দেশজুড়ে

সিনেমা-সিরিজ দেখে ধারনা নিচ্ছে কিশোর অপরাধীরা!

  প্রতিনিধি ৩১ জানুয়ারি ২০২১ , ১২:৩৮:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক:

 

দেশে  বর্তমানে কিশোর অপরাধ লাগামহীন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরাধজগত নিয়ে তৈরি টিভি সিরিজ ও ক্রাইম-অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার ঘরানার  সিনেমা দেখে দেখে কিশোররা শিখছে অপরাধের কৌশল।এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে এই কিশোররাই।

 

মুখোশ পরা অবস্থায় দুই নিরাপত্তারক্ষীকে আহত করে রূপালী ব্যাংকের একটি শাখার ভেতর ঢুকে পড়ে ওই এসএসসি পরীক্ষার্থী। প্রথমে দাহ্য পদার্থ ছোড়ে, তারপর ছুরিকাঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে দুই আনসার সদস্যকে। পরে ছাদের সিঁড়িঘরের তালা কেটে ভেতরে ঢুকলেও ব্যাংকের ভল্ট ভাঙতে ব্যর্থ হয়।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা বলেন, ‘এই বয়সে যে অপরাধের পরিকল্পনা করেছে ছেলেটি, তা চমকে যাওয়ার মতো। একজন পেশাদার অপরাধীর চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছিল সে। একটি সিনেমা দেখে এবং ডার্ক ওয়েবের জগতে ঘোরাফেরা করেই এমন অপরাধ করার সাহস যুগিয়ে ফেলে ও। প্রায় ২০ দিন চেষ্টার পর আমরা তাকে গ্রেফতার করি।’

ভারতীয় সন্ত্রাসী পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তির গাড়িতে নকল বোমা রেখে ২০ লাখ টাকা চেয়ে হুমকি দেয় মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের এক কিশোর। গ্রেফতারের পর স্বীকার করেছে, সিনেমা দেখে আইডিয়াটা পেয়েছে ও। হিন্দিও শিখেছে সময় নিয়ে। হুমকি দেওয়ার ভাষা রপ্ত করতে সময় নিয়েছে তিন মাস। আর প্রথমেই টার্গেট হিসেবে বেছে নেয় রাজধানীর গুলশানে থাকা বাবার অফিসের বসকে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘কিশোরটি হিন্দি সিনেমা, সিরিয়াল, ইউটিউব দেখে নকল বোমা বানানো এবং সন্ত্রাসী পরিচয়ে হুমকি-ধামকি দেওয়ার কৌশল শিখেছিল। সম্প্রতি রাজধানীতে বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদা দাবি করার মতো ঘটনা ঘটছে। যদিও দেশে শীর্ষ সন্ত্রাসী বলে আলাদা কোনও শ্রেণি নেই। কেউ যদি এমন ঘটনার শিকার হন তাদের উচিৎ দ্রুত পুলিশকে জানানো।’

মহানগর ডিবি পুলিশের এই প্রধান কর্মকর্তা বলেন, ‘এই ধরনের কিশোরদের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রথমে পরিবারকেই এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে তারা হুমকি হয়ে উঠবে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এ ধরনের অ্যাডভেঞ্চার করার সুযোগ পাবে না।’

অন্যদিকে সাতক্ষীরার কলারোয়াতে ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে নিজের ভাই, ভাবিসহ পরিবারের চারজনকে খুন করেন এক যুবক। কোমল পানীয়র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতন অবস্থায় চাপাতি দিয়ে তাদের হত্যা করেন তিনি।

খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, কিছু টিভি শো খুনকে এমনভাবে উপস্থাপন করে, যাতে মনে হবে ওটা খুব সহজ ও স্বাভাবিক ঘটনা। আর তা দেখেই একশ্রেণির মানুষের ভয় কেটে যাচ্ছে। তারা বুঝতেও পারছেন না, কত বড় অপরাধ করে ফেলছেন।

 

কিশোরদের এমন অপরাধের বিষয়ে জানতে চাইলে এভারকেয়ার হাসপাতালের মনস্তত্ত্ববিদ তারানা আনিস বলেন, ‘কিশোর বয়সে মনে নানান অ্যাডভেঞ্চার কাজ করে। এ বয়সে তারা নিজেকে প্রকাশ করতে চায়। কৌতুহলের বশে নতুন কিছু জানতে চায়, করতে চায়। এমনও হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা শিক্ষামূলক কোনও কনটেন্ট হয়তো সার্চ করছিল, কিন্তু পাশে নিষিদ্ধ কনটেন্টও চলে আসছে। অপরাধে প্ররোচিত করে এমন ভিডিও, টিভি শো, সিনেমা চলে আসছে। তখন তারা ওটার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করছে তাদের বয়সের কারণে। তাই বয়সভিত্তিক স্টোরি ফিল্টারিং জরুরি। সঙ্গে পরিবারকেও খেয়াল রাখতে হবে।’

এই মনস্তত্ত্ববিদ আরও বলেন, ‘শুধু এসবই নয়; মা-বাবার অযত্ন ও অবহেলা, উদাসীনতা, সুষ্ঠু বিনোদনের সঙ্কট, মাদকসেবন, খারাপ সঙ্গসহ আরও অনেক কারণেই কিশোররা অপরাধী হয়ে উঠছে।’

মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, ‘ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা তার সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপরও নির্ভর করে। যারা মানুষ খুন করা বা বড় অপরাধ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়, তাদের মধ্যে একধরনের হিরোইজম কাজ করে। তারা নিজের শক্তি, সাহস, ক্ষমতা দেখিয়ে অন্যদের মনে ভয় ছড়াতে চায়, নজর কাড়তে চায়। এসব বন্ধে পারিবারিক শিক্ষা প্রয়োজন। প্রয়োজন সুষ্ঠু বিনোদনের।’

আরও খবর

Sponsered content

Powered by