রাজশাহী

উত্তাল পুনর্ভবা এখন বালুচর

  প্রতিনিধি ১৬ মার্চ ২০২১ , ৮:১৬:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

পোরশা (নওগাঁ) :

এক সময়ের উত্তাল পুনর্ভবা নদী নাব্যতা হারিয়ে এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। সীমান্তবর্তী উপজেলা পোরশার নিতপুর ইউপির পাশ দিয়ে প্রবাহিত। এ নদীতে এক সময় ঢেউয়ের তালে চলাচল করতো অসংখ্য পাল তোলা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার।

ভাটিয়ালী ও পল্লিগীতি গানের সুরে মাঝিরা নৌকা নিয়ে ছুটে চলতো চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, গোমস্তাপুর, রহনপুর, নাচোলসহ বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে।

উপজেলাগুলির বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা বড়বড় হাট-বাজার গুলিতে ব্যবসার জন্য মাঝিমাল্লা তাদের ছোট-বড় নৌকায় পাল তুলে ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, কালাই, গম সহ বিভিন্ন রকম পন্য নিয়ে ব্যবসায়ীরা ছুটে চলতেন। শুধু পন্যই নয়। হাটবাজার গুলোতে বিক্রির জন্য তারা নিয়ে যেতেন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। সে সময় নদীটি ছিল পূর্ন যৌবনা।

নদীটিকে যোগাযোগের মাধ্যম করে অসংখ্য ব্যবসায়ী ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদের জীবন জীবিকার শক্ত ভীত প্রতিষ্ঠা করেছিল। শুধু একাধিক হাটবাজার নয়। এ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল অনেক জনপদ। আর নদীর পানি দিয়ে কৃষকরা দুই পাড়ের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ধানসহ সবুজ ফসল ফলাতো।

প্রকৃতির অফুরন্ত পানিতে নানা ফসলে ভরে উঠতো নদীর দুই ধারের ফসলের ক্ষেত। ছোট বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরও অফুরন্ত উৎস ছিল এই পুনর্ভবা। মাছ পাওয়া যেত সারা বছর ধরে। জীবিকা নির্বাহের জন্য জেলেরা রাতদিন ডিঙি নৌকায় জাল নিয়ে চষে বেড়াতো মাছ ধরার জন্য। সেই মাছ বিক্রি করেই অসংখ্য জেলে পরিবারের সংসার চলতো।

সে সুবাদে জীবিকার সন্ধানে নদী সংলগ্ন পাশের গ্রাম গুলিতে অসংখ্য জেলে পরিবারের বসতি গড়ে উঠেছিল। বর্তমানে জেলে পরিবার নেই বললেই চলে। সময় গড়িয়ে চলার সাথে সাথে সেই ভরা যৌবনা পুনর্ভবা এখন বালুচরে পরিণত হয়েছে। দুই ধারের পাড় গুলো হয়েছে কৃষি জমি। আর নদী গর্ভে জেগে উঠা উচুঁ চরে এলাকার শিশুরা খেলছে ক্রিকেট, বল সহ বিভিন্ন খেলা।

জেলে পরিবার গুলো হয়ে গেছে প্রায় বিলীন। আর সে সময়ের ব্যবসা বণিজ্যের কেন্দ্রগুলি হয়ে গেছে চিরতরে বন্ধ। থমকে গেছে নদী। নিভে গেছে বিপুল সম্ভবনা জাগানো বিভিন্ন কর্মকান্ড। নদী কেন্দ্রীক সম্ভবনাগুলো নিভে গেলেও কেউ কখনও এসব নিয়ে ভাবেনি।

নদীটি কখনও খনন বা ড্রেজিং করা হয়নি। এমনকি রক্ষণাবেক্ষণের কোন উদ্যোগ নেয়নি কোনদিন। খনন না করার ফলে নদীটি ফসলের জমিতে পরিণত হয়েছে। এ সুযোগে অনেকেই ধান চাষ করছেন। সরকারিভাবে নদীটি খননের পদক্ষেপ নেয়া হলে অন্তত বালুচরে পরিণত হতো না বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। এভাবে চলতে থাকলে এক সময়ের উত্তাল পুনর্ভবা মানচিত্র থেকেই বিলিন হয়ে যাবে বলে অনেকে মনে করছেন।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হামিদ রেজা জানান, বর্তমান সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় নদী খননের লক্ষ্যে জরিপ কাজ করছেন।

এরই অংশ হিসাবে সরকারের জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল পুনর্ভবা খননের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জরিপ করেছেন। হয়তোবা দেশের অন্যান্য এলাকার নদীগুলির সাথে পুনর্ভবারও খনন কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by