আন্তর্জাতিক

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা কর্মকর্তাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বানালো চীন

  প্রতিনিধি ১২ মার্চ ২০২৩ , ৪:৫৭:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক :

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় থাকা জেনারেল লি শ্যাংফুকে শীর্ষ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে চীন। রোববার চীনের পার্লামেন্টে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে লি’র নাম ঘোষণা করা হয়। খবর ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের।

জানা যায়, ২০১৮ সালে রাশিয়ার প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারক, রোসোবোরোনেক্সপোর্টের কাছ থেকে যুদ্ধ বিমান ও সরঞ্জাম কেনার জন্য লি’র ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র, যা এখনো বলবৎ রয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের ক্ষমতাসীন দলের পলিটব্যুরো স্ট্যানি্‌ডং কমিটি ও প্রভাবশালী সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ৭ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের হাতে দেশটির সামরিক ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার থাকে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী চীনের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি কূটনৈতিক বিষয়গুলোরও দেখভাল করেন।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে লি’কে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সামরিক যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে, এশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠক, সিঙ্গাপুরে হয়ে আসা নিরাপত্তা সংক্রান্ত শাংরি-লা সম্মেলনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচিতে অংশ নিতে হবে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও লিকে এ পদে নিয়োগ দেওয়াকে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছে পশ্চিমাবিশ্ব। এমন এক সময়ে তাকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হলো, যখন ওয়াশিংটন বেইজিংয়ের সঙ্গে সামরিক সংলাপ ও যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তৎপর।

তবে ২০২২ সালের আগস্টে তৎকালীন মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর কেন্দ্র করে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় চীন। তারপর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সংলাপ ও যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের প্রচেষ্টা অনেকটাই থমকে রয়েছে।

লি একজন মহাকাশ প্রকৌশলী, যিনি চীনের স্যাটেলাইট কর্মসূচিতেও কাজ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, লি’র প্রযুক্তিগত দক্ষতা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বেধে দেওয়া পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) অন্তর্বর্তী লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবে।

সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক জেমস চার বলেন, পরবর্তী চীনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর প্রায়োগিক ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। বিষয়টি পিএলএকে ২০৪৯ সালের মধ্যে একটি বিশ্বমানের সামরিক বাহিনী হিসেবে রূপ দিতে ব্যাপকভাবে সহায়ক হবে।

২০১৬ সালে লি-কে পিএলএ-র তখনকার নতুন স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট ফোর্সের ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ বাহিনীর কাজই ছিল, চীনের মহাকাশ ও সাইবারসংক্রান্ত সক্ষমতা বাড়ানো। এরপর তাকে শি’র নেতৃত্বাধীন সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের সরঞ্জাম সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।

রয়টার্স লিখেছে, সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনে লি’র অন্তর্ভুক্তি প্রমাণ করে, তিনি শি’র কতটা কাছের মানুষ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীর ভেতর লি’র অবস্থান ক্রমাগত শক্তিশালী করেছেন।বিজ্ঞাপন

অনেকে আবার মনে করেন, লি’র উত্থানের আরেকটি বড় কারণ হলো, সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের সরঞ্জাম সম্প্রসারণ বিভাগের সাবেক প্রধান ও শি জিনপিংয়ের সামরিক অনুচর ঝ্যাং ইয়োজিয়ার সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

গত বছরের অক্টোবরে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) কংগ্রেসে ঝ্যাংকে সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের ফার্স্ট ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ওই কংগ্রেসেই লি শ্যাংফু কমিশনের সাত সদস্যবিশিষ্ট মূল পরিচালনা পর্ষদে ঢোকেন।

২০১৭ সালে চীনের সামরিক বাহিনী রাশিয়ার প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারক রোসোবরনএক্সপোর্টের কাছ থেকে ১০টি সু-৩৫ জঙ্গিবিমান ও ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাপনা এস-৪০০ এর সরঞ্জাম কেনে। সেসময় চীনা আর্মির সরঞ্জাম সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান থাকায় ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন লি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায় লি’কে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বানানোয় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জটিলতা বাড়াবে ও চীনের সামরিক নেতৃত্বকে নানান সুবিধা দেবে।

গত সপ্তাহে পেন্টাগনের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মার্টি মেইনার্সকে লি’র উত্থান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। এ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, মার্কিন সামরিক বাহিনী চীনের নেতৃত্বের পরিবর্তন নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারে না। তবে আমরা পিএলএ’র সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখতে চাই। উন্মুক্ত যোগাযোগ আমাদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো ও শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতায় সহায়তা করতে পারে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by