দেশজুড়ে

রংপুর বিভাগে বসুন্ধরা গ্রুপের ত্রাণ পেল ২৪ হাজার পরিবার

  প্রতিনিধি ১৭ জুলাই ২০২১ , ৯:০৯:১৩ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:
শুক্রবার সন্ধ্যা প্রায় ৬টা। কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর ফাঁকা। একটু আগে সেখানে ছিল তিস্তা নদীর ভাঙনে নিঃস্ব, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কর্মহীনসহ ৩০০ অসহায় মানুষ। তাদের প্রত্যেককে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে অন্তত ১০ দিনের খাবার (চাল, ডাল, আটা)। চত্বরটি থেকে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সবাই চলে গেলেও এককোণে বসে কাঁদছিলেন বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এক নারী। কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি মমিনা খাতুন।
মমিনা জানান, তিস্তাতীরবর্তী আলেকিসামত বাঁধের ঝুপড়িঘরে তাঁর বাস। এই বয়সে বাধ্য হয়ে তাঁকে মানুষের কাছে হাত পেতে চলতে হয়। তাঁর কষ্টগাথা শুনে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা করা হয় খাদ্যসামগ্রীর একটি প্যাকেট। সেটি পেয়ে আবারও কাঁদেন মমিনা। এরপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘তিস্তা হামার সউগ কারি নিয়া পথের ফকির বানাইছে। অ্যালা ভিক্ষা করি, থাকি নদীর বাঁধোত। এই কষ্টের দিনোত তোমার চাউল-ডাইল পেয়া মুই ঈদের দিনের মতোন খুশি হছুং।’
গতকাল শুক্রবার শেষ বিকেলে মমিনা খাতুনসহ তিস্তা নদীর উভয় পারের ৩০০ অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মধ্য দিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের রংপুর জেলার ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শেষ হয়েছে। গত দুই দিনে রংপুরের আট উপজেলার তিন হাজার মানুষ ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে। একই সঙ্গে রংপুর বিভাগের আট জেলার ত্রাণ কার্যক্রম শেষ হয় রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। বিভাগের আট জেলায় সব মিলে ২৪ হাজার মানুষ পেল বসুন্ধরার খাদ্য সহায়তা। ২৩ জুন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় এই ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।
কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চত্বরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তার সময় উপস্থিত গঙ্গাচড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরিফুল আলম বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ ও কালের কণ্ঠ শুভসংঘকে আমরা অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আমাদের এই নদীভাঙ্গনকবলিত অঞ্চলে খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার জন্য।’ এই সময় সেখানে ছিলেন শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন, সদস্য শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন, কোলকোন্দ ইউপির চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু, রংপুর জেলা শুভসংঘের সভাপতি ইরা হক, গঙ্গাচড়া উপজেলা শুভসংঘের সভাপতি মোফাক খাইরুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক রায়হান কবির।
এর আগে সকালে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ৩০০ অসহায় ও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে শুভসংঘ। এ ছাড়া সবার মাঝে মাস্ক বিতরণ এবং করোনা সুরক্ষায় সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়। কাউনিয়া উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা তারিন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানকে অনেক ধন্যবাদ জানাই করোনাকালে এমন চমৎকার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য।’ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে আরো উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আব্দুল হাকিম, ওসি মাসুমুর রহমান, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক তোজাম্মেল হক, উপজেলা শুভসংঘের সভাপতি শামিম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দিন।
পরে সকালেই জেলার পীরগাছা উপজেলায় ৩০০ অতিদরিদ্র পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। কান্দিরহাট স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ মো. মাহাবুবার রহমান বলেন, ‘প্রান্তিক হতদরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে শুভসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে সে জন্য উপজেলার পক্ষ থেকে আমি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বসুন্ধরা গ্রুপ সব সময়ই মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এবারও শুভসংঘের তত্তাবধানে দেশের প্রতিটি জেলার অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তাই বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ আরো উপস্থিত ছিলেন ইউএনও শামসুল আরেফিন, থানার ওসি আজিজুল ইসলাম, কান্দি ইউপির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খানসহ শুভসংঘের বন্ধুরা।
দুপুরে রংপুর নগরের আরসিসিআই পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ২৫০ জন পত্রিকা বিক্রেতাসহ ৩০০ দরিদ্র মানুষ পেয়েছে খাদ্যসামগ্রী। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (আরসিসিআই) সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, ‘দেশের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্র“প বাংলাদেশের লাখ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান করছে। আজকে রংপুরের হকারদের সাত থেকে ১০ দিনের খাদ্যসামগ্রী দিয়েছে। জেলায় জেলায় অসহায় পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। এ জন্য রংপুর চেম্বারের পক্ষ থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাই।’ এ সময় সেখানে ছিলেন শুভসংঘ রংপুর জেলা শাখার সভাপতি ইরা হক, সাধারণ সম্পাদক গোলাম সরওয়ার রাব্বিসহ সদস্যরা।
বিকেলে রংপুর নগরের বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২৫০ জন অতিদরিদ্রকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। সেখানে ছিলেন শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রুহুল মোয়াজ্জেম, শুভসংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শামীম আল মামুন, সদস্য শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন প্রমুখ।
বৃদ্ধ জমিলা বেগমের কেউ নেই। থাকেন একটি ছোট ভাঙা ঘরে। তাঁর ৯৫ বছর বয়সেও তাঁকে গরম পানিটুকু করে দেওয়ার কেউ নেই। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েই একবেলা ডাল-ভাত রেঁধে খেয়ে বেঁচে আছেন। বসুন্ধরার সহায়তা পেয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো গরিব মাইনষেরে খাবার দিয়া বড় উপকার করলেন। আল্লায় তোমাদের আরো দিবার তৌফিক দেক। তোমরা শান্তিতে থাকো।’

আব্বাস আলী নামের এক উপকারভোগী বলেন, ‘আগে চায়ের দোকান করতাম। করোনায় বন্ধ হইয়া গেছে। এখন কৃষিকাজ করে ছয়জন নিয়া খাই। চলতে খুব কষ্ট হয়। এই সময়ে তোমাগো সাহায্য পাইয়া খুব আছান (উপকার) হইল। তোমাগো বসুন্ধরা চেয়ারম্যানের জন্য দোয়া করি। তাঁর বালা-মুসিবত না হোক।’ রফিকুল ইসলাম পত্রিকার হকারি করেন। তাঁর ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র খাদেমুল ইসলাম সময় পেলেই তাঁকে সঙ্গ দেয়। খাদেমুল জানায়, করোনার সময়ে পত্রিকা বিক্রি হচ্ছে কম। তাদের সংসার চালাতেও বেগ পেতে হচ্ছে। বসুন্ধরার খাদ্যসামগ্রী পেয়ে সে বলে, ‘আমি খুব খুশি হয়েছি, বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ। তাদের মঙ্গল হোক। এই খাবার দিয়ে আমরা অনেক দিন খেতে পারব।’

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Powered by