দেশজুড়ে

কালকিনিতে গ্রাম শুকুর মাহমুদ চিকিৎসা সেবায় অসহায় মানুষের একমাত্র ভরশা

  প্রতিনিধি ১৫ এপ্রিল ২০২০ , ৮:১৭:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

মাদারীপুর প্রতিনিধি: সারাবিশে^ প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসে লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৭ লাখ। বাংলাদেশেও করোনার ভয়াল থাবা প্রসারিত করছে। জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে  করোনা ভাইরাস সংক্রমনের ঝুকি মাথায় নিয়ে ‘জীবন জীবনের জন্য, মানুষ মানুষের জন্য’ এই শ্লোগানকে বুকে ধারন করে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার মজিদবাড়ি (ভূরঘাটা) বাজারে বরিশাল মেডিকেল হলে গ্রাম ডাক্তার সৈয়দ শুকুর মাহমুদ সুজন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিনরাত অসহায় মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি অনেক সময় রোগীদের ফোন পেলে বাড়িতে গিয়েও চিকিৎসা দিয়ে আসছেন তিনি। উপজেলার বেশিরভাগ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবা না পেয়ে সাধারণ রোগীরা এখন গ্রাম ডাক্তার সুজনের শরণাপন্ন হয়ে সেবা নিচ্ছে। সুজনের চেম্বারে গেলে দেখা যায় প্রতিদিন সকাল-বিকেল এমনকি রাতেও তিনি সেবা দিয়ে আসছেন। এখন সুজনই অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরশা। তার চেম্বারে আসা রোগীদের উপসর্গ দেখে সাধারণ রোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন। পাশাপাশি করোনার উপসর্গ সন্দেহ হলে সরকারি উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তার দাবী ‘মানুষের সেবার জন্য ডাক্তারী পেশায় এসেছি। মৃত্যু তো একদিন হবেই তখন ভয় পেয়ে লাভ কি। নিজে নিরাপদে থেকে গরীব অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। আমার কাছে যে সব রোগী আসেন তারা তো আমাদেরই ভাই বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব। তাদের ফিরিয়ে দেওয়া ডাক্তারী পেশার মধ্যে পড়ে না।’
স্থানীয় একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা উপজেলার পশ্চিম পূয়ালী গ্রামের সেলিনা বেগম বলেন, ‘বাবুর ঠান্ডা-কাঁশি। আসছিলাম শিশু ডাক্তার দেখাইতে, দুইদিন আইসা ফিররা গেছি। পরে বাড়ির পাশে আমাগো কাকারে (গ্রাম ডাক্তার) দেখাইছি। এখন বাবু ভাল হইয়া গেছে’। 
কালকিনি প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক মোঃ জাফরুল হাসান বলেন, এক সময় গ্রাম ডাক্তারদের অবহেলার চোখে দেখা হতো, কিন্তু তারাই আজ জাতির ক্রান্তিলগ্নে চিকিৎসা সেবা নিয়ে এগিয়ে আসছেন। আসলে গ্রাম ডাক্তার সুজন একজন ভাল মনের মানুষ। তার কোন চাহিদা নেই। এবংকি তার কোন নির্ধারিত ফি নেই। রোগীরা তাদের সমর্থ অনুযায়ি যা দেয় তাই সে রাখেন। এবং অনেক সময় টাকা না থাকলে ফ্রি চিকিৎসা পত্র দিয়ে দেন।
গ্রাম ডাক্তার সৈয়দ শুকুর মাহমুদ সুজন বলেন, “আমার চেম্বারে অনেক রোগীর চাপ এবং সরকারী নির্দেশনা থাকায় করোনা রোগী আসতে পারে না। যানবাহন চলাচল না করায় পায়ে হেঁটে অনেক দূর থেকে বহুরোগী আমার কাছে আসে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবং মানবিকতার বিচারে রোগীর সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এই মহামারীতে মানুষের পাশে আছি। জটিল রোগী হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমরা সরকারী হাসপাতালে রেফার করি।” 
বাংলাদেশ গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির মাদারীপুর জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: জুয়েল বেপারী বলেন, ‘মাদারীপুর জেলায় সৈয়দ শুকুর মাহমুদ সুজনরে মত ৭৫০ জন গ্রাম ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আমার গ্রাম ডাক্তার ভাইরা এই দুর্যোগকালীন মুহুর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মানুষকে সেবা করছে। সবাই আমার সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন। আমি তাদের বলেছি, এই দুর্যোগকালীন সময়ে দেশের পাশে থাকলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাদের পাশে থাকবেন।” 
এ ব্যাপারে মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, যারা গ্রাম ডাক্তার রয়েছেন, তারা যে প্রাথমিক সেবাটি দিচ্ছেন আমি সেটাকে মন্দ বলবো না, তবে তারা যেন নিজেদের সুরক্ষিত রেখে সেবা দেন। আর যতদূর সম্ভব টেলিমেডিসিন পদ্ধতি ব্যবহার করে মোবাইলেরর মাধ্যমে সেবা দেন।
 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by