রাজশাহী

ঢেঁকিতে চাউল গুড়া করে চলে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শহিদুলের সংসার

  প্রতিনিধি ১৫ নভেম্বর ২০২২ , ৬:৪৯:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

এস.এম আল আমিন,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

পৃথিবীতে একদিনের জন্য কোনো আলো থাকবে না? ভাবুন তো! চারদিকে ঘোর অন্ধকার। কীভাবে দিন পার করবেন? নিশ্চয়ই চিন্তা করে এখনও কোনো সদউত্তর পাননি। আবার অনেকে ভাবতেও পারেন, দিন তো কেটেই যাবে! কিন্তু যে মানুষটি ৪০ বছর ধরে অন্ধ হিসেবে জীবন-যাপন করছেন। এমনই এক মানুষ দৃষ্টিহীন হয়েও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স পরীক্ষায় ইতিহাসে ২য় বিভাগ অর্জন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সেই মানুষটিকে নিশ্চয়ই দাঁড়িয়ে একটি ‘স্যালুট’ দেবেন। স্যালুট পাবারযোগ্য মানুষটি হলেন সিরাজগঞ্জ শহরের সয়াধানগড়া গ্রামের মৃত দানেজ আলী সেখের পুত্র দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোঃ শহিদুল ইসলাম। ৩ বছর বয়সেই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে হারিয়ে ছিলেন দৃষ্টিশক্তি। অর্থাভাবে করতে পারেননি সুচিকিৎসা। কিন্তু দমে যাননি; চোখের সামনের অন্ধকার দূরে ঠেলে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার অদম্য ইচ্ছায় এগিয়ে গেছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোঃ শহিদুল ইসলাম। সংসারে অভাব অনাটন ও নানান প্রতিকুলতার সাথে সংগ্রাম করে অর্জন করেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী। অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে ব্রেইল পদ্ধতিতে (কাগজের ওপর বিন্দুকে ফুটিয়ে তুলে লেখার পদ্ধতি, এসব বিন্দুতে আঙুল বুলিয়ে দৃষ্টিহীনরা পড়েন) সিরাজগঞ্জ এসবি রেলওয়ে কলোনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৯ সালে ১ম বিভাগে এসএসসি পরিক্ষায় উত্তির্ণ হন।

রজব আলী মেমোরিয়াল বিজ্ঞান কলেজ থেকে ২০০১ সালে ২য় বিভাগ পেয়ে এইচএসসি পাশ করেন। শিক্ষা জীবন শেষ করে বিসিএস পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ ও সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন দপ্তরে চাকুরির ইন্টারভিউ দিয়েও হয়েছেন অবহেলিত। অদম্য মেধা ও কর্মশক্তিসম্পন্ন শহিদুল ইসলাম অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলতে ও লিখতে পারেন, কম্পিটার পরিচালনায় দক্ষতা থাকা সত্তেও তিনি সর্বক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। অপরাধ তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী! সংসার জীবনে তিনি ২সন্তানের জনক। বর্তমানে বৃদ্ধ মা বিবাহ উপযুক্ত বোনসহ ৮সদস্যের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে সিরাজগঞ্জ শহরের সয়াধানগড়া গ্রামের উকিল পাড়ায় ২শতক জায়গায় জীর্ণ কুটিরে খোজ নিয়ে দেখা যায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শহিদুল ইসলাম ঢেঁকিতে পাড়দিয়ে চাল গুড়া করছেন।

কথা হয় শহিদুলের সাথে, শহিদুল এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় কেউ আমাকে কাজ দিতে চায় না, আমি ইংরেজিতে কথা বলতে পারি, মেইল দেখভালসহ কম্পিউটারে বাংলা ইংরেজি টাইপ করতে পারি। কিন্তু দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় সবাই বিমূখ করেন। আমি কাজ করে খেতে চাই। হাত পাতা আমার জন্যে মানায় না। আমি জানি কর্মেই সন্মান। ঢেকিতে চাউল পাাড় দেওয়ার বিষয়ে বলেন,এই ঢেঁকিই আমার আয়ের উৎস। অন্যের দেওয়া চাউল ঢেকিতে গুড়া করে দিয়ে কেজিতে ২০টাকা করে নেই। দিনে ৫ থেকে ৭ কেজি চাউল গুড়া করতে পারি সে হিসেবে দিনে দেড়থেকে ২শত টাকা আয় হয়। যদিও চাউল গুড়া করার কাজ সবসময় হয় না পাশাপাশি আমার বোন হাতে জামা কাপড় সেলাই করে যায় আয় হয়। এই আয় দিয়ে খেয়ে না খেয়ে আমাদের দিন চলে। রাস্ট্র বা সমাজের বিত্ববানদের কাছে আমার চাওয়া যদি কেউ আমাকে একটি কর্মের ব্যবস্থা বা সহায়তার মাধ্যমে কোন ব্যবসার পথ সুগোম করে দিতেন। হয়তোবা আমি আমার পরিবার পরিজন নিয়ে সন্মানের সহিত জীবন যাপন করতে পারতাম।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by