খুলনা

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া কুষ্টিয়ার যুবকের এক মাসেও সন্ধান মেলেনি

  প্রতিনিধি ২২ ডিসেম্বর ২০২০ , ৩:০২:১১ প্রিন্ট সংস্করণ

স্ত্রী কুলসুম তার স্বামীকে উদ্ধারের জন্য সাংবাদিকসহ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন

কুষ্টিয়া সংবাদদাতা:

২ বছরের শিশু পুত্র আব্দুল্লাহ তালহা। সে সব সময় বাবার জন্য চিৎকার করছে। বাবার প্রতিক্ষায় প্রায় সময়ই দৌড়ে বাড়ির দরজার দিকে ছুটে যাচ্ছেন। সেই সাথে বছরের পুত্র আদনান জুবায়ের ও ৮ বছরের পুত্র আমির আল মাহদীও ছুটছেন। কিন্তু তাদের বাবা আর আসছেন না। দিন গড়িয়ে রাত, আর রাত পোহায়ে দিন আসলেও প্রতিক্ষার শেষ নেই তাদের। গত এক মাস যাবৎ নিখোঁজ হয়েছে তাদের বাবা বাকীবিল্লাহ (৩৭)। এ নিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করলেও কোন তথ্য পায়নি তারা।

বাকীবিল্লাহর সন্ধানের দাবীতে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন তার পরিবার। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে সন্তানকে ফিরিয়ে আনার আঁকুতি জানিয়েছে প্রশাসন ও সরকারের কাছে।
নিখোঁজ বাকী বিল্লাহ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ষোলদাগ দক্ষিণপাড়া এলাকার ইয়াকুব আলীর ছেলে। তিনি ঢাকায় একটি ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন।

নিখোঁজ বাকীবিল্লাহর পিতা ইয়াকুব আলী বলেন, তার ছেলে বাকী বিল্লাহ ২০০১ সালে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিত্র-৫ পান। খুলনা বিভাগের মধ্যে তিনি কৃতিত্ব অর্জন করায় তাকে এনটিভিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পুরুস্কারেও ভুষিত করেন। এরপর নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিত্র-৫ পেয়ে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি হন তিনি। ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে না পারায় এক পর্যায়ে লেখাপড়া ছেড়ে ঢাকায় অনলাইনে কাজ শুরু করেন বাকী। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে নিখোঁজ যুবকের স্ত্রী কুলসুম আক্তার জানান, আমার স্বামীসহ আমরা ঢাকার উত্তরার তুরাগ থানাধীন নিশাত নগর (নলভোগ), ব্লক সি, রোড নং-৩, বাড়ী নং-১/২ এর চর্তুথ তলায় ভাড়া বাসা নিয়ে বসবাস করছিলাম। গত কয়েক বছর সেখানে বসবাস করে আসছি।
গত ১২ নভেম্বর বিকালে তাদের ৮ বছরের সন্তানকে আমির আল মাহদীকে নিয়ে আমার স্বামী বাকীবিল্লাহ মাদ্রাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য বের হয়। বাসার নিচে নামতেই ২জন অপরিচিতি লোক জিজ্ঞাসা করে কোথায় যাচ্ছেন। তিনি উত্তরে বলেন ছেলেকে নিয়ে মাদ্রাসায় যাচ্ছি। তারা মাদ্রাসায় যাওয়া লাগবেনা বলে ছেলেকে ফিরে যেতে বলে। তৎক্ষণাৎ অপরিচিত ওই ২জন ব্যক্তি তাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে একটি সিলভার কালারের গাড়ীতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। গাড়ীর ভীতরে ৮/১০ জন ছিলো।

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর বাড়ীর নিরাপত্তা প্রহরী এসে আমাকে সংবাদটি অবহিত করে। নিরাপত্তা কর্মী আরও জানান যে, উল্লেখিত ব্যক্তিগন তাদেরকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়।
আমরা নলভোগ ৩ রাস্তা মোড় অবিস্থিত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট অফিসের মো: মঈনের মাধ্যমে আরও কিছু তথ্য জানতে পারি। বকীবিল্লাহকে তুলে নেওয়ার আগে ০১৮৩৯-৩০২২৪৬ নম্বরে ও ০৯৬১১১৭৮৩২২ নাম্বার থেকে ফোন করে বাকীবিল্লাহর অবস্থান জানতে চায়। অবস্থান জানাতে দেরী হওয়ায় তারাই অফিসে চলে আসে। তারা একজন কম্পিউটারে বসে, আরেকজন কাগজপত্র খোঁজুখুঁজি করে। পরে তারা ওই অফিসের একজন লাইনম্যানকে সাথে করে বাসা চিনে নেয়। এরপরেই এই অপহরনের ঘটনা ঘটে।

তিনি আরও জানান, ঘটনার পর ডিবি কার্যালয় ও তুরাগ থানায় পরিবারের পক্ষে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ তাকে আটকের কথা স্বীকার করেনি। পরদিন তুরাগ ানায় জিডি করতে গেলে তা নেয়া হয়নি। ৫ দিন ঘোরানোর পর জিডি নেয় না। কিন্তু পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে গত এক মাসেও সন্ধান না পেয়ে ওই পরিবার চরম আতঙ্কগ্রসস্থও দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমে ভ’য়া সংবাদ দিয়েও হয়রানী করা হচ্ছে। ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে অনেকেই খরচও দাবী করছে।

এছাড়া পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বাকী বিল­াহকে হারিয়ে স্ত্রী কুলসুম আক্তার নাবালক তিন পুত্রসন্তান সাকির আল মাহদী (৭), আদনান জুবায়ের (৫) ও আবদুল্লাহ তালহাকে (৩) নিয়ে ঢাকা ছেড়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন শ্বশুরবাড়ি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ষোলদাগ গ্রামে।

ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে- তুরাগ থানা ও ঢাকাস্থ ডিবি পুলিশ এমন কথা বলে উদ্ধার কাজে গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ করেন তার পরিবার।

বাকী বিল্লাহ কোনো অপরাধী নন। তবে তিনি অপরাধ সংঘটিত করলে তাকে বিচারিক আদালতে হাজির করার দাবি জানানো হয়।
স্ত্রী কুলসুম তার স্বামীকে উদ্ধারের জন্য সাংবাদিকসহ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

 

আরও খবর

Sponsered content

Powered by