প্রতিনিধি ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৮:০৭:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ
হাফিজুর রহমান হৃদয়, নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) :
ধানি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। চলতি আমন মৌসুমে সোনালি ধানের স্বপ্নে চাষাবাদ শুরু করেন কৃষি নির্ভর এই অঞ্চলের কৃষকরা। উজানের ঢল ও বৃষ্টির পানিতে অসময়ের বন্যায় ভেসে গেছে তাদের সোনালি স্বপ্ন। প্রায় ১ মাস পানিতে ডুবে থাকায় পচে নষ্ট হয়েছে আমনের খেত। আমনের আবাদ নষ্ট হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবারও আমন চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। তবে রোপা আমনের চারা সংকটে পড়েছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী চলতি আমন মৌসুমে ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জিত হয়েছে ২৪ হাজার ২শ হেক্টর। কিন্তু এবারের বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন এবং ৫০ হেক্টর জমির শাক-সবজি। এর মধ্যে পচে নষ্ট হয়ে গেছে ৪হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, ৭ হেক্টর জমির বীজতলা এবং ৪০ হাজার হেক্টর জমির শাকসবজি।
এদিকে, আমনের চারার সংকট প্রকট হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি আর বন্যা না হওয়ায় কৃষকেরা বন্যা পরবর্তি বীজতলা প্রস্তুত করেনি। ফলে মৌসুমের শেষ সময়ের বন্যায় নষ্ট হয়ে যাওয়া আমন ক্ষেতে নতুন করে আমন চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিকল্প হিসেবে কিছু এলাকায় উচু জমির লাগানো আমন ক্ষেত থেকে বেড়ে উঠা ধান গাছ তুলে নষ্ট হওয়া ক্ষেতে রোপন করছে কৃষক। চারা সংকটে বেশির ভাগ জমি পতিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জমি যাতে পতিত না থাকে সে বিষয়ে মাসকলাই জাতীয় কিংবা অনান্য রবিশস্য চাষে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি অফিস। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদেরকে সহায়তার আশ্বাসও দেন কৃষি অফিস।
উপজেলার চন্ডিপুর ফারাজিপাড়া এলাকায় দেখা গেছে পানিতে ডুবে যাওয়া আমনের ক্ষেত রক্ষায় ক্ষেত থেকে কচুরিপানা তুলে দিচ্ছেন ২ কৃষক। এদের একজন হারুন উর রশিদ জানায় তিনি ৪ বিঘা জমিতে রোপা আমন চাষ শুরু করেছেন। ধানগাছও বেশ হৃষ্ট পুষ্ট হতে শুরু করেছে। ভেবেিেছলেন এবারের ফলন অত্যন্ত ভালো হবে। কিন্তু সে আশা ধোঁয়াশায় মিশেছে তার। পুরো ক্ষেত পানিতে তলিয়ে কচুরিপানায় ভরে গেছে। তাই তিনি কচুরিপানা অপসারনের কাজ করছেন।
একই অবস্থা মোহাম্মদ আলী নামের এক কৃষকের। কেদার ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের সাত বিঘা জমির রোপা আমন ক্ষেত বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। পুনরায় রোপা লাগানোর মতো চারা ধান নেই। ফলে এসব জমি অনাবাদী থাকবে। একই ইউনিয়নের সাতানা গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, তার ৫ বিঘা জমির রোপা ১৫ দিন পানির নিচে ছিলো। এর বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু ক্ষেতের রোপার গোড়া রয়েছে। সেগুলোতে সার ছিটিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন তিনি।
বেরুবাড়ি ইউনিয়নের খামার নকূলা গ্রামের বিমল চন্দ্র সিংহ, বাবু মিয়া জানান, তাদের এলাকায় শতাধিক কৃষকের প্রায় ৭শ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। পুনরায় রোপন করার মতো তাদের হাতে চারা নেই। যদিও উপজেলার বাইরে চারা পাওয়া গেলেও দাম চড়া। রফিকুল ইসলাম নামের এক কৃষক জানায় তিনি ৩ একর জমিতে রোপা আমন করেছেন। পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। আবার নতুন করে জমিতে হালচাষ, চারা কেনা, শ্রমিকের মজুরিসহ দ্বিগুণ খরচ করতে হচ্ছে তাকে।
তিনি আরও জানান বিঘা প্রতি জমিতে আমনের চারা কিনতে প্রয়োজন হয় ২ হাজার ৫শ থেকে ৩হাজার টাকা পর্যন্ত। বাচ্চু মিয়া নামের একজন পাওয়ার টিলার চালক জানায় তিনি প্রতি মৌসুমে ২শ বিঘা জমিতে হালচাষ করেন। এবার একবার হাল চাষ করলেও বন্যায় আমনের ক্ষেত সব নষ্ট হওয়ায় আবারও হালচাষ ককরতে হচ্ছে তাকে। কিন্তু এবারে চাষের মজুরির টাকা না দিয়ে বাকী রাখছে কৃষকরা। কৃষকদের ক্ষতির কারণে কবে বাকীর টাকা পাবেন এ নিয়েও শঙ্কায় আছেন তিনি।
নাগেশ্বরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন জানান, নষ্ট হয়ে যাওয়া জমিতে পুনরায় চারা রোপন করছেন কৃষক। যারা চারা রোপন করতে পারবেন না তাদেরকে মাসকলাই জাতীয় কিংবা অন্যান্য ফসল বপনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করে সহযোগিতা প্রদান করা হবে।