূত হচ্ছে সংকট। জনমনে তৈরি হচ্ছে শঙ্কা।

পাড়ার চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে বন্ধু মহল, অফিস-আদালত, সংবাদ-টকশোসহ সব জায়গায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এ নির্বাচন। কেমন হবে আগামী সংসদ নির্বাচন? বিএনপি বা সমমনা দলগুলো অংশ নেবে কি না? ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতোই হবে এ নির্বাচন? প্রধান দুই বড় দল অনড় অবস্থানের পরিণতি কী? এমন সব প্রশ্নই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

সাধারণ মানুষের এসব প্রশ্ন — তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের তৃণমূল নেতা ও কেন্দ্রীয় নেতা, আমলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বিশিষ্টজনের সঙ্গে।

সমঝোতা না হলে তো সংঘাত অনিবার্য। আমাদের রাজনীতিবিদরা কি দেশকে সেই সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবেন, নাকি সমঝোতা করবেন। এটা তাদের ওপর নির্ভর করছে।

সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে হবে’, এটি আওয়ামী লীগের এক দফা দাবি। বিপরীতে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর দাবি, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।’ সম্প্রতি দেশি-বিদেশি নানান পক্ষের আলোচনা ও প্রস্তাবনায় এ বিষয়ে অবস্থান পরিবর্তন করেনি কোনো দল। তফসিল ঘোষণার দিনক্ষণ দ্বারপ্রান্তে, এমন সময়ে দুই দলের অনড় অবস্থান সবার কপালেই চিন্তার ভাঁজ তৈরি ফেলছে। এ নিয়ে ভয়ও আছে অনেকের মধ্যে। সরকার সমর্থকদের চিন্তা, ‘সবকিছু সামাল দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করে থাকতে পারবে আওয়ামী লীগ?’ বিরোধীরাও ভাবছে- ‘এবারও আন্দোলন করে সফল না হলে অস্তিত্ব রক্ষা করা যাবে তো?’ যদিও উভয়পক্ষই প্রকাশ্য আলোচনায় নিজেদের বেশ আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছেন।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘দু’পক্ষ তাদের দাবিতে অনড়। যদিও আমরা মনে করি, কখনো না কখনো তারা একটা সমঝোতায় যাবে বা সমঝোতা করার চেষ্টা করবে। যদি সমঝোতা না হয়, কিছুটা সংঘাত তো হবেই। আমাদের সংবিধানে যা আছে, সেটাকে সামনে রেখে ভবিষ্যদ্বাণী ওইভাবে করা সম্ভব নয়।’

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সমঝোতা না হলে তো সংঘাত অনিবার্য। আমাদের রাজনীতিবিদরা কি দেশকে সেই সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবেন, নাকি সমঝোতা করবেন। এটা তাদের ওপর নির্ভর করছে।’

সরকার সমর্থকদের ধারণা— এরই মধ্যে বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পেয়েছে। আন্দোলনে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে পারবে না। চলমান এ পরিস্থিতির মধ্যেই আওয়ামী লীগ ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করে ফেলবে। তেমন পরিবর্তন হবে না।

এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান, আরপিও, নির্বাচন কমিশন আইন ও বিধিমালা, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালাসহ জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত সব আইন ও বিধি মোতাবেক কোনো সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার সুযোগ নেই। নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে, সরকারের অধীনে নয়। সরকার থাকবে নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যাবলি ছাড়া রুটিন কাজ সম্পন্ন করা এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য। সংঘাতমূলক পরিস্থিতি উদ্ভবের সব চেষ্টা জামায়াত-বিএনপি করবে। তা প্রশমন ও দমন করার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা আসন্ন নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কায় আছেন, তাদের উচিত নির্বাচন কমিশন এবং প্রচলিত আইন ও বিধিগুলোর প্রতি অধিকতর মনোনিবেশ করা। বাংলাদেশের সংবিধান এবং নির্বাচনকালে প্রযোজ্য সব আইন ও বিধির মধ্যে স্থায়ী সমাধানের পথ রয়েছে।’

উভয় দলের অনড় অবস্থানে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন কি না? এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত দুই নির্বাচনে (২০১৪ ও ২০১৮) মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ আছে। মানুষ ভোট দিতে চায়। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও তাদের কিছু সুবিধাভোগী নামসর্বস্ব দল ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দল নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নেমেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের জেদ, অনমনীয়তা, অসহিষ্ণুতা এবং ক্ষমতা না ছাড়ার প্রবণতা দেশকে অবশ্যম্ভাবী রক্তপাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

এ বিষয়ে কথা হলে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবু জাহির বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমরা যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি উত্থাপন করেছিলাম। তৎকালীন সরকারপ্রধান খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘শিশু আর পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়।’ তখন তাদের কর্মকাণ্ড আর আমাদের আন্দোলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যৌক্তিকতা প্রমাণ করেছে। তারা বাধ্য হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে।’

‘পরবর্তীসময়ে কোর্ট এ ব্যবস্থাটিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল করে দিয়েছে। যদিও অবজারভেশনে কোর্ট এও বলেছে, সংসদ যদি মনে করে আরও দুই মেয়াদে সেটা থাকতে পারে। তখন সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেন। যেখানে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদসহ অনেকে ছিলেন। এটা নিয়ে একাধিক বৈঠকও হয়েছে। সেখানে বিএনপির প্রতিনিধিরা কোনো বৈঠকে এসে কোর্টের অবজারভেশন ফলো করার প্রস্তাব দেননি। যে কারণে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আমরা কোর্টের রায়টাকে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি।’

আরও খবর

Sponsered content

Powered by