চট্টগ্রাম

পর্যটন নগরী কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য

  প্রতিনিধি ২১ জানুয়ারি ২০২১ , ১:৩৩:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

বি এম হাবিব উল্লাহ, জেলা প্রতিনিধিঃ

সীমান্ত জেলা কক্সবাজার চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার দূরে। পর্যটন নগরীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য ১৬৫ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। পর্যটন ও লোনাজলে ঘুরতে থাকা অর্থনৈতিক চাকা আর মৎস্য বন্দর এবং সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং স্টেশন- সব মিলিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বিচিত্র শহর কক্সবাজার। চট্টগ্রাম থেকে এ জেলা ১৬০ কিলোমিটার ও ঢাকা থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। কক্সবাজার মুঘল সাম্রাজ্যের সময় থেকেই। কক্সবাজারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ কক্সবাজার নামকরণের পেছনে রয়েছে কৌতূহলী পটভূমি। হলুদ ফুলাবৃত থাকায় প্যানোয়া নামকরণ করা হয়েছিল কক্সবাজারকে।পালংকী নামেও কক্সবাজারের পরিচিত ছিল এক সময়ে। ১৬১৬ সালে কক্সবাজার সহ চট্টগ্রামের একটি অংশ আরাকান রাজ্যভুক্ত ছিল। শাহ্ সুজা বা মুঘল সম্রাট একহাজার পালকী বা ঢুলি নিয়ে আরাকান যাবার পথে কক্সবাজারের পাহাড়ি প্রকৃতিতে বিমোহিত হন তারা। নির্দেশ অনুযায়ী যাত্রাবহর চরকিয়ায় তাদের ঘাঁটি স্থাপন করেন। ১০০০ পালকী অবতরণের কারণেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় ডুলহাজরা (হাজার পালংকি বা ঢুলি) যা বর্তমানে চকরিয়া উপজেলার একটি ইউনিয়ন। মুঘল পরবর্তী সময়ে সমগ্র এলাকা ত্রিপুরা এবং আরাকানীদের দখলভুক্ত হয়। পরে পর্তুগীজ এবং ব্রিটিশরা এই এলাকা শাসন করেছে। কক্সবাজার নামটি মূলত একজন ব্রিটিশ অফিসারের নামানুসারে হয়ে থাকে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখন বাংলার শাসনে এবং অধ্যাদেশ মতে ১৭৭৩ সালে ওয়ারেন্ট হোস্টিং বাংলা অঞ্চলের গভর্নর নিয়োজিত হন। এ অঞ্চলে ইতোমধ্যেই লবণ চাষে ব্রিটিশরা আগ্রহী হয়ে উঠেছিল এবং তদানুসারে ব্রিটিশ বেনিয়ারা লবণ সংগ্রহে বিনিয়োগ করেছিলেন। এ সময়ে হিরাম কক্স নামক ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন অফিসার পালংকী’র মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তিনি অত্র এলাকায় অবস্থানরত হাজারো স্থানীয় রাখাইন এবং আরাকান শরণার্থীদের বহুকাল পুরনো সংঘাত নির্মূল করেন। তৎকালীন সময়ে তার আমলে শরণার্থী পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু হয় তবে সম্পন্ন করবার আগেই ১৭৯৯ সালে তিনি পরলোক গমন করেন। তাকে ও তার অবদান স্মরণে এই এলাকায় একটি বাজার স্থাপন করা হয় যার নাম তখন কক্স সাহেবের বাজার হিসেবে প্রচলিত ছিল। পর্তুগীজ এবং ব্রিটিশ শাসনের মাধ্যমেই ১৮৫৪ সালে এই শহর গঠিত হয় বলা চলে, ১৮৫৮ সালে থানা ও ১৮৬৯ সালে পৌরসভা গঠিত হয় এই এলাকায়। কালের পরিক্রমায় অত্র এলাকা এখন কক্সবাজার নামেই প্রচলিত। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের ব্যর্থতার সূত্র দিয়ে ব্রিটিশরা তাদের এই সেনাঘাটি কক্সবাজারকে মহকুমা হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর কক্সবাজারের প্রথম মিউনিসিপ্যাল অধিকর্তা বা চেয়ারম্যান নিয়োজিত হন ক্যাপ্টেন ফজলুল হক (অ্যাডভোকেট)। সৈকত জুড়ে সারি সারি ঝাউগাছ লাগাবার প্রথম উদ্যোগ তিনিই নিয়েছিলেন। পর্যটন আকর্ষণ সৃষ্টির পাশাপাশি তিনি টি-সুনামি হতে শহর রক্ষার কারণে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। গণগ্রন্থাগার ও টাউন হলও তারই দান করা পারিবারিক সম্পত্তি হতে তৈরি করা। ১৯৭১ সালে কক্সবাজার জুড়ে পাক হানাদারাদের হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল এই এলাকা জুড়ে, এখানে পাকিস্তান নৌবাহিনীর একটি ঘাঁটি ছিল এবং ভারতীয় বিমানবাহিনী কক্সবাজারকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী মুক্ত করতে কড়া ভূমিকা পালন করেছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৮৪ সালে কক্সবাজার জেলায় রূপান্তরিত হয়। ২০০৭ সালে বৈশ্বিক যোগাযোগ মাত্রা বাংলাদেশের সংযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে সাগর হতে সাবমেরিন কেবল স্টেশন স্থাপন করা হয়। কক্সবাজার জেলার উত্তরে চট্টগ্রাম, বঙ্গোপসাগর রয়েছে দক্ষিন-পশ্চিমে পূর্বে বান্দরবান। বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্ত বিভাজনকারী নাফ নদী আর খোদ মায়ানমার। কক্সবাজার জেলার আয়তনে ২৪৩৯.৮৬ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব ৭৫৭৯.২৭/বর্গ কিলোমিটার। সাগর দ্বীপ পাহাড় নদী আর সমতলের অভূতপূর্ব সংমিশ্রণে কক্সবাজার বর্তমানে বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্র। রয়েছে বেসরকারি হোটেল। বাংলাদেশের পর্যটন কেন্দ্র নির্মিত মোটেল এবং পাঁচ তারকা হোটেল। থাইল্যান্ড মিয়ানমার ও চীন থেকে আগত বাহারি সামগ্রী কিনতে পর্যটকেরা ভিড় করেন ঝিনুক মার্কেটে। লাবনী পয়েন্ট, হিমছড়ি, ইনানি সী বীচ, সেইন্ট মার্টিনস্ দ্বীপ, দেশের একমাত্র পাহাড়ী দ্বীপ মহেশখালী, কুতুবদিয়া, রামুর বৌদ্ধ ক্যাঙ, কানারাজার গুহা ইত্যাদি সমগ্র কক্সবাজারের মূল আকর্ষণ। এ অঞ্চলে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যও উল্লেখযোগ্য। চাকমা, রাখাইনসহ নানান নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস এই শহরের সাংস্কৃতিক লালিমাকে আরো উৎকৃষ্ট করে তুলেছে। পৃথিবীর অন্যতম স্বাস্থ্যকর স্থান কক্সবাজারের গুরুত্বারোপ করে সকল পর্যটকরা আকৃষ্ট হন হর হামেশাই।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by