দেশজুড়ে

নজরুলের সুর বিকৃতি: জাককানইবিতে প্রতিবাদ

  প্রতিনিধি ২০ নভেম্বর ২০২৩ , ৪:৫৫:১১ প্রিন্ট সংস্করণ

নজরুলের সুর বিকৃতি: জাককানইবিতে প্রতিবাদ

সম্প্রতি ভারতীয় একটি চলচ্চিত্রে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গান ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’-এর চিরচেনা ও বিখ্যাত সুর বিকৃতভাবে উপস্থাপন করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (জাককানইবি ) । অনতিবিলম্বে চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত গানটি বাদ দেওয়া ও গানটির পরিচালক প্রখ্যাত ভারতীয় সংগীত পরিচালক এ আর রহমানকে ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে। সোমবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত প্রতিবাদ র‌্যালি পরবর্তী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব দাবির কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও বিশিষ্ট নজরুল গবেষক প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর ।

বক্তব্যে তিনি বলেন, ভারতের একটি চলচ্চিত্রে এ গানটি ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে নতুন করে সুরারোপ করেছেন ভারতের একজন বিখ্যাত সুরকার। আমি এই সুরকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কারণ তিনি অনেক ভালো ভালো সুর করেছেন, ভালো ভালো কাজ করেছেন, তিনি অস্কারবিজয়ী। এরকম একজন মানুষের কাছে এরকম দায়িত্বহীন একটি কাজ আমরা আশা করি না। যে কারণে আমরা বলবো- তিনি অনেক ভালো কাজ করেছেন ভালো কাজের জন্য তিনি পুরষ্কৃতও হয়েছেন। কিন্তু তিনি যেভাবে নজরুলের গানের সুর বিকৃত করেছেন সে কাজের কারণে তাকে আমরা পুরষ্কৃত করতে পারবো না। আমরা বরং তাকে তিরস্কার জানাই।

সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে আমরা দাবি জানাই, অবিলম্বে আপনারা এ সুর প্রত্যাহার করে নিন। চলচ্চিত্রের যে অংশে এ গানটি ব্যবহৃত হয়েছে সে অংশটুকু সম্পাদনা করে বাদ দেওয়ার জন্য আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করছি। সেই সাথে বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করছি যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে বিতর্কিত অংশটুকু যাতে বর্জন করা হয় সে ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার। সাধারণ বাঙালির কাছে অনুরোধ জানাই, এ গানটি যেন কোনো ভাবে প্রচার না হয়, আমরা যেন শ্রবণ না করি, গানটি নিয়ে বাইরে যেন অন্যদের সাথে গল্প না করি, মিলিয়ন ভিউয়ের পাল্লায় না ফেলে এ গানটিকে আমরা যেন আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করি।

‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’ গানটিকে ‘ক্লাসিক’ গানের মর্যাদা দিয়ে নজরুল গবেষক প্রফেসর ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, কারার ঐ লৌহ কপাট গানটি বাঙালির ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময় মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে গেছে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে গানটিকে আমরা গ্রহণ করতে দেখেছি। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সময়, একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের যারা সূর্যসন্তান সংগ্রামী তারা এ গান গেয়েছেন। এ গান গেয়ে হেসে হেসে জীবন দান করেছেন। ফলে এ গান শুধু আর গান নেই। এ গানটি বাঙালির হৃৎস্পন্দনে পরিণত হয়েছে। এ গানটি আমাদের আবেগে পরিণত হয়েছে। গানটি মানুষের অন্তরে অধিকার করে নেওয়ার মধ্যদিয়ে ক্লাসিক পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। প্রত্যেক গানের একটি কপি রাইট থাকে। সে কপিরাইটে এটি কেউ বিৃকতভাবে গ্রহণ করতে পারেনা নষ্ট করতে পারেনা ধ্বংস করতে পারেনা। যেমন আমাদের জাতীয় সংগীতের যে সুর আছে সে প্রচলিত সুরকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার আর কারও কোনো অধিকার নেই। জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথের একটি ক্লাসিক গানে পরিণত হয়েছে। ঠিক তেমনি নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহ -কপাট’ও আমাদের আবেগের সাথে যুক্ত হয়ে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ মাসুম হাওলাদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. আতাউর রহমান। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. রিয়াদ হাসান, রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর, প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জী, ছাত্র উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ মেহেদী উল্লাহসহ বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তর প্রধানগণ, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, শিক্ষার্থীসহ অন্যরা।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by