দেশজুড়ে

জল নয় যেনো চট্টগ্রাম নগরবাসীর বোবাকান্না

  প্রতিনিধি ৮ আগস্ট ২০২৩ , ৮:৫৫:১২ প্রিন্ট সংস্করণ

জল নয় যেনো চট্টগ্রাম নগরবাসীর বোবাকান্না

সপ্তাহ ছুঁই ছুঁই করছে জলবন্দি চট্টগ্রাম। মঙ্গলবার পানি কিছুটা কমে গেলেও ভোগান্তি কমেনি একটুও। সারাদিন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর কাদা নোংরা জল যেনো নিত্যসঙ্গী। জমাটবদ্ধ পানিতে বন্দী নগরবাসীর চোখের জল বানের জলে মিলেমিশে একাকার। তাই তাদের অবর্ণনীয় দুঃখ আর যাতনায় চোখের কোণে বের হওয়া জলই বোবাকান্না হয়ে যেনো ঝরছে।

শুধু এখন নয়, সামান্য বৃষ্টিতেও তাদের এ ভোগান্তি নিত্য সওয়া হয়ে গেছে। নগরবাসীর আক্ষেপ গত ২০ বছরে চার মেয়র এবং সিডিএ মিলে যে, ২হাজার কোটি টাকা খরচ করলো তার সুফল কোথায় ? এ টাকাইতো জলে গেলো। চসিক চউক একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টা করলেও জণগন তাদের ভাগ্যকে দোষছেন এ নগরের নাগরিক হওয়ায়। একটু বৃষ্টিতে হাঁটু, কোমর পর্যন্ত পানি জমে যায়।

পক্ষান্তরে জনপ্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত শোনান ভবিষ্যতের আশার বাণী। নগরীর অধিকাংশ সার্ফেস ড্রেন, স্যুয়ারেজ লাইন ও খাল-নালা ভরাট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। দায়িত্বশীলরা এটাও জনগনের কাধে দায় চাপাতে ব্যস্ত। তারা বলছেন, জনগন সচেতন নয়, নালা নর্দমায় ময়লা ফেলেন। ফলে জ্যাম হয়ে পানি নিষ্কাশণ ব্যহত হওয়ায় এ সমস্যার অবতারণা। চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ৭ বছর আগে নেয়া হয়েছিল প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার চার প্রকল্প। তবে কাজের ধীরগতি ও দীর্ঘসূত্রতায় কোনো সুফলই পায়নি চট্টগ্রামবাসী। উল্টো সেই ব্যয় বেড়ে ১৪ হাজার ২৬৩ কোটি টাকায় উঠেছে। চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে
সবচেয়ে বড় প্রকল্পটির কাজ করছে সিডিএ। চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের আগস্টে একনেকে অনুমোদন হয়। ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকার এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। সর্বশেষ মার্চ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ ৭৭ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

জলাবদ্ধতা নিরসনে আরেকটি মেগা প্রকল্প হচ্ছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো)। সেনাবাহিনীর অধীনে বাস্তবায়নাধীন ১ হাজার ৬২০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে সময় বাড়িয়ে তা
২০২৪-এ আনা হয়।


দুই দশক ধরে চট্টগ্রামের দুঃখ হয়ে আছে জলাবদ্ধতা। প্রধান এই সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়ে গত ২০ বছরে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন চারজন। ইশতেহারে এটি এক নম্বরে রেখে নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও জনগণকে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে পারেননি কোনো মেয়রই। খালি জনগনের টাকার শ্রাদ্ধ করে গেছেন।


এ বিষয়ে মেয়র বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন সিডিএ। অথচ জনগন গালি দিচ্ছে চসিককে। অপরদিকে সিডিএ বলছে, নালা নর্দমা পরিষ্কার করা কর্পোরেশনের দায়িত্ব। তারা সে কাজ না করলেতো এ সমস্যা হবেই। জনগণ বলছেন, এটা নগরবাসীর ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। তারা তারা ঠেলাঠেলি করেই আমাদের বারোটা বাজাচ্ছেন। কিন্তু টাকা খরচের বেলায় কেউ কারও চেয়ে কম নন। জানতে চাইলে পরিবেশ আইনবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, এখানে সরকারী সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে। চসিক, সিডিএ, ওয়াসা, পাউবি কেউ দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা আর সমন্বয়হীনতার অভাবে নগরবাসীর কপালে এ দুর্ভোগ নেমে এসেছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by