দেশজুড়ে

নোবিপ্রবিতে ডিজিটাল প্রতারণার শিকার বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা

  প্রতিনিধি ২৫ মার্চ ২০২৪ , ৬:০২:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নোবিপ্রবিতে ডিজিটাল প্রতারণার শিকার বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা

শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রতারক কর্তৃক উপস্থাপিত শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাবোর্ডেই থাকে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

শিক্ষার্থীদের থেকে প্রাপ্ত অভিযোগ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগেরই তিন ব্যাচ ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রতারণার সম্মুখীন হন। এদের মধ্যে বেনজির জাহান জেমিমা, পলি মজুমদার ও রাহাতুল ইসলাম রাফির অভিভাবকের কাছ থেকে যথাক্রমে ৬০ হাজার, ১০ হাজার ও ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

এছাড়াও ডিজিটাল এই প্রতারক চক্রের কাছে ১০ হাজার টাকা করে খুইয়েছেন বায়োটেকনলোজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী নিশাত মরিয়ম ও ফুড টেকনোলজি এন্ড নিউট্রিশন সাইন্স বিভাগ ২০২২-২৩ বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরান হিমেল।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী বেনজির জাহান জেমিমার অভিভাককে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৬০ হাজার টাকা লুট করে নিয়েছে প্রতারক চক্র, অথচ ঠিকভাবে মেধাবৃত্তি প্রাপ্তদের চার বছরে সবমিলেয়ে ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা দেয় সরকার, সাধারণ বৃত্তিপ্রাপ্তরা পান মোট ২১ হাজার টাকা।

আইন বিভাগের এই শিক্ষার্থীর অভিযোগ অনুযায়ী, উল্লিখিত 013239-157 নম্বর থেকে কল দিয়ে নিজেদের কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সদস্য পরিচয় দেয় প্রতারকচক্র। শিক্ষার্থীর নাম, বাবা-মায়ের নামসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়ে উচ্চমাধ্যমিকের বৃত্তির টাকা প্রদানের অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করার কথা বলে তারা। পরবর্তীতে অভিভাবকের কার্ডের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে টাকা উত্তোলন করে নেয় প্রতারকরা।

নোবিপ্রবির আরেক শিক্ষার্থী তামজিদা দেওয়ান মৃত্তিকা অভিযোগ করে বলেন, তার সকল তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করে পূর্বের অ্যাকাউন্টে আর বৃত্তির টাকা আসবে না বলে জানানো হয়েছে। এটিএম কার্ডের তথ্য চাইলে অভিভাবক কর্তৃক এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বললে কল কেটে দেন। পরবর্তীতে আর যোগাযোগ করেন নি প্রতারকরা। একই নম্বর 013239-157 থেকে মৃত্তিকা অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

অন্য আরেক শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম আযাদের অভিযোগ অনুযায়ী, একইভাবে শিক্ষার্থীর অ্যাকাডেমিক সকল সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে প্রতারণার চেষ্টা করে চক্রটি। একইরকম অভিযোগ করেন প্রতারকচক্রের কাছে টাকা হারানো অন্য শিক্ষার্থীরাও। এছাড়াও এই অভিযোগ তুলেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী।

অভিভাবকদের সচেতনতার ফলে প্রতারক চক্রের বিষয়ে বুঝে গেলে তথ্য দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন তারা। নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই প্রতারকচক্র এসব তথ্য পেয়েছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারিভাবে গ্যাজেট প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় নোটিশ দিয়ে বৃত্তিপ্রাপ্তদের তথ্য চান। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় সকল তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দেন।অভিযোগ করে তারা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আমাদের তথ্য পাচার হচ্ছে। মোবাইল ফোনে অভিভাবকদের আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য জানিয়ে নিজেদের বোর্ড সদস্য দাবি করে প্রতারকরা।

সঠিক তথ্য উপস্থাপন করার কারণে অনেকের অভিভাবক প্রতারণা বুঝতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের তথ্যের নিরাপত্তা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় এর দায় এড়াতে পারে না। তবে শিক্ষার্থীদের এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বোর্ড থেকেও চক্রের কাছে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া কুমিল্লা বোর্ড অথবা সংশ্লিষ্ট অন্য দপ্তর থেকেও ছড়াতে পারে বলে মনে করেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) সাইবার সেন্টারের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) এ.আর.এম মাহামুদুল হাসান রানা।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এসব তথ্য বোর্ড থেকেও ছড়াতে পারে। নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুঠোফোনে শেয়ার করার আগে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। সাইবার সেন্টারের পরিচালক আরও বলেন, আমাদের কোনো তথ্য দরকার হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি চাওয়া হবে। তারপরও ফোনে কেউ যোগাযোগ করে তথ্য চাইলে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হবে।

আমরা বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কুমিল্লা বোর্ড ছাড়াও অন্যান্য বোর্ডের অধীনে উচ্চমাধ্যমিকে অংশ নেয়া বৃত্তিপ্রাপ্তও রয়েছেন। এদের মধ্যে একাধিক শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম ও ঢাকা বোর্ডের অধীনে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। এমন এক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, তিনি ঢাকা বোর্ড থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিলেও তার অভিভাবককে কল করে কুমিল্লা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয়ে বৃত্তির সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট পরিবর্তনের বিষয়ে কথা বলেছে প্রতারক চক্র।

শিক্ষার্থীদের থেকে পাওয়া অভিযোগ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এই তথ্য পাচার হওয়া অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন বিভাগের পুলিশ সুপার এনামুল হক সাগর। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা তাদের নিকটস্থ পুলিশের যেকোনো স্টেশনে যোগাযোগ করে আমাদের নিকট অভিযোগ জমা দিলে আমরা যথাযথ আইনি সহায়তা প্রদান করব।

ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, এই বিষয়ে যোগাযোগ করতে গেলে অভিযোগ করে কোনো লাভ হবে না বলে নোয়াখালীর সুধারাম থানা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, আমরা জিডি করতে গেলে থানায় বলা হয় এটি অভিযোগ আকারে দিতে হবে। পরে অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ জানায় প্রতারক চক্রের সদস্যরা অপরিচিত কারও নম্বর ব্যবহার করে এসব প্রতারণা করে থাকে।

অনেক সময় দেখা যায়, এভাবে যাদের ধরে আনা হয় অভিযোগের ঘটনার সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা থাকে না। এসব বলে থানা থেকে জানানো হয়, এই বিষয়ে অভিযোগ করেও প্রকৃত আসামিকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে অভিযোগ পাওয়া গেলেই পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। নোয়াখালী পুলিশ সুপার বলেন, আমি এই বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা আমাদের অফিসে যোগাযোগ করলে আমরা তাদের যথাযথ আইনি সহায়তা প্রদান করবো। একইসঙ্গে প্রতারক চক্র বের করে আনতে আমাদের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. দিদার-উল-আলম।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার দপ্তরে বিষয়টি জানালে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করব। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা প্রতারকদের বের করার চেষ্টার করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ছাড় দেওয়া হবে না।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by