প্রতিনিধি ৯ মে ২০২১ , ৭:১৫:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
নগরীর অনিন্দ্য সুন্দর সকালের পিচঢালা পথকে রক্তাক্ত করে তুলছে তারা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভোর কিংবা গভীর রাতে ঘটছে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা।
তাছাড়া ভদ্র চেহারার যাত্রীবেশে বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, সদরঘাট এমনকি বিমানবন্দরে ঘুরে যাত্রীদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারের পর কারামুক্ত হয়ে তারা একই কাজে জড়িয়ে পড়ছে। ওই কারণে তারা খুব সতর্কতার সঙ্গে প্রতারণা করার চেষ্টা করে।
এবার করোনার কারণে লকডাউন থাকায় প্রথমদিকে অপরাধ তৎপরতা কিছুটা কম ছিল। সম্প্রতি লকডাউন শিথিল হওয়ায় মানুষের চলাফেরা বেড়েছে। কারখানা, শপিংমল খুলে দেয়া হয়েছে। শহরে রাত-দিন বেড়েছে অস্বাভাবিক যান চলাচল। আর এ সুযোগেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে মৌসুমি অপরাধী চক্র।
ছিনতাইকারী, মলমপার্টি, অজ্ঞানপার্টি, চাঁদাবাজচক্রসহ নানা কিসিমের অপরাধীরা এখন শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কোথাও ক্রেতা সেজে আবার কোথাও ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে শপিং ব্যাগ, নগদ অর্থ, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মালামাল।
বিশেষ করে নগরীর শপিং কমপ্লেক্স, মিমি সুরার কমপ্লেক্স, আফমি প্লাজা,সানমার ওশান সিটি,নিউমার্কেট, রিয়াজুদ্দিন বাজার,জহুর হকার্স মার্কেট ও টেরিবাজার এলাকা থেকে মোবাইল ও নগদ টাকাসহ ব্যাগ,ভ্যানিটি ব্যাগসহ মালামাল খোয়া যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি।
আইনি ঝামেলা এড়াতে ক্ষতিগ্রস্থ অধিকাংশই থানায় অভিযোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে শুধুমাত্র মার্কেট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেই বাড়ি ফিরে যায়।
এ বিষয়ে পুলিশও জানিয়েছে, কিছু ভুক্তভোগী মামলা করেন, অনেকেই করেন না। কোনো থানা যদি ছিনতাইয়ের মামলা না নিতে চায়, তবে ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের জানাতে বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এবার ঈদের আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। পাল্টেছে অভিযানের কৌশলও। এরপরও অপরাধীদের দৌরাত্ম্য থেমে নেই। ঈদের কেনাকাটায় মানুষের ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়ায় ছিনতাইসহ মৌসুমি অপরাধীরা মাঠে নেমেছে।
আর ছিনতাইসহ মৌসুমি অপরাধী ধরতে এরই মধ্যে অভিযান শুরু করেছে পুলিশের একাধিক টিম। সেই সাথে কাজ করছে র্যাবও। অপরাধী ধরতে ছদ্মবেশে নগরীর ব্যস্ত জায়গা ও শপিংমলগুলোর পাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
তারই ধারাবাহিকতায় রমজান শুরুর পর থেকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে শতাধিক ছিনতাইকারীকে। গেল কদিনেই পুলিশের জালে গ্রেফতার হয়েছে অন্তত অর্ধ শতাধিক অপরাধী।
শুধু কোতোয়ালি থানা পুলিশ একাধিক অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে ৩০ ছিনতাইকারীকে। তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত ছুরিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
গত ৬ মে বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থেকে ঈদের কেনা কাটা করতে চট্টগ্রাম শহরে এসে ছিনতাকারী কবলে পড়ে রিদুয়ানুল ইসলাম নামের এক কিশোর।
ওইদিন দুপুরের দিকে নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারের ব্রিজঘাট এলাকায় তিন ছিনতাইকারী তাকে অস্ত্র ও ছোড়ার ভয় দেখিয়ে তার কাছে থাকা নগদ সাড়ে ১৯ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন ছিনতাইকারী দল।
পরে ভুক্তভোগী কিশোর তার খালুকে নিয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে। অভিযোগের সূত্র ধরে শুক্রবার ভোরে নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকৃত টাকাসহ রুবেল, রাকিব ও রানা নামে ৩ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
একই দিন পৃথক অপর অভিযানে শরীফ, জয় ও রুবেল নামে আরো ৩ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হয় ওয়াসা মোড়ে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ সংলগ্ন নার্সারির সামনে থেকে। এসময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত তিনটি ছুরি উদ্ধার করা হয়।
তাছাড়াও পাথরঘাটা মেরিনার্স রোড থেকে সাইফুল ইসলাম, ফিরিঙ্গি বাজার হাজি কলোনির মুখ থেকে সাদ্দাম, রাসেল ও ইয়াকুবকে তিনটি ছুরিসহ গ্রেফতার করে নগরীর কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
একই দিন সন্ধ্যায় পাহাড়তলী থানাধীন বিটাক মোড়ে ঈদ বকশিশের নামে যানবাহনের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের সময় মো. ফারুক (৩৫) নামে এক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর আগে মঙ্গলবার (৪ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে কোতোয়ালি থানাধীন নিউমার্কেট এলাকা থেকে পাঁচ ছিনতাইকারী সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি টিপ ছোরা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ বলছে, নগরীর বিভিন্ন স্থানে অফিস, ব্যাংক, এটিএম বুথ, মার্কেটের সামনে ওতপেতে থেকে পথচারীদের টার্গেট করে সুযোগ বুঝে নির্জন অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে নিয়ে যায় তারা।
এরপর আগ্নেয়াস্ত্র ও ছোরার ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার, মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনতাই করে। ছিনতাইয়ের সময় কোনো ধরনের বিড়ম্বনা করলে ধারালো ছোরা দিয়ে জখম করে থাকে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন বলেন, প্রতিবছর পবিত্র ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ছিনতাইকারী ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সক্রিয় হয়ে উঠে।
তবে এবার মার্কেট ও শপিংমলে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে লক্ষ্যে আগে থেকেই নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে অভিযানের কৌশলও পাল্টেছে পুলিশ প্রশাসন। আর তার সাফল্যও আসছে।
তিনি বলেন, রোজা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত কোতোয়ালি এলাকা থেকে ৩০ জন ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সাথে জড়িত অন্তত অর্ধ শতাধিক মৌসুমী অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, ঈদ ঘিরে অপরাধ প্রবণতা রুখতে নগরীতে ছিনতাইকারীর তালিকা তৈরি করে তাদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। পুলিশি টহলও জোরদার রয়েছে।
ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া মানুষজনকে থানায় মামলা করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, এতে মালামাল উদ্ধার ও ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করা সহজ হয়।
তিনি বলেন, মার্কেট, ব্যাংক, অফিস, এটিম বুথসহ অর্থের লেনদেন হয়-ওইসব স্থানে কৌশলে পুলিশ অবস্থান নিয়ে নজরদারি রেখেছে। এমনকি মার্কেটগুলোর ভেতরেও পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ অবস্থান নিয়ে মার্কেটকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।