রংপুর

উলিপুরে পোকার আক্রমণে হতাশ বেগুন চাষিরা

  প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৩:১৫:১২ প্রিন্ট সংস্করণ

উলিপুরে পোকার আক্রমণে হতাশ বেগুন চাষিরা

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ডোগা কাটা ও ছিদ্র করা পোকার আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বেগুনচাষিরা। কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পোকার আক্রমণে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হওয়ায় এবার বেগুন চাষ করে বেশির ভাগ কৃষক পড়ছেন লোকসানের মুখে। বেগুনের ক্ষেত ও ফলন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। এভাবে বেগুনের ক্ষেতে পোকার আক্রমণ চলতে থাকলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে তারা দাবী করেন। পোকার আক্রমণে বিভিন্ন এলাকার বেগুন ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারণ কৃষকেরা না বুঝে ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করছেন। তাদের অভিযোগ করে বলেন, সময়মতো উপজেলা কৃষি অফিস থেকে চাষিদেরকে সঠিক পরামর্শ দিলে পোকার আক্রমণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতো। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সবজি চাষের লক্ষ্য মাত্রা প্রায় ৫২০ হেক্টর। যা অর্জিত হয়েছে। এর মধ্যে বেগুনের চাষ রয়েছে। বেগুন চাষ একটি লাভজনক ফসল। অল্প খরচে দ্বিগুণ লাভ করা যায়। তবে এবারে বৈরি আবহাওয়ার কারণে বেগুনে বিভিন্ন ধরনের রোগবালাই পোকামাকড় দেখা দিয়েছে। 

উপজেলা কৃষি আফিস থেকে বেগুন চাষিদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া অব্যাহত রয়েছে।

সরেজমিন উপজেলার দক্ষিন দলদলিয়া টাপুরকুটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেগুন চাষিরা পোকা আক্রান্ত বেগুন গাছের কচি কচি ডোগা গুলো ক্ষেত থেকে উঠিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিদিন বেগুনের গাছ থেকে যে ডোগা বের হচ্ছে ক্ষতিকর পোকা সেখানেই আক্রমণ করছেন। তারা বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক সহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যাবহার করে পাচ্ছেনা কোন প্রতিকার। নিরুপায় হয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এ এলাকার কৃষকেরা। তারা জানান, আমরা কীটনাশকের ব্যবহার জানা না থাকায় আমরা বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করে প্রতিকার পাচ্ছিনা। তারা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তাদের পরামর্শ পেলে এরকম ক্ষতির মধ্যে পরতে হতনা। তারা এখন লাভের আশা ছেড়ে দিয়েছে। যা খরচ হয়েছে তাই পাবেন কিনা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তারা এনজিও অফিস থেকে লোনের টাকা নিয়ে বেগুন সহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজির চাষাবাদ করে থাকেন। ফসলের মধ্যে এরকম মহামারি দেখা দিলে ফলন সঠিকভাবে না পেলে লোকসানের মুখে পড়ে গেলে কিভাবে কিস্তির টাকা পরিশোধ করবেন আবার কিভাবে সাংসার চালাবেন বলে জানান তারা। 

উপজেলার দক্ষিন দলদলিয়া ইউনিয়নের টাপুরকুটি গ্রামের বেগুনচাষি এরশাদুল হক জানান, ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে অন্যান্য সবজির পাশাপাশি তিনি ক্ষেতে বেগুন চাষ করে আসছেন। এবারে ২৩ শতক জমিতে  বেগুন চাষ করেছেন। কিন্তু এর আগে কখনো এত পোকার আক্রমণ দেখেননি। আক্রমণ হলেও অনেক কম হয়েছিলো। বেগুন আসার সাথে সাথে ছিদ্র করে দিচ্ছে বেগুন। তা ছাড়া প্রতিদিন অসংখ্য ডোগা কেটে দিচ্ছে পোকায়। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এ পর্যন্ত অনেক টাকার বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পাননি। এসব কীটনাশকের মধ্যে মানিক, সুরেশ, সেতারা, পাইন উল্লেখযোগ্য।কৃষক এরশাদুল হক আরো বলেন, ২৩ শতক বেগুন চাষে তার ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হবে। এভাবে পোকার আক্রমণ চলতে থাকলে লোকশানের মুখে পড়তে হবে আশঙ্কা করছেন এ কৃষক। 

একই এলাকার বেগুন চাষি শহিদুর রহমান, কজির উদ্দিন, আবেদ আলী, শাহেব আলী ও জরাব মিয়া সহ আরও অনেকে বলেন, আমরা বেগুন চাষ করে অনেক বিপদে পড়েছি। যেভাবে পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে তাতে লাভ তো দূরের কথা আসল টাকাই পাওয়া যাবেনা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, বেগুনের পোকা এলে এবং ডেমো কাটলে কীটনাশক বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করলে দমন হয় না। বেগুনের পোকা মারার একমাত্র উপায় হচ্ছে সেক্সফ্রোমন ফাঁদ। কৃষকেরা বেগুন ক্ষেতে এ ফাঁদ বসালে দু-এক দিনের মধ্যে পোকা দমন হয়ে যাবে। এধরণের পরামর্শ আমাদের কৃষি অফিস থেকে এবং  উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ প্রতিনিয়ত মাঠে কৃষকদের মাঝে দিয়ে আসছেন। 

আরও খবর

Sponsered content